কোনও বিশেষণ দিয়ে বিশ্লেষণ করা খুব কঠিন অরিজিৎ সিংকে। তাঁর গলার ম্যাজিক লাখো লাখো ভক্তের মন ছুঁয়েছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ অরিজিৎ-এর জনপ্রিয়তা সর্বত্র। ২৫ এপ্রিল তাঁর জন্মদিন। আর এই বিশেষ দিনে গায়কের কিছু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বলা যাক।
অরিজিৎ-এর মন রে কৃষিকাজ গানে মুগ্ধ সবাই
বলিউডের মতোই টলিউডকেও একাধিক হিট গান উপহার দিয়েছেন অরিজিৎ সিং। সেই তালিকাতেই রয়েছে শ্রীজাত পরিচালিত প্রথম ছবি মানবজমিন-এর একটি গান। মন রে কৃষিকাজ জানো না এই রামপ্রসাদি গানটি অরিজিৎ সিং-এর গলায় শোনার পর তা সকলের মুখে মুখে এখন শোনা যাচ্ছে। রীতিমতো মিউজিক চার্টে এই গান রাজত্ব করছে। শ্রীজাতর আবদারেই প্রথমবার রামপ্রসাদি গানটি গেয়েছিলেন অরিজিৎ। তবে তাঁর কন্ঠে অনেকের এই গান পছন্দ হয়েছিল আবার অনেকে এই গান নিয়ে মোটেও খুশি হননি। অনেক শ্রোতা তো আবার ভেবেছিলেন এটা নতুন একটি গান, যা অরিজিৎকে দিয়ে গাওয়ানো হয়।
আরও পড়ুন: সলমনের মুভিতে অরিজিতের গান শোনা যায় না, কী হয়েছিল দু'জনের মধ্যে?
তিনমাস ধরে এই গানটি শুনেছেন অরিজিৎ
শ্রোতাদের একাংশ অরিজিৎ-এর এই গান গাওয়া নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছিল সেই সময়। অনেকেই জানিয়েছিলেন যে ৩০০ বছরের পুরনো গান কেন অরিজিৎকে দিয়ে গাওয়ানো হল? অরিজিৎ-এর কন্ঠে এই গান শুনে মোটেই খুশি হনন বর্ষীয়ান সঙ্গীতশিল্পী শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়। তিনিও ক্ষোভ উগরে জানান যে অরিজিৎ তো রামপ্রসাদ বা পান্নালাল ভট্টাচার্য হতে পারবেন না। এক সাক্ষাৎকারে শ্রীজাত জানিয়েছিলেন যে তিন মাস ধরে পান্নালাল ভট্টাচার্য এবং ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের গলায় ‘মন রে কৃষিকাজ জানো না’ গানটি শুনে এক রাতে এই রেকর্ড করেছিলেন অরিজিৎ। তবে যাঁদের এটা ধারণা যে মন রে কৃষিকাজ জানো না গানটি আসলে অরিজিৎ-এর গলাতেই জনপ্রিয় হয়েছে, জেনে রাখুন এটা অতি পুরনো এক গান। জেনে নিন তাহলে এই গানের ইতিহাস।
আরও পড়ুন: Arijit Singh: অভিনয়ে আসছেন অরিজিত্ সিং? জানিয়ে দিলেন...
মন রে কৃষিকাজ জানো না -এর ইতিহাস
এটা প্রায় ৩০০ বছর আগেকার একটি গান। বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ট ভক্তিগীতির রচয়িতা ছিলেন রামপ্রসাদ সেন। এই গানটি তাঁরই লেখা এবং গাওয়া। মন রে কৃষিকাজ জানো না, গানটি যেন বাঙালির কৃষিসমাজের প্রতিচ্ছবি । বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে কৃষিসমাজের সংযোগ নিবিড়। আজও আমরা বাঙালিরা বৈশাখের প্রথম দিবসে লাল রঙের মাটির বাসনে পান্তা খাই। রামপ্রসাদের গান সেই বাঙালির কৃষিসমাজের নান্দনিক প্রতিনিধি। রামপ্রসাদের এই গান দুই বাংলাতেই যথেষ্ট জনপ্রিয়। রামপ্রসাদী সুরের এ গান যেন চিরন্তন। যে রামপ্রসাদী সুর পরবর্তীকালের বাঙালির সুরকারদের প্রভাবিত করেছিল। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ রামপ্রসাদী সুরে কয়েকটি দেশাত্মবোধক গান সৃষ্টি করেছেন। পরে রামপ্রসাদী এই গান শোনা যায় বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী পান্নালাল ভট্টাচার্যের গলায়। ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের গলাতেও এই গান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
আরও পড়ুন: Arijit Singh Marriage: দ্বিতীয় বিয়েটা তারাপীঠে সেরেছিলেন অরিজিত্, প্রথমবার কী হয়েছিল?
কলকাতা কনসার্টেও এই গান গেয়ে ওঠেন অরিজিৎ
সম্প্রতি কলকাতার কনসার্টে এসে অরিজিৎ সিং গেয়ে উঠেছিলেন এই গানটি। আর গানের শুরুতেই বললেন, মনে হচ্ছে নিজেকে গালি দিচ্ছি। সেই কনসার্টেই তিনি এই গান গাওয়ার ইতিহাসও বলেন। অরিজিৎ সেই সময় বলেছিলেন, "আমার এই গানটা গাইতে খুব অসুবিধে হয়েছিল। অনেকটা সময় নিয়েছিলাম। কিছুতেই গানটা গাইতে পারছিলাম না। কেন জানি না গানটার কথাগুলো শুনলে মনে হয় নিজেকে গালাগাল দিচ্ছি। বা মনে হয় রামপ্রসাদ বাবুই আমায় গালাগাল করছেন।" উল্লেখ্য, এই গান রিলিজ করার পর থেকেই অরিজিতের প্রশংসা যেমন অনেকে করেছিলেন তেমনি এই গান গাওয়া নিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল গায়ককে।