প্রকৃতির সঙ্গে পড়াশোনা। আর প্রকৃতি আত্মার সঙ্গে মিশে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সেই স্মৃতি ভাগ করে নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণী প্রাক্তনীরা। অভিনেতা বাচিক শিল্পী সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বিশ্বভারতীর শতবর্ষে এস.পি.সি ক্রাফট এবং মোহরবীথিকা অঙ্গনের উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথের কর্মযজ্ঞের প্রতি অর্ঘ্য 'শিক্ষাতীর্থ'। আগামী ১২ জুন রাত ৯টায় এস.পি.সি ক্রাফটের ফেসবুক পেজে অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখা যাবে।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক টাকা দিয়ে বোলপুরে জমি কেনা দিয়ে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রথমে 'শান্তিনিকেতন' নামে বাড়ি তৈরি হয়। সেই বাড়ি ধীরে ধীরে মহীরুহ হয়ে ওঠে শিক্ষার পীঠস্থান হিসাবে। বিবিধের মাঝে এক মহান মিলন হয়ে ওঠার বিভিন্ন অধ্যায়ে বহু স্বনামধন্য ব্যক্তি যুক্ত হয়েছেন বিশ্বভারতীর সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় জাতি, ধর্ম, দেশ নির্বিশেষে শুধুমাত্র জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হিসাবেই বিশ্বের মানচিত্রে উজ্জ্বল ঠিকানা হয়ে ওঠে শান্তিনিকেতন। শুধু জ্ঞানচর্চাই নয়, প্রকৃতির মাঝে প্রকৃতি প্রেমর পাঠও দিয়েছে এই অনন্য শিক্ষাঙ্গন। বৃক্ষরোপন, হলকর্ষণ, বসন্ত উৎসবের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রকৃতি দেবীর আরাধনা করা হয়েছে। মানুষ এবং প্রকৃতির সহাবস্থান যে কতটা জরুরি তার পাঠও দিয়েছে বিশ্বভারতী।
বর্তমানে বিশ্বভারতীর অন্দরে যা হচ্ছে তা নিয়ে অনেক প্রাক্তনী, অধ্যাপক, আশ্রমিক ক্ষুব্ধ, দুঃখিত। রবীন্দ্র ভাবনার ফসল হিসাবে এত সুচিন্তিত, সুপরিকল্পিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে তা কল্পনাতীত। তবে প্রকৃতিরই নিয়ম, যার উত্থান আছে, তার পতনও আছে। এ সব কিছু নিয়েই আলোচনায় গানে উদযাপিত হবে বিশ্বভারতীর শতবর্ষ।
আরও পড়ুন: Basanta Utsav Exclusive: শিশুতীর্থে বসন্ত উৎসব উদযাপনে ঠাকুর বাড়ির সদস্যরা
এই ডিজিটাল অনুষ্ঠানে থাকবেন বিশ্বভারতীর আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক ও শিক্ষক গৌতম ভট্টাচার্য, প্রমিতা মল্লিক, অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, অধ্যাপক অমৃত সেন, চন্দ্রোদয় ঘোষ, তমোজিৎ রায়, ড. পবিত্র সরকার, মালবিকা ভট্টাচার্য্য, আনন্দ লি তান, অদিতি রায়, নন্দিতা বসু সর্বাধিকারী এবং বিশ্বভারতীর আরও গুণী প্রাক্তনীরা। রবীন্দ্রগানে থাকবেন সাশা ঘোষাল, শ্রমণা চক্রবর্ত্তী, শরণ্যা সেনগুপ্ত, মনোজ মূরলী নায়ার, স্রবন্তী বসু বন্দোপাধ্যায়, লি এ্যলিসন্ সিবলি, প্রিয়ম মুখোপাধ্যায় এবং ঋতপা ভট্টাচার্য্য।
আরও পড়ুন: দেদার ভাঙে গাছের ডাল, বসন্ত উৎসব কি পলাশ ধ্বংসের উৎসবে পরিণত হচ্ছে?
এ প্রসঙ্গে আজতক বাংলাকে প্রমিতা মল্লিক বলেন, 'এক সময় সত্যিই সারা বিশ্ব থেকে বহু জ্ঞানী গুণী মানুষ এখানে আসতেন। পড়তেন পড়াতেন। কোনও জাত ধর্মের বিচার করা হত না। সেখান থেকে অনেকাংশেই আজ বিশ্বভারতী বিচ্যুত। আমার মনে এটা মানুষকে স্মরণ করানো দরকার। সে জন্যই এই অনুষ্ঠান।' অনুষ্ঠানের অন্যতম পরিকল্পক সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় আজতক বাংলাকে জানিয়েছেন, 'এই যে একটা ভাইরাস সমস্ত শিক্ষাব্যবস্থা, শৈশবকে প্রায় বিকলাঙ্গ করে তুলল, গড়ে তুলছে একটা ডিজিটাল প্রজন্ম, ঠিক এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বিশ্বভারতীর মতো একটা স্বপ্ন দেখা দরকার। এমন একটা স্বপ্ন যাকে স্বার্থান্বেষী রাজনীতি কলুষিত করতে পারবে না।'