শুক্রবার দুপুরে শোকের ছায়া নেমে আসে বিনোদন জগতে। মডেল- অভিনেত্রী তথা ইন্টারনেট সেনশেসন পুনম পান্ডের প্রয়াণ খবরে রীতিমতো স্তব্ধ হয়ে পড়েন সকলে। সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়াই করছিলেন পুনম। কিন্তু এদিন সকালে থেমে যায় সেই লড়াই। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩২ বছর।
হঠাৎ পুনম পান্ডের মৃত্যুর খবর আসার পর থেকে অনেকেই তা বিশ্বাস করতে পারছেন না। গ্ল্যামার ক্যুইন পুনম, যে ২ দিন আগে ভিডিও পোস্ট করেছেন, পার্টি করেছেন, হঠাৎ তাঁর মৃত্যুর খবর এল। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যমে পুনম সংক্রান্ত নানা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পুনমের পরিবারের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সমালোচনা ও পুনম যেন সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছিল। বরাবরই গোপন উন্মাদনা ছিল পুনম পান্ডেকে নিয়ে। সাহসী পোশাক, অঙ্গভঙ্গি থেকে নানা রকম ক্রিয়াকলাপের জন্য বারবার শিরোনামে আসেন তিনি। এমনকী ২০১২ সালে, কলকাতা নাইট রাইডার্স আইপিএল ৫ জেতার পরে তিনি নগ্ন হয়ে ছবি শেয়ার করে বিরাট চর্চায় আসেন। পুনমের জীবন এতটাই চর্চিত যে, মৃত্যুর পরেও বিতর্ক তার পিছু ছাড়ছে না।
পুনমের মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক
৩২ বছর বয়সী পুনম পান্ডে ইন্ডাস্ট্রির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। অভিনয় ও মডেলিংয়ের পাশাপাশি নানা বিতর্কের জন্য তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। কোনও না কোনও কারণে তিনি প্রায়শই শিরোনামে থাকতেন। এখন তাঁর মৃত্যু খবরও বিতর্কে পরিণত হয়েছে। তাঁর প্রয়াণ খবরে হতবাক অনেকেই। পুনম কি সত্যিই আর এই পৃথিবীতে নেই? এই নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। অনেকেই ভাবছেন তিনি বরাবরের মতো, মজা করছেন। কিংবা এটা তাঁর কোনও পাবলিশিটি স্টান্ট। এই মৃত্যু ঘটনায় এমন অনেক প্রশ্ন উঠেছে, যার উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি।
কী কী প্রশ্ন উঠছে এই মৃত্যু ঘটনা নিয়ে?
প্রথম প্রশ্ন হল, চার দিন আগে গোয়ায় ইভেন্টে পৌঁছেছিলেন পুনম। সেই ঘটনার ভিডিও তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারও করেছেন। অনুষ্ঠানে অভিনেত্রীকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না ,যে তিনি জরায়ুর ক্যান্সারের মতো বড় রোগে ভুগছেন। তিনি যদি ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে ছিলেন এবং চিকিৎসাধীন ছিলেন, তাহলে চার দিন আগে তিনি কীভাবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেন?
দ্বিতীয় প্রশ্ন, ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। যার দু'দিন আগে পুনমের মৃত্যুর খবর সামনে আসছে। তাহলে কি বিশ্ব ক্যান্সার দিবসের জন্য প্রচারের এটা একটা অংশ মাত্র?
তৃতীয় প্রশ্ন, ১ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট পেশ করেন। বাজেটে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার ঘোষণা করেন তিনি। বাজেটের পরই পুনমের মৃত্যুর খবর আসে। এটা কি নিছকই কাকতালীয় নাকি পাবলিসিটি স্টান্ট?
চতুর্থ প্রশ্ন হল, অভিনেত্রী যদি সত্যিই জরায়ু মুখের ক্যান্সারে ভুগছিলেন, তবে কেন তা কেউ জানত না। কেন কোনও বন্ধু বা পরিবারের সদস্য তাঁর অসুস্থতার কথা কোথাও কখনও উল্লেখ করেননি? পুনম পান্ একজন একজন বড় তারকা। তিনি ক্যান্সারে মারা গেলেও কেন তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও বিবৃতি আসেনি? কেন তাঁর মৃত্যুর খবর শকলকে দেওয়া হয়নি?
পঞ্চম প্রশ্ন, অভিনেত্রীর চিকিৎসা কোথায় চলছিল? কোন হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন? এবিষয়ে কোথাও কোনও তথ্য নেই। সর্বোপরি, পুনমের টিম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এর কারণ কী?
ষষ্ঠ প্রশ্ন, পুনম পান্ডের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, তিনি অন্যান্য অনেক অভিনেত্রীর সঙ্গে বসে রয়েছেন। একটি কালো রঙা ড্রেসে পার্টি করতে দেখা যায়। কেউ যদি ক্যানসারের মতো রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে কীভাবে একজনকে এত ফিট এবং শান্ত দেখাবে? অল্প বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার যন্ত্রণা কেন তাঁর মুখে ফুটে ওঠেনি?
প্রসঙ্গত, কানপুরে জন্ম হয় পুনম পান্ডের। গ্ল্যামার দুনিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন মডেল হয়ে। এরপর ২০১৩ সালে 'নশা' ছবির মাধ্যমে বলিউডে ডেবিউ করেন তিনি। পর্ণোগ্রাফির জনপ্রিয় তারকা ছিলেন পুনম। 'জিএসটি', 'দ্য জার্নি অফ কর্মা'-র মতো বলিউড ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়াও 'লভ ইজ পয়জন', 'মালিনী অ্যান্ড কোং'-র মতো দক্ষিণী ছবিতেও দেখা গেছে তাঁকে। যদিও মূল ধারার ছবিতে সেভাবে দর্শকদের নজর কাড়তে ব্যর্থ হন পুনম। পরবর্তী সময়ে 'ফিয়ার ফ্যাক্টর' ও 'লকআপ'-র মতো রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করেন তিনি।