পরিবর্তনই একমাত্র ধ্রুবক ! এবং সব সম্পর্কই স্বর্গে তৈরি হয় না, কিছু সম্পর্কের অন্যরকম পরিণতও হয়....
এক জোড়া তরুণ-তরুণী, যারা দুজন দুজনের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, একটি টেকনোলজি ইনস্টিটিউশনে পৌঁছায়। এরপরে কিভাবে তাঁদের জীবনে ঘটতে থাকে বিভিন্ন ঘটনা, ভাগ্য কী মেলাতে পারে তাঁদের? নাকি নিয়ে যায় দুটো ভিন্ন রাস্তায়? এই নিয়েই 'মিসম্যাচড' (Mismatched) - র মূল গল্প।
রেটিং - ৩.৫/ ৫
সিরিজটি লিখেছেন গজল ধালিওয়াল, পরিচালনার দায়িত্ব সামলেছেন আকর্ষ খুরানা এবং নিপুণ ধর্মাধিকারী। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুজন খুব জনপ্রিয় মুখ প্রাযাক্তা কোলি এবং রোহিত সরফ। এর আগে একটি ছোট ছবিতে কাজ করলেও এইরূপ বড় কাজ দিয়ে ইউটিবারেরর ভূমিকা থেকে বেরিয়ে এসে প্রথমবারই ছক্কা হাকিয়েছেন প্রাজাক্তা কোহলি (Prajakta Koli)। অন্যদিকে রোহিত সরফের (Rohit Saraf) রয়েছে ফ্যানেদের লম্বা তালিকা। সন্ধ্যা মেননের লেখা নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলার 'ওয়ের ডিম্পল মেট ঋষি' (When Dimple Met Rishi) গল্পের থেকেই নেওয়া হয়েছে এই মিনি সিরিজের গল্প। যদিও এই সিরিজের সাপোর্টিং চরিত্রগুলিকেও বিভিন্ন ধারায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি স্কুলে বা কলেজে ঘটে যাওয়া খুব সাধারণ কিছু ঘটনা কিভাবে এই চরিত্রগুলিকেও প্রভাবিত করে সেই গল্প নিয়েই এই সিরিজটি, গত ২০ নভেম্বর প্রাথমিকভাবে ৬ টি এপিসোড দিয়ে মুক্তি পেয়েছে।
গল্প: দুজন 'ইয়ং' প্রাপ্তবয়স্কের জীবনের কিছু অধ্যায় নিয়েই গল্প এগোয়। যার মধ্যে একজন 'টেক স্যাভি' এবং গেমার ডিম্পল আহুজা। কেরিয়ার সচেতন ডিম্পলের জীবনের লক্ষ্য, তাঁর আদর্শ নন্দিনী নাহাতার মতো তিরিশ বছরের আগে বিদেশী ম্যাগাজিন 'ফোর্বস'-এর কভার ফটোতে আসা। সেও স্বপ্ন দেখে নন্দিনীর মতো বিশেষ কোনও অ্যাপ সে বানিয়ে ফেলবে এবং হয়ে উঠবে তারকা। অন্যদিকে কেরিয়ার নিয়ে অতটা ভাবনা চিন্তা নেই রোমান্টিক ঋষি সিং শেখাওয়াতের। রাজপুত এই ছেলে বাবা- মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকেই খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করে জীবনে সেটেল করতে চায়।
সিরিজের প্রথম এপিসোড নজর কারে সকলের। যেখানে দুজন বিপরীত মেরুর মানুষ তাঁদের জীবনের লক্ষ্যে একদম স্থির। কিন্তু সেই লক্ষ্যে রয়েছে একটি চমক। তথাকথিত ধারণা ভেঙে একদিকে ছেলেটি খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চায়। তো অন্যদিকে তাঁর বয়সী মেয়েটি একজন খুব সফল ডেভেলপার হতে চায়।
বাবা- মায়ের একমাত্র মেয়ে ডিম্পল। বরাবরই মেয়ের শ্যামবর্ণা গায়ের রং এবং বিয়ে নিয়ে চিন্তিত তাঁর মা। নিত্যই তিনি ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে খুঁজতে থাকেন উপযুক্ত পাত্র। এরই মধ্যে জয়পুরের একটি টেকনোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটে তিন মাসের জন্য অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট কোর্স করার সুযোগ পায় ডিম্পল।
অন্যদিকে বাইরে থেকে ঋষির জীবন খুব চকচকে দেখালেও আসলে তাঁর জীবনে রয়েছে নানা সমস্যা। বাবা-মায়ের ভাঙাচোরা সম্পর্ক দেখে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করে, তাঁর ভালোবাসার হাত ধরেই জীবনে এগোবে।কেরিয়ার নিয়ে তাঁর বিশেষ কোনও লক্ষ্য নেই। তাই এই পরিকল্পনায় নিজের ঠাম্মার সঙ্গে ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে ছবি দেখতে দেখতে ডিম্পলের প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে যায় সে।
'মিসম্যাচড'-র একটা দৃশ্য থেকে অন্য দৃশ্যের রূপান্তর মসৃণ নয়। প্রতিটি এপিসোডই শেষ হয় অসম্পূর্ণ ভাবে। দর্শকদের দেখতে দেখতে যেন মনে হবে হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেল...
প্রথম পর্বে দর্শকদের অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের দিকে নজর যায়। তারপরেই গল্পে চলে আসে 'লেজেন্ট অফ লীগে'-র কম্পিটিশন। একসঙ্গেই যেন চলতে থাকে একাধিক জিনিস।
সিরিজে সিদ্ধার্থ স্যারের ভূমিকায় নজর কেরেছেন রণবিজয় সিং। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই তাঁদের একদিকে যেমন উৎসাহ দেন তিনি কেরিয়ার নিয়ে, অন্যদিকে তাঁদের বিভিন্ন দুষ্টমিতে প্রশ্রয় দিতেও পিছ পা হন না এই 'কুল' শিক্ষক। 'ফ্রেন্ড, ফিলোসফার ও গাইড'-এর উপযুক্ত উদাহরণ যেন তিনি। এই চরিত্রটি দেখে অনেক তরুণ-তরুণীরই মনে হতে পারে এইরকম শিক্ষক আমারও পেলে ভাল হতো।
এই সিরিজের গল্প এগানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি চরিত্রের একটি বিশেষ দিক উন্মোচন হতে থাকে। 'আমিই সেরা', এটা দেখাতে প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে সকলেই কিভাবে নিজেদের মুখোশের আড়ালে রাখে সেটা সহজেই ধরা পড়ে গল্প। চিত্রটা হয়তো বর্তমান যুগের রিয়েল লাইফের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়।
তবে একদল ছেলেমেয়ে যারা একটি ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করতে এসেছে, শুধু ডিম্পল ছাড়া, তাঁদের জীবনে কোনও লক্ষ্যই নেই কেরিয়ারে সফল হওয়ার। কোথাও গিয়ে একটা গোটা জেনারেশনের ফোকাস নড়ে যাওয়া এবং ক্রাইসিসের চিত্র ধরা পড়ে এই মিনি সিরিজে।
সিরিজের শেষ পর্বে নজরে আসবে একটি নতুন ট্যুইস্ট। কারও অবিশ্বাস্য জয়, বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়া, তো কোথাও নতুন শুরু...এবং হঠাৎ করেই সিরিজের শেষ!
কিছুটা দুর্বল স্ক্রিপ্ট এবং গল্পের বাঁধুনিতে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও এই মিনি সিরিজে রয়েছে একগুচ্ছ ফ্রেশ মুখ। ৬ টা এপিসোড মিলিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টার জন্যে বিনোদন এবং মাইন্ড ফ্রেশ হবেই।
সব মিলিয়ে শেষ হওয়ার পরে দর্শকদের মনে আসবে নানাবিধ প্রশ্ন। একথা মনে হতেই পারে, যা! শেষ হয়ে গেল? এটা কেন হল, ওটা কিভাবে হল?- এই প্রশ্নগুলি মাথায় উদয় হওয়া সহজেই জানান দেয় 'মিসম্যাচ'-র পরবর্তী সিজন নিশ্চয়ই আসবে।