Mukti Web Series: একতাই আনবে 'মুক্তি'-র পথ! স্বাধীনতার গল্প নিয়ে আসছেন ঋত্বিক, দিতিপ্রিয়া, অর্জুনরা

কিছুদিন আগেই 'গোরা' হয়ে, ওয়েব দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী। ভুলো মনের এই নতুন 'ডিফেক্টিভ' গোয়েন্দা চরিত্র সকলের মন জয় করতে সক্ষম। আবারও ওয়েব সিরিজে ঋত্বিক। তবে এবার তিনি মেদিনীপুর জেলের, কারাদক্ষ রামকিঙ্কর ঘোষের চরিত্রে। রোহন ঘোষের পরিচালনায় এবং ফ্যাটফিশের প্রযোজনায় প্রজাতন্ত্র দিবসে আসছে, জি ফাইফ-এর নতুন ওয়েব সিরিজ 'মুক্তি'।

'গোলন্দাজ'-এর রেশ এখনও দর্শকদের মনে রয়েছে। 'মুক্তি'-র প্রথম ঝলক সকলের সামনে আসতেই বোঝা গেল এই সিরিজের মূল বিষয়বস্তু ফুটবল কেন্দ্রিক এবং ইংরেজদের সঙ্গে সংঘাতের আবহে তা খানিকটা স্বাধীনতার যুদ্ধেও পরিণত হয়। বা বলা যায় শাসকের বিরুদ্ধে শোষিতের লড়াই।
 

'মুক্তি'-তে ঋত্বিক ছাড়াও রয়েছেন একঝাঁক জনপ্রিয় অভিনেতা। অর্জুন চক্রবর্তী, দিতিপ্রিয়া রায়, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, সুদীপ সরকার, চিত্রাঙ্গদার মতো অভিনেতারা দাপিয়ে কাজ করেছেন, যা বোঝা যাচ্ছে ট্রেলার দেখেই। 'অভিযাত্রিক' ছবিতে দিতিপ্রিয়া ছিলেন অর্জুনের স্ত্রী। এখানে লুক অনেকটা এক হলেও, তিনি এবার ঋত্বিকের পত্নী।

১৯৩১ সালে ব্রিটিশ ভারতের পটভূমিতে তৈরি দেশাত্মবোধক স্পোর্টস ফিকশন 'মুক্তি'-র সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। সিরিজে দিবাকর ব্যানার্জির চরিত্রে অর্জুন চক্রবর্তী, রহমত আলীর চরিত্রে সুদীপ সরকার, মিনু দিতিপ্রিয়া রায়, প্রভা চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী, গুলশনা চান্দ্রেয়ী ঘোষ, আলফ্রেড পেটি জ্যাচেরি কফিন এবং মিস্টার বেল চরিত্রে দেখা যাবে মার্ক বেনিংটনকে।  

এই ওয়েব সিরিজটি রামকিঙ্কর, দিবাকর, রেহমত, মিনু, প্রভা এবং বিরোধী আলফ্রেড পেটির বর্বরতার ব্যক্তিগত লড়াই এবং সম্মিলিত বিপ্লবের গল্প বলবে। বন্দি এবং তাদের সহযোগীরা আদর্শগতভাবে ভিন্ন হলেও তাদের লক্ষ্য আসলে এক। 
 

প্রহরী পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, নতুন জেল সুপার আলফ্রেড পেটির অধীনে মেদিনীপুর জেলের ভয়াবহতা বাড়তে শুরু করে। নব নিযুক্ত কারাদক্ষ রামকিঙ্করের কয়েক দিন সময় লাগে, জেলের চার দেয়ালের মধ্যে ঘটে যাওয়া নৃশংসতা বুঝতে। মনকে শক্ত করে, কোনও কিছুতে হস্তক্ষেপ না করেই ব্রিটিশের একজন ভৃত্যের মতো জীবনযাপন শুরু করতে হয় তাকে।

 ইংরেজদের কাছে কর্মরত জেল কারাদক্ষ রামকিঙ্কর কীভাবে স্বদেশি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার অভিনব ফন্দি আটেন। নিজেই তাঁদের হাতে তুলে দেন, ফুটবল। কীভাবে শাসক শ্রেণীর অস্ত্রেই তাঁদের সায়েস্তা করে শোষিতরা, সেই ভাবেই এগোবে গল্প। 
 

অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী বলেন, "আমার চরিত্র, রামকিঙ্কর পেশাগতভাবে একজন জেলার হলেও সে আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত বাঙালির মতই। তার কাছে চাকরীর একটা গুরুত্ব আছে। পরাধীন আমলে দেশের একজন জেলার হওয়ায়, ব্রিটিশদের যুক্তির সঙ্গে তার যুক্তির কিছু মিলও আছে। রামকিঙ্করকে কম-বেশি অনেক অপমান সহ্য করতে হয় এবং চারিদিকে ঘটতে থাকা নানা ঘটনা, তার মনে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি করে। এটাই এই চরিত্রের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং একটা দিক।" 
 

তিনি আরও যোগ করলেন, "আমার মনে হয় এই ধরনের গল্প সচরাচর বাংলা ভাষায় আমরা দেখি না। সেই দিক থেকে 'মুক্তি' খুবই অনন্য। এই সিরিজে একটা ফুটবল ম্যাচ রয়েছে, যেটা আমাদের গল্পকে একটা অন্য মোড়ে দিয়ে যায়।" 
 

ঋত্বিকের কথায়, "আমার মনে হয় সেই সময়কালকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, নির্মাতাদের অসীম পরিশ্রম এবং অভিনেতাদের দুর্দান্ত অভিনয়, সব মিলিয়ে একটা দারুণ ওয়েব সিরিজ আসতে চলেছে। আমি খুব আনন্দ করে কাজটা করেছি। যেভাবে আমাদের ইতিহাস, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে গল্পের পরোতে পরোতে মিশিয়ে দেওয়া আছে, আশা করি দর্শকেরা একটা ভাল কাজ দেখার আনন্দ পাবেন।" 
 

অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তী বললেন, "এত ভাল একটা টিমের সঙ্গে কাজ করতে পারাটাই আমার জন্য একটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। ক্যামেরার সামনে এবং পিছনে দুই জায়গাতেই খুব ভাল এবং অভিজ্ঞ একটা টিম কাজ করেছে। আমাদের সকলেরই কাজটা করতে এত ভাল লেগেছে। আশা করি সেটা পর্দায় প্রতিফলিত হবে।"
 

"আমরা সকলেই স্বাধীন হতে চাই। শুধুমাত্র দেশ স্বাধীন করার গল্প বলে নয়, ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্নভাবে আমরা স্বাধীনতা চাই, নিজেদের মতো করে বাঁচতে চাই। নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোও 'মুক্তি'-র আরও একটা থিম। আর স্ট্রিমিং শুরু হওয়ার জন্য ২৬ জানুয়ারির থেকে আর ভাল দিন হয় না। তাই সকলে অবশ্যই জানাবেন কেমন লাগল।" 

দিতিপ্রিয়া রায় জানালেন, "অনেকদিনে বাদে জি ফাইভ বাংলা কনটেন্ট নিয়ে কাজ করল। 'মুক্তি'-তে আমি রামকিঙ্কর অর্থাৎ ঋত্বিক দা-এর বিপরীতে অভিনয় করেছি। যেহেতু এই গল্পটা ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের লড়াই, তার জন্যেই প্রজাতন্ত্র দিবস বেছে নেওয়া হয়েছে রিলিজের তারিখ হিসাবে।" 
 

অভিনেত্রী আরও বললেন, "এই প্রোজেক্টটা নিয়ে আমি খুবই উৎসাহিত ছিলাম, কারণ প্রথমবার আমি ঋত্বিক দা-এর সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করছি এবং আমার বেশিরভাগ দৃশ্যই ওঁর সঙ্গে। খুব মজা করে কাজটা করেছি। যেহেতু এখানে একটা সময়কালকে তুলে ধরা হয়েছে, তাই তখনকার মতো করে কথা বলা, চলাফেরা করতে হয়েছে। আমার চরিত্র মিনু, তখনকার সময়ও খুবই উদার এবং অনুসন্ধিৎসু।"       

ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত দেশনায়কদের কথা প্রায় সকলের জানা। তবে বছরের পর বছর ধরে হওয়া সেই কঠিন যুদ্ধের সঙ্গে যে জড়িত রয়েছেন কত অজানা সৈনিক, তা আজও বহু ভারতবাসীর অজানা। 

এই ওয়েব সিরিজ আসার খবর চাউর হওয়ার পর থেকেই সকলের মনে ছিল উৎসাহ, কৌতূহল। আর প্রথম ঝলক সামনে আসার পর থেকেই, দর্শকদের প্রত্যাশা বহুগুণ বেড়েছে তা আর বলা বাকি রাখে না।