টলিপাড়ার চেনা মুখ তো বটেই তবে অনুষা বিশ্বনাথন ঘরে ঘরে পরিচিত 'তোতা' নামেই। 'জল থই থই ভালোবাসা' সিরিয়ালের দৌলতে তিনি এখন সকলের আদরের 'তোতা'। তারকা সন্তান হলেও অভিনেত্রী তাঁর নিজের অভিনয়ের জোরেই ইন্ডাস্ট্রিতে পা জমিয়েছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী অনুষা। সদ্য পাশ করেছেন স্নাতকোত্তর পর্বের পরীক্ষা। নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রীদের মধ্যে অনুষা অন্যতম। তাঁর স্টাইল স্টেটমেন্ট এক্কেবারে আলাদা। সেই অনুষার পুজোর প্ল্যান কী? bangla.aajtak.in-কে খোলাখুলি জানিয়ে দিলেন অভিনেত্রী।
উৎসবে কি ফেরা হচ্ছে? অনুষা এ প্রসঙ্গে বলেন, 'উৎসবে ফেরার বিষয়টা ঠিক ওরকম নয়, দেখো আমাকে তো কাজের দিক থেকে দেখতে গেলে আমাকে বেরোতে হবে, পুজো পরিক্রমায় যেতে হবে, তবে আমার যেটা মনে হয় যে সবটাই খুব সাধারণভাবে করা উচিত। হয়তো আমি এই বছর সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব একটা ছবি দেব না, আমি হয়তো এই বছর অন্যান্য বারের মতো পুজো সেলিব্রেট করব না। কিন্তু আমার যে সব বন্ধু-বান্ধবেরা রয়েছে বিদেশে, তাঁরা যখন আসবে আমাকে তো দেখা করতেই হবে তাঁদের সঙ্গে। আমার বাড়িতে বা বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে আড্ডা হবে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। আমি সম্প্রতি একটা পুজো ইভেন্টে গিয়েছিলাম, আবহটা গম্ভীর কিন্তু বাচ্চারা তো পুজোয় আনন্দ করবেই, তাদের তো আটকানো যাবে না। আর এই ছোট বয়েসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমি এই সময় অনেক কিছু শিখেছি, অনেক কিছুর অভিজ্ঞতা হয়েছে।'
অনুষা আরও বলেন, 'বাঙালিদের কাছে পুজোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। বাচ্চারা এই সময় অনেক কিছু শেখে, বোঝার চেষ্টা করে। তাই আমার মনে হয় না পুজোটাকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া উচিত। সচেতনতার মাধ্যমে পুজোটাকে সেলিব্রেট করাই যায়। আমার মনে হয় না শুধুমাত্র অন্ধকারে আমাদের থাকা উচিত, পুজোটাকে সেভাবেই দেখা উচিত। কোনও গিমিক বা বিজ্ঞাপনের জন্য নারীশক্তিকে ব্যবহার না করে মা দুর্গার সেই স্পিরিটটা যদি আমরা ভিতরে নিতে পারি, আমরা কেন দুর্গাপুজো পালন করি সেই উদ্যোগটা যদি আমরা ভিতরে নিতে পারি তাহলে মনে হয় না অসুবিধে হওয়ার কথা। নিজের মতো করে পুজোটাকে সেলিব্রেট করা। আমরা তো সময়কে বেধে রাখতে পারি না, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যে প্রতিক্রিয়া, সাপোর্ট যেটাই দরকার সেটা বুঝে করে নিতে হবে। হাত-পা গুটিয়ে বাড়িতে বসে এড়িয়ে গেলে চলবে না। আর এই পুজোর সঙ্গে অনেক মানুষের আর্থিক জীবিকা জুড়ে রয়েছে, আর তাই সবদিকটা দেখে তবেই বলা উচিত যে উৎসবে ফেরা উচিত কি উচিত নয়।'
এই বছরের পুজোর প্ল্যান নিয়ে পর্দার তোতা বলেন, 'আমি ওরকমভাবে প্ল্যান করিনি। ছোটবেলা থেকেই সপ্তমীর দিন স্কুল-কলেজের বন্ধু-বান্ধবরা বাড়িতে আসে, আমরা বসি, আড্ডা মারি, খাওয়া-দাওয়া করি। আর এখন তো আরও বেশি করে সেটা দরকার কারণ আমার কোনও বন্ধুই আর কলকাতায় থাকে না। পুজোর সময়ে আসে সবাই। সব প্ল্যান এখনও হয়নি, তবে সপ্তমী-অষ্টমীতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বসব। এছাড়া কাজ থাকবে, পুজো পরিক্রমা থাকবে, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবো, খুব একটা এক্সাইটিং প্ল্যান সেভাবে নেই। আর পুজোর সময় আমি আর মা চেষ্টা করি একসঙ্গে শাড়ি এক্সচেঞ্জ করে পরা, এমনিতে আমার কম শাড়ি আর মায়ের প্রচুর শাড়ি।'
আর বিশেষ মানুষের সঙ্গে কী প্ল্যান? এটার জবাবে অনুষা বলেন (হেসে), 'আমি প্রেম করছি কিনা এটা নিয়ে কোনও বক্তব্য দিতে চাই না। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে প্ল্যান আছে, আলাদা কোনও প্ল্যান নেই।' গত বছর অঞ্জলি দেওয়া হয়নি তবে এই বছর অবশ্যই অঞ্জলি দেবেন বলে জানিয়েছেন অনুষা। তিনি বলেন, 'গত বছর দিতে পারিনি। গত বছর সপ্তমীতে সকাল ৭টা পর্যন্ত আড্ডা দিয়েছি। তারপর কেউ কেউ আমার বন্ধুরা দিয়েছে কিন্তু আমার অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়া হয়নি। শরীরটাও ভাল ছিল না। তবে এই বছর চেষ্টা করব অঞ্জলি দেওয়ার। রাতজেগে ঠাকুর দেখা? অনুষা বলেন, গত দু বছরে সারারাত ঘুরিনি। তবে রাতে বেড়িয়েছি কিছুক্ষণের জন্য। আমার রাইড চড়তে ভালো লাগে। দেশপ্রিয় পার্ক হোক অথবা ট্র্যাঙ্গুলার পার্ক, যেখানে মেলা হয়, সেখানে আমি যেতে পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি একটু রাতের দিকে যেতে সেই সময় ভিড়টা কম থাকে।'
পুজোতে কি শাড়ি পরছেন অনুষা? অভিনেত্রী বলেন, 'শাড়ি পরতে ভালোবাসি আর চেষ্টা করব শাড়ির মধ্যেই থাকতে। এই কদিন শাড়ি পরতেই ভালো লাগে।' আর পুজোতে কোনও ডায়েট নেই অনুষার। সবই খাবেন বলেই জানিয়েছেন। মা মধুমন্তী মৈত্রের কাছে স্পেশাল কী মেনুর আবদার? 'অনুষা বলেন, মায়ের কাছে আবদার করে কোনও লাভ নেই, মা খুব একটা রান্না করতে পারে না। মা উল্টে আমাকে আবদারটা করবে তুমি ভাল কিছু রেঁধে খাওয়াও। আমি দিদার কাছে আবদার করি একটু মাটন বানিয়ে দাও, সেটা হয়। দিদা আমার জন্য রান্না করতে ভালোবাসে। মাকে আমাকে রান্না করে দিতে হয়। সন্দেশ ভাল না বাসলেও ভাজা মিষ্টি খেতে ভালোবাসি, পান্তুয়া, ল্যাংচা, জিলিপি জমিয়ে খাব। পুজোতে ফুচকা খাব প্রচণ্ড ঝাল দিয়ে।'
ছোটবেলার পুজো নিয়ে স্মৃতি প্রসঙ্গে অনুষা বলেন, 'আমি খুব কড়া শাসনের মধ্যে বড় হয়েছি। খুব বড়বেলা পর্যন্ত রাতে বেরোতে পারতাম মা। আমার দাদু আমাকে নিয়ে বেরোতো পুজোর রাতে, জয় রাইড চড়তে ছোট থেকেই পছন্দ করতাম, আর বাড়ির চারপাশে যে পুজোগুলো হত সেখানে গিয়ে নাগরদোলা চড়তাম। নৌকার মতো দেখতে নাগরদোলাতে উঠে দাদুকে ওপর থেকে হাত নাড়াতাম। আর সেটা প্রতিবছর এখনও করি।'