'সখী, ভালোবাসা কারে কয়!সে কি কেবলই যাতনাময়।'ভালবাসার সংজ্ঞা খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন রবি ঠাকুর। সেই সংজ্ঞাই যেন বাস্তবে দিলেন সব্যসাচী চৌধুরী। এই কটা দিন তাঁর কেটেছে হাসপাতালেই। খাওয়া বলতে কাছেপিঠের দোকানের ম্যাগি।ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর পর কেমন আছেন সব্যসাচী? আমৃত্যু প্রিয়জনের পাশে থাকলেন'বামা'।
আজকাল টিন্ডারের এক আঙুলের ছোঁয়ায় পছন্দের নারী-পুরুষ খুঁজে নেওয়া যায়। ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটে বলে ফেলা যায় সব কথা। তা-ও মানুষ একা! ক্ষণিকের ভাললাগা ভাঙতেও ক্ষণিকই লাগে। জাস্ট ব্লক করে দাও। সেই যুগেই সব্যসাচী যেন একটা দমকা হাওয়া। নেটিজেনরা বলছেন,'প্রেমিক সবাই হতে পারে পুরুষ নয়!' যথার্থই। অনিশ্চয়তার মাঝে প্রেয়সীর হাত ধরে রাখতে গেলে হিম্মত দরকার।
ক্যানসার জয় করে নিজের স্বপ্নপূরণের পথে হাঁটছিলেন ঐন্দ্রিলা। একাকী। ২০১৭ সালে সব্যসাচীর সঙ্গে দেখা ঝুমুর ধারাবাহিকের সেটে। পূর্বরাগ হয়নি। বন্ধুত্ব দিয়েই শুরু তাঁদের প্রাথমিক কথাবার্তা। ফোনালাপও শুরু হয়। সব্যসাচী বরাবরই আড়ম্বরহীন। তাঁর ভালবাসার অনুরণনে সোল্লাস নেই। তিনি খালি ভালবাসতে পারেন। তাই প্রথাগত 'ইজহার-এ-মহব্বত'-ও করেননি। ধীরে ধীরে দুজনের মন দেওয়া-নেওয়া শুরু হয়।
তার পর প্রথম ডেট দক্ষিণ কলকাতার ছাদখোলা রেস্তরাঁয়। বেশ চলছিল ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচীর প্রেমযাপন। ছন্দপতন ২০২১ সালে। দ্বিতীয়বার ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে ঐন্দ্রিলার। শুরু হয় কেমোথেরাপি। ২০২২ সালে ফের লড়াই জয় ঐন্দ্রিলার। পাশে সব্যসাচী।
ভালবাসায় মন দেওয়া-নেওয়ার সময় অনেকে অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। উপহারের ডালি সাজান। কিন্তু সময় আসলেই কঙ্কালসার দশা বেরিয়ে পড়ে। গোলাপের পাপড়ির মতো খসে যায় যাবতীয় কথা। রূপ-বর্ণ হয়ে ওঠে প্রাধান্য। কখনও কখনও ভালবাসা হয়ে ওঠে শরীরসর্বস্ব। সব্যসাচী ব্যতিক্রমী। কেমোর পর ভগ্ন শরীর। মাথায় চুল নেই। এমন নায়িকার সঙ্গেও নাচতে পারেন প্রেমিক। এ তো ছবিতে হয়। বাস্তবেও হতে পারে। দেখালেন সব্যসাচী। তাই তো নায়িকা লিখতে পারেন,'আমার বেঁচে থাকার কারণ।'
এমন প্রেম-জুটির অক্ষয় কামনায় প্রার্থনা করেছে বাঙালি। প্রিয়জনের পাশে থাকাটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে আবেগ বোঝাল,পাশে থাকাটা আর স্বাভাবিক নেই। বিরল থেকে বিরলতম হয়ে গিয়েছে। ওই যে প্রেমিক হতে গেলে গাছ হতে হয় । ছায়ার মতো শান্ত হতে হয়। তাই সবার প্রেমিক হওয়া হয় না। সব্যসাচী হতে পেরেছেন।
আরও পড়ুন- ক্যানসার হারিয়ে স্বপ্নপূরণ, ঐন্দ্রিলার ছোট্ট জীবন মনে করাল 'আনন্দ'কে