সঞ্জয় লীলা ভান্সালি মানেই তাঁর ছবির গ্র্যান্ড সেট এবং অভিনেতাদের সুন্দর এবং ভারী- রাজকীয় পোশাকের কথা মাথায় আসে। ছবিতে জাঁকজমক দেখানোর ক্ষেত্রে কোনও আপোস করেন না পরিচালক। এক কথায় বলা যায়, তিনি হলেন বি-টাউনের পরিচালকদের মধ্যে 'মিস্টার পারফেকশনিস্ট। ভান্সালির ৫ টি ছবির সেট ছিল সবচেয়ে চর্চায় বড় বাজেটের। এগুলি যেন কোনও স্বপ্নের প্রাসাদের চেয়ে কম নয়।
পদ্মাবত
সঞ্জয় লীলা ভান্সালির এই ছবিটি ছিল বিতর্কিত। তবে এটি একটি দারুণ ভিজ্যুয়াল ট্রিট। বিশাল এবং বিশদ সেট থেকে শুরু করে পোশাক, 'পদ্মাবত' সৃজনশীলতায় পূর্ণ ছিল। জানা গেছে, রাজস্থানের চিত্তৌরগড় দুর্গে ছবির শ্যুটিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিতর্কের জেরে সেটটি কিছু লোক ধ্বংস করে দেয়। এরপরে, ভান্সালি মুম্বইতে একই রকমের দুর্গ পুনরায় তৈরি করেন। রাজস্থানী মিনিয়েচার পেইন্টিং থেকে তিনি তাঁর নকশার অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন। যার কারণে ছবিটির বাজেট ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। তবে ভান্সালির কঠোর পরিশ্রম ফলপ্রসূ হয় এবং ছবিটির প্রায় ৩০০ কোটি টাকা লক্ষ্মীলাভ হয়েছে।
গোলিয়োঁ কী রাসলীলা রাম-লীলা
দীপিকা পাড়ুকোন এবং রণবীর সিংকে নিয়ে 'গোলিয়োঁ কী রাসলীলা রাম-লীলা' ছবিটি তৈরি করেন সঞ্জয় লীলা ভান্সালি। এই ছবির সেটেই দু'জনে একে অপরের প্রেমে পড়েন। এই ছবিটি ছিল দুই প্রেমিকের গল্প, যাদের পরিবার একে অপরের শত্রু। গুজরাটের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবির সেটে সুন্দর প্রাসাদ, রঙিন রাস্তা এবং মানুষ দেখানো হয়েছিল। তবে খুব কম মানুষই জানেন যে, ছবিটির শ্যুটিং হয়েছে আসলে মুম্বইতে হয়। 'নাগাদা সাং ঢোল' গানটিতে দীপিকা ৩০ কেজির লেহেঙ্গা পরেচ নেচেছেন। মুম্বইয়ের একটি স্টুডিওতে নির্মিত ছবির সবচেয়ে ব্যয়বহুল সেট ছিল সেটি। শোনা যায়, টিমের সঙ্গে এই সেটটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল ২-৩ মাস। শুধু তাই নয়, রণবীর সিংয়ের জন্য সেটে একটি জিমও তৈরি করা হয়েছিল। যাতে তিনি শ্যুটিং লোকেশন থেকে জিমে যাওয়ার সময় বাঁচাতে পারেন।
বাজিরাও মাস্তানি
ভান্সালি তাঁর ছবির ভিজ্যুয়াল আবেদনের জন্য পরিচিত। তিনি দৃশ্যে এত বিস্তারিত রাখেন যে, সকলে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। ছবিতে দেখানো আয়না মহল তার প্রমাণ। এই প্রাসাদটি অনেক আলোচিত ছিল এবং এটি তৈরি করতে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। 'মুঘল-ই-আজম' দ্বারা অনুপ্রাণিত, এই সেটটি জয়পুর থেকে আনা ২০ হাজার ডিজাইনার আয়না এবং ১৩টি ঝাড়বাতি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। ২৩ টি বিলাসবহুল সেট তৈরি করতে ৮ থেকে ৯ বছর সময় লেগেছে। ৪৫,০০০ কাঠের তক্তা এবং হাতে খোদাই করা কাঠ দিয়ে নির্মিত 'বাজিরাও মাস্তানি'-র বৃহত্তম সেট শানিওয়ার ওয়াদা। প্রায় ১৩ জন সহকারী সেট ডিজাইনার এবং ৫৫০ কর্মী ৪৫ দিনে এই সেটটি প্রস্তুত করেছেন।
দেবদাস
২০০২ সালে সঞ্জয় লীলা ভান্সালির তৈরি 'দেবদাস' ভারতীয় সিনেমার অন্যতম সেরা ছবিগুলির মধ্যে একটি। শুধু পারফরম্যান্সের দিক থেকে নয়, সেটের ক্ষেত্রেও এটি সেরা। পারোর প্রাসাদ থেকে শুরু করে চন্দ্রমুখীর পতিতালয়, সবকিছুই নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয়েছিল। শোনা যায় যে, চন্দ্রমুখীর চেম্বারটি একটি কৃত্রিম নদীর কাছে তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে ১২ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। পারোর ঘর সাজাতে ১.২২ লক্ষ রঙিন কাঁচ ব্যবহার করা হয়েছে। পারোর পুরো প্রাসাদের জন্য খরচ হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। এমনকী ছবির বাজেটের ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে শুধুমাত্র সেটেই।
সাওয়ারিয়া
'সাওয়ারিয়া' ছবির মাধ্যমে ডেবিউ করেন রণবীর কাপুর ও সোনম কাপুর। এই ছবিটি বক্স অফিসে খুব বেশি ব্যবসা করতে পারেনি। তবে এটি বেশ চর্চায় ছিল। এর কারণ হল ছবির দুর্দান্ত সেট। বিখ্যাত সেট ডিজাইনার ওমং কুমার বলেছিলেন যে, এটিই সেরা সেট যা তিনি ডিজাইন করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এই ছবির বেশিরভাগ সেট পেইন্টিং দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। বিশেষ করে কাশ্মীরি এবং রাজস্থানী চিত্রগুলি। ভান্সালি বিখ্যাত শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগের কাজ থেকেও অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন। ছবির জন্য নৌকা, মূর্তি, তুষার, কুয়াশা, সাদা পায়রা এবং ময়ূর তৈরি করতে অনেক সময় ব্যয় হয়েছিল। ছবির প্রতিটি সেট আনুমানিক ৪০ কোটি টাকায় তৈরি করা হয়েছিল এবং এটি তৈরি করতে ২৫০ জনের ২৫ দিন সময় লেগেছিল।