শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খান মুম্বাইয়ের ক্রুজে ড্রাগস পার্টিতে মাদক নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারপর থেকেই লাগাতার খবরের শিরোনামে শাহরুখ এবং তার পরিবার।
যা শাহরুখের ব্র্যান্ড ভ্যালুতে বড় রকমের ধাক্কা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির তরফে। ইতিমধ্যেই একাধিক শুটিং বাতিল করেছেন শাহরুখ। বিজ্ঞাপনের চুক্তি ছেড়ে দিয়েছেন বলে খবর।
ফলে একের পর এক পরিকল্পনা বাতিল করলে তার ব্র্যান্ড ভ্যালু যে আগের মতো ক্ষুণ্ণ থাকবে না, তা স্বাভাবিক। এমনিতেই এখন শাহরুখ খান সিনেমা করার সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। বাছাই করা সিনেমা করেন। মনোযোগ দিয়েছেন ব্যবসায়। তার একাধিক ব্যবসায়ের মূল পুঁজি শাহরুখ খানের নিজস্ব নাম এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু।
ফলে ব্র্যান্ড ভ্যালু পড়তে থাকলে ব্যবসাতেও ব্যাপক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে এবং তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ পড়েছেন উদ্বেগে। ইতিমধ্যেই শাহরুখ খানের একটি বিজ্ঞাপন বাইজুস (BYJU'S) বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অ্যাডভান্স বুকিং এর পরও শাহরুখের সঙ্গে তারা কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
BYJU'S এর বিজ্ঞাপনের শাহরুখ খানের বাচ্চাদের প্রতি পরামর্শ ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল গত কয়েক বছরে। বিশেষ করে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে শাহরুখের ব্র্যান্ড ভ্যালু উপর ভর করেই বাইজুস ব্যাপক ব্যবসা শুরু করেছিল। অনলাইনে পড়াশোনার ক্ষেত্রে সহায়ক।
কিন্তু শাহরুখকে নিজের ছেলে আরিয়ান মাদক মামলায় জড়িয়ে পড়ে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে BYJU'Sকে নিয়ে নেট মাধ্যমে ব্যাপক ট্রোলিং শুরু হয়। যার পরই টিভি এবং সমস্ত প্ল্যাটফর্ম থেকে তাদের শাহরুখকে নিয়ে করা বিজ্ঞাপন আপাতত বন্ধ রাখে।
টুইটারে ট্রেন্ডিং ক্যাম্পেইন শুরু হয় #BOYCOTT_SRK_RELATED_BRAND_USERS. শাহরুখ খানের সাথে কাজ করা সমস্ত ব্র্যান্ড বয়কটের দাবি জানানো হয়। লোকেরা এ ব্যাপারেও বলতে শুরু করেন যে, যে অন্য বাচ্চাদের ভালো হওয়ার পরামর্শ দেয়, তার নিজের বাড়িতেই বাচ্চাকে ভাল পরামর্শ দিতে পারেনি। এমন ব্র্যান্ড বাতিল করা উচিত।
শাহরুখ খান গত দুই দশকে পৃথিবীর সমস্ত বড় বড় ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করে ফেলেছেন। তার ব্র্যান্ড ভ্যালুকে ব্যবহার করে এদেশে পেপসি, হুন্ডাই, এলজি, বিগ বাস্কেট, ফ্রুটি, ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম, দুবাই ট্যুরিজম, রিলায়েন্স জিও এবং বাইজুস এর মত বড় বড় কোম্পানি বাজার ধরতে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল।
এর মধ্যে বাইজুস শাহরুখ খানের সবচেয়ে বড় স্পনসরশিপ ডিল ছিল। সূত্রের খবর অনুযায়ী শাহরুখ খানের সঙ্গে এই ডিল-এ প্রতি বছর তিন থেকে চার কোটি টাকার চুক্তি ছিল। এদের সঙ্গে ২০১৭ থেকে শাহরুখ এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর।
যদিও বাইজুস বিজ্ঞাপন তুলে নিলেও শাহরুখের সঙ্গে শুট করা এলজি কোম্পানির বিজ্ঞাপন এখনও টিভিতে চলছে। এক টপ অফিশিয়াল জানিয়েছেন, এ সমস্ত জিনিস বহুদিন ধরে প্ল্যান করা থাকে এবং আচমকা সে সমস্ত বন্ধ করা সম্ভব নয়। ভারতে এখন উৎসবের মরশুমে চলছে। এই সময় বন্ধ করে নতুন বিজ্ঞাপন কোম্পানির ব্যবসায় প্রভাব ফেলতে পারে।
এর মধ্যে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, শাহরুখ খানের নিজস্ব ব্র্যান্ড ভ্যালু কি পরিস্থিতি দাঁড়াবে? অ্যালকেমিস্ট মারকেটিং সলিউশনস এর এমডি মনীশ পড়োয়াল জানিয়েছেন, ইন্টারনেটের কি ক্যাম্পেইন চলছে, তার ওপর মূল ব্র্যান্ডের কোনও যায় আসবে না। কারণ শাহরুখ খান এত বছরে যে সমস্ত পরিশ্রম করে এই জায়গায় এসেছেন, তা শুধুমাত্র তিনি নিজেই নষ্ট করতে পারেন। অন্য কারও বা তার পরিবারের কারও জন্য তাতে কোন অসুবিধা হবে না।
আবার একটি ব্র্যান্ড প্রচারক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি আপাতত একটু স্পর্শকাতর রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদি একাধিক বিজ্ঞাপন শুট করা থাকে, তাহলে শাহরুখ খানকে নিয়ে করা বিজ্ঞাপনগুলি আপাতত বন্ধ রাখা যেতে পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, আবার সেগুলি চালানো যায়।
এই প্রসঙ্গে দুটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের তরফে। যেমন দীপিকা পাড়ুকোন মাদক মামলায় ফেঁসে কিছুদিন বিজ্ঞাপনী বাজারে স্থিমিত থাকলেও ওই ব্র্যান্ডের মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন।
সম্প্রতি সবার মনে আছে চিনের সঙ্গে ভারতের প্যাংগং লেক এর আধিপত্য নিয়ে লড়াইয়ের পর চিনা দ্রব্য বয়কটের দাবি উঠেছিল। বেশ কিছুদিন ট্রেন্ডিং থাকার পর যেমন স্তিমিত হয়ে যায়। তেমনই ভারতের বাজারে চিনা দ্রব্য রমরমিয়ে চলছে। ফলে এই ধরণের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী কোনও রকম ছাপ ফেলতে পারবে না বলে তাঁরা মনে করছেন।
ব্যাঙ ইন দ্য মিডল নামে একটি এজেন্সির ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রতাপ সুতান পরিষ্কার জানিয়েছেন, সেলিব্রিটিদের সঙ্গে বিভিন্ন রকম বিতর্ক জড়িয়ে থাকে। গোটা জীবনই তাঁদের সেটা বহন করতে হয়। তাতে তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু কমে না। বরং বিতর্কের শীর্ষে থেকে তাদের প্রচার পজিটিভ নেগেটিভ যাই হোক বাড়তে থাকে।