scorecardresearch
 

প্রচারে প্রাক্তনীদের মিছিল! বলিউডের 'পুরানো চাল' ভোটে বাড়ছে?

তারকাদের নাম শুনলেই বুঝবেন কেন এঁদের পুরানো বা প্রাক্তন বলা হচ্ছে। প্রচারে এসেছেন মহিমা চৌধুরী, আমিশা প্যাটেল, মন্দাকিনীর মতো প্রাক্তন নায়িকারা। আমিশা বাকি দুজনের তুলনায় অনেকটাই নতুন। কিন্তু গত ৫ বছরে তিনি লাইমলাইট থেকে প্রায় হাজার কিলোমিটার দূরে রয়েছেন।

Advertisement
বাংলার ভোট প্রচারে অভিনেত্রী মন্দাকিনী। ছবি: পিটিআই বাংলার ভোট প্রচারে অভিনেত্রী মন্দাকিনী। ছবি: পিটিআই
হাইলাইটস
  • দলে যোগ দেওয়া তারকা এবং স্থানীয় তারকা ছেড়ে বলিউডের অস্তাচলে চলে যাওয়া তারকাদের ভোট প্রচারে এনে চমক দেওয়ার চেষ্টা করছেন দু' দলের প্রার্থীরাই।
  • প্রচারে তারকা এনে চমকে দেওয়ার বিষয়টা ভারতের রাজনীতিতে বেশ পুরনো। বিশেষত দক্ষিণী এবং গো-বলয়ের নির্বাচনের দিকে তাকালে বিষয়টা স্পষ্ট হবে।

টলিউড প্রায় আধাআধি বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। যুযুধান দুই পক্ষেই তারকার মিছিল দেখে জনসাধারণের চক্ষু চড়কগাছ। কাকে ছেড়ে কাকে দেখবেন! আর শুধু সিনেমা নয়, বাংলা ধারাবাহিকের বহু জনপ্রিয় মুখ ভিড় করেছেন বিজেপি তৃণমূল দুই শিবিরেই। কেউ টিকিট পেয়েছেন, কেউ পাননি। সে তো নসিবের বিষয়। কিন্তু এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে যেটা অবাক করছে তা হল দলে যোগ দেওয়া তারকা এবং স্থানীয় তারকা ছেড়ে বলিউডের অস্তাচলে চলে যাওয়া তারকাদের ভোট প্রচারে এনে চমক দেওয়ার চেষ্টা করছেন দু' দলের প্রার্থীরাই।

তারকাদের নাম শুনলেই বুঝবেন কেন এঁদের পুরানো বা প্রাক্তন বলা হচ্ছে। প্রচারে এসেছেন মহিমা চৌধুরী, আমিশা প্যাটেল, মন্দাকিনীর মতো প্রাক্তন নায়িকারা। আমিশা বাকি দুজনের তুলনায় অনেকটাই নতুন। কিন্তু গত ৫ বছরে তিনি লাইমলাইট থেকে প্রায় হাজার কিলোমিটার দূরে রয়েছেন। দুই দলের যে সব তারকা যোগ দিয়েছেন তাঁরা এখানে বিবেচ্য নন। কারণ তাঁরা দলের এবং নিজের তাগিদে প্রচারে এসে মুখ দেখাচ্ছেন। 'দলে থাকলে তার জন্য কিছু তো করতে হবে' গোছের বিষয়! তাই মিঠুন চক্রবর্তী, জয়া বচ্চন বা রবি কিষেণের প্রচারে আসাটা খুবই স্বাভাবিক এবং রাজনৈতিক কারণ বিশিষ্ট।

প্রচারে তারকা এনে চমকে দেওয়ার বিষয়টা ভারতের রাজনীতিতে বেশ পুরনো। বিশেষত দক্ষিণী এবং গো-বলয়ের নির্বাচনের দিকে তাকালে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। কিন্তু এ রাজ্যে সেই অর্থে স্রেফ প্রতিপত্তি দেখানোর জন্য তারকা গোছের কাউকে ধরে এনে র‌্যালি করার রীতি নতুন।

এক সময় রাজ্যের শাসক দলের সভা মানেই তারকার মেলা, নামী শিল্পীদের গান-বাজনা দেখা যেত। কিন্তু তাতে 'বহিরাগত' ছোঁয়া ছিল না। তা হলে এই ভোটে এমন করার কারণটা কী? আর এতে লাভের লাভ কি কিছু হচ্ছে? যেমন ধরুন মহিমা চৌধুরী। মদন মিত্রের মহীমায় তিনি তৃণমূলের প্রচারে মুখ দেখিয়েছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে স্বমহিমায় বিজেপি প্রার্থী সব্যসাচী দত্তের প্রচারে হাসিমুখে হাত নেড়েছেন একদা 'পরদেশ' গার্ল। ২০০০ সালে হৃত্বিক রোশনের সঙ্গে দুরন্ত ডেবিউ করেছিলেন আমিশা প্যাটেল। সেই ছবির গান গেয়ে তৃণমূল প্রার্থী মলয় ঘটকের হয়ে প্রচার করে গেলেন আসানসোলে। একই ভাবে ১৯৮০ এবং ৯০-এর দশকে হিন্দি ছবিতে ঝড় তোলা নায়িকা মন্দাকিনীকেও দেখা গেল জনতা দল ইউনাইটেড প্রার্থী সুকান্ত ঘোষের প্রচারে।

Advertisement

বলিউডের পুরানো চাল কি ভোটে বাড়বে? রাজনৈতিক মহলের একাংশ অবশ্য এ নিয়ে বিশেষ চিন্তিত নয়। তাদের কথায়, টাকা দিয়ে ভাড়া করে এ সব তারকা এনে মানুষকে নিজের প্রতিপত্তি দেখানোর কৌশল। মানুষ ভোট দেবেন কাজের ভিত্তিতে, তারকার মুখ দেখে নন। আর এঁরা যে 'খেপ খেলছেন' তা তো পরিষ্কার হয়েছে মহীমা চৌধুরীর প্রচারে আসা দেখেই। একই তারকা দুই দলের রোড শো-তে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কী ভাবে মুখ দেখান না হলে? টাকা ছাড়া সম্ভব নয়।

আর এক মহলের মত, মানুষকে আকর্ষণ করার রাস্তা এটা তা নিয়ে সন্দেহ নেই। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দীর্ঘ দিনেক নেতার কথায়, 'প্রথমত বর্তমান জনপ্রিয় তারকাদের আনতে গেলে বাজেট বিরাট আকার নেবে। তা অনেক প্রার্থী বা দলের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, এঁরা একটু পুরনো হওয়ায় এক সঙ্গে দুই বা তিন প্রজন্মের মানুষকে আকৃষ্ট করা সম্ভব হয়।' মন্দাকিনীর কথাই ধরা যাক। যাঁরা আশির দশকে যুবক এবং যাঁরা নব্বইয়ের দশকে বেড়ে উঠেছেন, এই নায়িকা সম্পর্কে অনেকের আগ্রহ এখনও বর্তমান। কারণ অবশ্যই রাম তেরি গঙ্গা ম্যায়লি। শুধু হিন্দি নয়, গোটা তিনেক বাংলা ছবিতেও কাজ করেছেন মন্দাকিনী। তার মধ্যে তাপস পালের বিপরীতে অন্তরের ভালোবাসা ছবিটি তখন হিটও করেছিল। সব মিলিয়ে বাজেটে জনতাকে আকৃষ্ট করার সহজ পন্থা হিসাবেই এই নীতি আমদানি হয়েছে বঙ্গ ভোট প্রচারে।

এই নব্য প্রচারের ধারা ভোট বাক্সে কতটা প্রভাব ফেলে তা জানতে অপেক্ষা আর কিছু দিনের।

 

Advertisement