সংখ্যার বিচারে হোক, বা গায়কির বিচারে, এ মুহূর্তে দেশের সমস্ত শ্রোতাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তাঁদের প্রিয় গায়ক কে? অধিকাংশের মুখে একটাই নাম উঠে আসবে, অরিজিৎ সিং (Arijit Singh)। সঙ্গত কারণেই। ব্লুজ হোক বা বসন্ত-বাহার, আদ্যোপান্ত পার্টির গান হোক বা 'ফির লে আয়া দিল'- 'আয়াত', সব গানকে নিজের করে শ্রোতাদের কানে মধু ঢেলেছেন অরিজিৎ। আজ এই সঙ্গীত শিল্পীর ৩৪ তম জন্মদিন।
মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের ছেলে অরিজিৎ-র বাবা শিখ ও মা বাঙালি। তিন বছর বয়স থেকে পরিবার থেকেই গান শেখায় হাতেখড়ি তাঁর। এরপর একে একে ধ্রুপদী সঙ্গীত, রবীন্দ্র সঙ্গীত এবং পপ গানের তালিমও নিয়েছিলেন অরিজিৎ।
ছেলেবেলা থেকেই মোজার্ট, বিথোভেন, বাংলা ধ্রুপদী সঙ্গীত শুনে বড় হওয়া অরিজিৎ-র জীবনের আদর্শ বড়ে গুলাম আলি খাঁ, উস্তাদ রশিদ খান, জাকির হুসেন এবং আনন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মতো দিকপাল সঙ্গীত শিল্পীরা। অন্যদিকে আবার কিশোর কুমার, হেমন্ত কুমার, মান্না দের-র গানও খুব পছন্দ অরিজিৎ সিংয়ের।
২০০৫ সালে জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো 'ফেম গুরুকুল' থেকে অরিজিৎ-র পরিচিতি বাড়তে শুরু করে। যদিও এই প্রতিযোগিতায় ষষ্ঠ হয়েছিলেন তিনি। এরপর 'দশ কে দশ লে গয়ে দিল' -এ বিজয়ী হন তিনি। এই রিয়্যালিটি শো থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে মুম্বইয়ে নিজের রেকর্ডিং স্টুডিয়ো খোলেন অরিজিৎ সিং। সেই সময়ে সঙ্গীত প্রযোজনার পাশাপাশি বিজ্ঞাপন, রেডিয়ো চ্যানেলের জন্য সঙ্গীত পরিচালনাও করতেন তিনি।
তবে অরিজিৎ-র কেরিয়ারের বড় ব্রেক পান ২০১১ সালে 'মার্ডার ২' ছবিতে মিঠুনের পরিচালনায় 'ফির মহব্বত' গানটির মাধ্যমে। এরপর 'এজেন্ট ভিনোদ', 'ককটেল', 'বরফি', 'সংঘাই'-ছবির গানগুলিতে তাঁর সুরেলা কণ্ঠে মুগ্ধ হন শ্রোতারা।
'আশিকি ২' ছবির 'তুম হি হো' গানের মাধ্যমেই ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে সেরা নেপথ্য গায়কের পুরস্কার এসেছিল অরিজিৎ-র ঘরে। এরপরে একের পর এক হিট! তাঁর গাওয়া যে কোনও গান মন ছুঁয়ে যায় সকলের। বলা যায় গায়ক হিসাবে প্রায় সমস্ত পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করে ফেলেছেন। সম্প্রতি সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করছেন অরিজিৎ। নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে সানিয়া মালহোত্রা-র ছবি 'পাগলাইট', সেই ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন অরিজিৎ। মিউজিক স্ট্রিমিং অ্যাপগুলিতে এই গান এখন ট্রেন্ডিং।
২০১৪ সালে ছোটবেলার বন্ধু কোয়েল রায়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন অরিজিৎ। বর্তমানে দুই সন্তানকে নিয়ে মুম্বইয়ের আন্ধেরিতে সংসার কোয়েল-অরিজিৎ-র।
বাংলা, হিন্দি ও তেলেগু ইন্ডাস্ট্রিতে অরিজিৎ সিং নিজের শিল্পকর্মের পরিচয় দিয়েছেন যথেষ্ট। একথা বলাই যায় বেশির ভাগ ভারতীয় সঙ্গীত প্রেমীদের প্রিয় প্লে-লিস্টে প্রথম দিকেই থাকে তাঁর গান।