বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর সঙ্কটের মেঘ ঘনিয়ে আসছে এবং সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিছুদিন আগে ইউনূস ভারতের শিলিগুড়ি করিডরের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যা 'চিকেনস নেক' নামেও পরিচিত। যদিও তিনি তাঁর চিন সফরে গর্ব করার জন্য এটি করেছিলেন, কিন্তু এটি বাংলাদেশের নিজস্ব দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। কারণ বাংলাদেশের একটি নয়, দুটি চিকেনস নেক রয়েছে।
ইউনূস তাঁর বক্তব্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন
চিন সফরে যাওয়া মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে 'স্থলবেষ্টিত' বলে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে এই অঞ্চলের সঙ্গে সমুদ্রের কোনও যোগ নেই এবং বাংলাদেশ এই সমগ্র অঞ্চলে সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক। তাঁর বক্তব্যের পর চিকেনস নেক শব্দটি আবারও আলোড়ন তুলেছে এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ইউনূসকে সতর্ক করে বলেছেন যে বাংলাদেশের দুটি চিকেনস নেক রয়েছে, যা আরও সংবেদনশীল এবং দুর্বলও।
ভারতের চিকেনস নেক কোনওভাবেই দেশের দুর্বলতা নয় বরং এর শক্তি এবং এই বিবৃতি কয়েকদিন আগে সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, শিলিগুড়ি করিডর ভারতের শক্তিশালী সংযোগস্থল। কারণ এখানে ভারতীয় সেনাবাহিনী তিন দিকে মোতায়েন রয়েছে। এই বক্তব্যের বিপরীতে বাংলাদেশের উভয় চিকেসন নেক খুবই দুর্বল, যেমন হিমন্ত উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের এই দুটি চিকেনস নেক কোথায়?
উত্তর বাংলাদেশ করিডর
উত্তর বাংলাদেশ করিডর হল পশ্চিমবঙ্গ এবং মেঘালয়ের মধ্যে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি স্থলভাগ। এই স্থলভাগের সবচেয়ে সরু বিন্দুটি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা এবং মেঘালয়ের দক্ষিণ পশ্চিম গারো পাহাড় জেলাকে যুক্ত করে। রংপুর এই স্ট্রিপের উত্তরে অবস্থিত, যা বাংলাদেশের একটি প্রথম স্তরের প্রশাসনিক বিভাগ। উত্তর বাংলাদেশ করিডরটি রংপুরকে দেশের বাকি অংশ থেকে পৃথক করে, যা এটিকে একটি দুর্বল দমবন্ধ স্থানে পরিণত করে।
পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী রংপুর ১৬,০০০ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ১.৭৬ কোটি। এখানকার জনসংখ্যার ৮৬.৫ শতাংশ মুসলিম, ১৩ শতাংশ হিন্দু এবং বাকিরা খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ।
চট্টগ্রাম করিডর
হিমন্তের উল্লেখিত দ্বিতীয় চিকেনস নেক হল চট্টগ্রাম করিডর। এটি দক্ষিণ ত্রিপুরাকে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে যুক্ত করে এমন একটি ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থলপথ। এই করিডর বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেছে। উত্তর-পশ্চিম অংশে ৬টি জেলা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালি এবং ফেণী। একইভাবে, দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রংমালি, বান্দরবান এবং কক্সবাজারের মতো জেলা রয়েছে। এই অঞ্চলটি আরও সংবেদনশীল। কারণ করিডর থেকে পৃথক এবং কেবল সমুদ্রপথে পৌঁছনো যায়।
অসমের মখ্যমন্ত্রী হিমন্তকে সতর্ক করে বলেছিলেন যে শিলিগুড়ি করিডরের মতো বাংলাদেশেও দুটি সরু করিডর রয়েছে এবং আমি কেবল ভৌগোলিক তথ্য উপস্থাপন করছি, যা কিছু লোক ভুলে যায়। ভারতের শিলিগুড়ি করিডর যেমন অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বাংলাদেশের এই অঞ্চলগুলিও অত্যন্ত সংবেদনশীল। এর আগে তিনি একটি বিবৃতিতে বলেছিলেন যে আমাদের একটি চিকেনস নেক আছে, কিন্তু বাংলাদেশের দুটি চিকেনস নেক আছে। যদি বাংলাদেশ আমাদের চিকেনস নেকে আক্রমণ করে, তাহলে আমরা বাংলাদেশের উভয় চিকেনস নেকে আক্রমণ করব। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সংযোগকারী মেঘালয়ের চিকেনস নেক ভারতের চিকেনস নেকের চেয়েও সরু এবং ঢিল ছোড়া দূরত্বে অবস্থিত।
চিকেনস নেক বলতে বোঝায় একটি সরু ভূমি, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ হিসেবে কাজ করে এবং এটি একটি সম্ভাব্য চোক পয়েন্টও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের শিলিগুড়ি করিডর হল ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি সরু স্থল সেতু, যা ভারতকে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির সঙ্গে যুক্ত করে। এই কারণে, এই অঞ্চলটিকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে নজরদারিতে থাকা করিডরগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।