Bangladesh Hindu Woman: রাতে বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে হিন্দু মহিলাকে ধর্ষণ। ২৬ জুনের ঘটনার পর থেকেই শঙ্কায় কুমিল্লার মুরাদনগরের সংখ্যালঘুরা। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফজর আলিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি আরও চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, এই ৪ জন ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও ও ছবি ছড়াচ্ছিল। বিবাহিত মহিলার ধর্ষণের ঘটনায় আরও একবার প্রকট বাংলাদেশে নারী নিরাপত্তার দুরাবস্থা।
পুলিশ সূত্রে খবর, বছর ৩৮-এর ফজর আলি স্থানীয়ভাবে বিএনপি-র এক নেতা। আবার সেদেশের সমাজকর্মীদের একাংশের মতে, একসময় সে আওয়ামী লিগে ছিল। মোট কথা, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী।
ঘটনার রাতে, দশটা নাগাদ মহিলার বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে সে। নির্যাতিতার স্বামী কর্মসূত্রে বিদেশে থাকেন। তিনি হরিসেবা উৎসব উপলক্ষে সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়ি এসেছিলেন। দরজা বন্ধ করে কোনওক্রমে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে পাশবিক ক্ষিপ্রতায় দরজা ভেঙে ফজর আলি বাড়িতে ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ।
ঘটনার পরই স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযুক্ত ফজরকে ধরে মারধর করেন। তবে সে কোনওভাবে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ প্রযুক্তির সাহায্যে তার লোকেশন ট্র্যাক করে ৩০ জুন ঢাকার সায়দাবাদ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয়দের হাতে মার খেয়ে আহত ফজর বর্তমানে কুমিল্লা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে ২৭ জুন থানায় মামলা দায়ের হয়। এরপরই পুলিশের তদন্ত শুরু হয়। গ্রেফতার করা হয়েছে আরও চার জনকে। অভিযোগ, ধর্ষণের ভিডিও ও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত তারা। বর্তমানে পুলিশ সুপারের দফতরে রাখা হয়েছে তাদের। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'নারী নির্যাতনকারীদের কোনও রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না। আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।'
মুরাদনগরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন বেড়েছে। অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন তাঁরা।
নারী নিরাপত্তা ও বাংলাদেশ
রাষ্ট্র সংঘের নারী অধিকার সংক্রান্ত সংস্থা UN Women-এর ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্র, স্কুল, রাস্তাঘাট এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্ট-সহ বহু জায়গায় মেয়েরা নিয়মিত যৌন হেনস্থার শিকার হন। বাংলাদেশ উইমেন্স ল'ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিপোর্ট বলছে, প্রতিবাদ জানানো সত্ত্বেও ৮৪ শতাংশ নারীকে নানাভাবে হেনস্থা হতে হয়। এমনকী বাড়ির ভিতরেও অনেকে যৌন নির্যাতনের শিকার হন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব ঘটনার বিচার হয়নি। বহু নির্যাতিতা লোকলজ্জা বা নিরাপত্তার ভয়েই মুখ খোলেন না।
ActionAid Bangladesh-এর একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সি প্রায় ৯০ শতাংশ কন্যাশিশু বা কিশোরী জীবনের কোনও না কোনও পর্যায়ে প্রকাশ্যে অশ্লীল মন্তব্য, অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ বা যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছেন। বিশেষত রাস্তাঘাট, বাজার বা গণপরিবহণে তারা নিয়মিত এই সমস্যার সম্মুখীন হন। কোভিড-১৯-এর সময় এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। অনলাইনে মহিলাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় ট্রোলিং, বডি শেমিং, যৌন হেনস্থার ঘটনা। নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, এই ঘটনাগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিচার হয় না। আর তার ফলেই ক্রমাগত সেদেশের মহিলাদের আত্মবিশ্বাস খর্ব হচ্ছে। তাঁদের শিক্ষাজীবন ও পেশাগত উন্নতির পথেও এগুলি বাধা সৃষ্টি করে।