Hemwant Tiwari: পকেটে নেই টাকা, শিয়াল সেজে রাস্তায়-স্টেশনে ছবির প্রচার চালিয়ে ঝড় তুললেন হেমন্ত

Hemwant Tiwari: নতুন কিছু করার জন্য স্পর্ধা আর সাহস দুটোই থাকতে হয়। নিজের সিনেমাকে কীভাবে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেবেন সেই স্পর্ধাই দেখালেন নবগাত পরিচালক হেমন্ত তিওয়ারি। তাই তো শিয়াল সেজে নেমে পড়েছেন কলকাতার রাস্তায়। নন্দন থেকে ভিক্টোরিয়া, হাওড়া থেকে মণি স্কোয়ার চষে বেড়ালেন । উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় তৈরি করা সাদা-কালো সিনেমা ‘লোমাড়’-এর (২৪টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়া) প্রচার করা।

Advertisement
পকেটে নেই টাকা, শিয়াল সেজে রাস্তায়-স্টেশনে ছবির প্রচার চালিয়ে ঝড় তুললেন হেমন্তহেমন্ত তিওয়ারি
হাইলাইটস
  • নতুন কিছু করার জন্য স্পর্ধা আর সাহস দুটোই থাকতে হয়। নিজের সিনেমাকে কীভাবে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেবেন সেই স্পর্ধাই দেখালেন নবগাত পরিচালক হেমন্ত তিওয়ারি।
  • তাই তো শিয়াল সেজে নেমে পড়েছেন কলকাতার রাস্তায়। নন্দন থেকে ভিক্টোরিয়া, হাওড়া থেকে মণি স্কোয়ার চষে বেড়ালেন ।

নতুন কিছু করার জন্য স্পর্ধা আর সাহস দুটোই থাকতে হয়। নিজের সিনেমাকে কীভাবে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেবেন সেই স্পর্ধাই দেখালেন নবগাত পরিচালক হেমন্ত তিওয়ারি। তাই তো শিয়াল সেজে নেমে পড়েছেন কলকাতার রাস্তায়। নন্দন থেকে ভিক্টোরিয়া, হাওড়া থেকে মণি স্কোয়ার চষে বেড়ালেন । । উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় তৈরি করা সাদা-কালো সিনেমা ‘লোমাড়’-এর (২৪টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়া) প্রচার করা। মানুষের সাড়াও পেয়েছেন অভূতপূর্বভাবে। শুক্রবারই কলকাতার একটি সিনেমা হলে এই ছবি মুক্তি পেয়েছে। সিনেমা মুক্তির পর পরিচালক হেমন্ত ফোনেই আড্ডা দিলেন bangla.aajtak.in-এর সঙ্গে


রাস্তায় শিয়াল সেজে অভিনব পদ্ধতিতে প্রচার, প্রচারের এই কৌশলকে কেন বেছে নিলেন?

হেমন্ত: দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দারুণ ছিল। যখন আমি প্রথম রাস্তায় বেরিয়ে ছিলাম, তখন একটু কিন্তু কিন্তু ভাব ছিল, আমি নিজেও ভাবছিলাম যে আমি কী করছি, কেন করছি। কারণ আমি যখন প্রথম বেরিয়ে ছিলাম হাতে বোর্ড নিয়ে তখন সবাই আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল যে আমি আসলে কী করতে চাইছি বা কী বলার চেষ্টা করছি। এরকম করতে করতেই আমি একদিন চিৎকার করে ফেলি কারণ আমি খুবই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমি রাস্তাতেই চিৎকার করে বলতে শুরু করি আমার সিনেমা লোমাড় নিয়ে। আর যখনই আমি চিৎকার করি মানুষ শুনতে শুরু করে, প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করে। আমি সেই যে চিৎকার করতে শুরু করি সেই চিৎকার আমার কলকাতা পর্যন্ত জারি রয়েছে। এখন আমি সকলের কাছ থেকে খুব ভালো প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। মানুষ এখন আমার পোশাক, শিয়ালের মাস্কের জন্য চিনতে পারছে, রিলস ভিডিওর কারণেও চিনছে, এই অনুভূতিটা খুব সুন্দর। 

এই অভিনব আইডিয়া এল কীভাবে?

হেমন্ত:প্রত্যেক শিল্পীর একটা স্বপ্ন থাকে যে তাঁর কাজকে মানুষ চিনুক, জানুক। আর আমারও এটাই স্বপ্ন ছিল যে আমার সিনেমা বড়পর্দায় আসুক। এখন আমরা এমন একটা পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে সব সিনেমাই ওটিটিতে চলে আসছে আর সব সিনেমাই এখন ওটিটিতে মুক্তি করানোর চেষ্টা করছে। আর সেখানে একটা বড় টিম কাজ করে যাঁরা এই প্রচারের দিকটা দেখে। কিন্তু যখন কোনও ইনডিপেনডেন্ট ছবি তৈরি হয় আর আপনার কাছে বাজেটও থাকে না। আমি আগেই বলেদিয়েছিলাম যে দরকার পড়লে নিজের সিনেমার জন্য যদি রাস্তাতেও চেঁচাতে হয় আমি করতে প্রস্তুত। আর যখন কোথা থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায় না তখন আমি ঠিক করি আমি নিজেই এই ছবি মুক্তির দায়িত্ব নেব। এরপর আমি কাজ শুরু করি, যোগা ক্লাস নিতে শুরু করি আবার, কিছু অন্য কাজও করি যাতে কিছু অর্থ সংগ্রহ করা যায়। সেই টাকায় কিছু সিনেমা হল বুক তো করতে পারলাম কিন্তু উপলব্ধি করলাম এই সিনেমার প্রচার কীভাবে করব। কারণ আমার কাছে তো এত টাকা নেই। তখন আমি একটা বোর্ড নিলাম, নিজের সিনেমা লোমাড় নিয়ে লিখলাম, পোশাক সেলাই করলাম আর ব্যস রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম। আসলে এটা আমি বলেছিলাম মৌখিকভাবে কিন্তু তা বাস্তবে রূপ নেবে ভাবিনি। এভাবেই পুরো বিষয়টা ঘটে যায়। 

Advertisement

সিনেমার প্রচারের জন্য তো বাইকও বিক্রি করেছেন..

হেমন্ত: বাইক বিক্রির ঘটনাতো সিনেমা তৈরির পর একেবারে প্রথম দিকের ঘটনা। এর আগে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে আমার সঙ্গে। আমি বাড়ির ভাড়া দিতে না পারায় আমায় বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, আমি ৪ রাত একটা ভ্যানে শুয়ে কাটিয়েছি। জীবনের সেই সময়টা খুব চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, যেখানে আমি জানি না আমি কী করছি। বাথরুম যাওয়ারও যেখানে জায়গা নেই, কিছু বন্ধু ছিল যাঁদের সাহায্য সেই সময় পেয়েছিলাম। সকালে তাঁদের মধ্যে কারোর বাড়িতে গিয়ে স্নান করছি বিকেলে আবার অন্য কারোর বাড়িতে যাচ্ছি। কোনও মতে টাকা জোগাড় করে আমি ভাড়া দিয়ে সেই বাড়িতে থাকতে শুরু করি। সিনেমার প্রচারের কারণেই বাইক এক বন্ধুকে দিয়ে দিই এবং আমি তাঁর থেকে টাকা নিই। কিন্তু সেই বন্ধু যখন আসল কারণটা জানতে পারে সে তখন বাইক নিয়ে যেতে বলে এবং এও জানায় যে আমার যখন সুযোগ-সুবিধা হবে তখন যেন টাকা দিই। 

সোশ্যাল মিডিয়া তো এক্ষেত্রে অনেকটাই সাহায্য করেছে আপনাকে

হেমন্ত: সোশ্যাল মিডিয়া আমায় অনেকটাই সাহায্য করেছে ছবির প্রচারে। যখন আমি রাস্তায় প্রচার করার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দিচ্ছিলাম তখন মানুষের কাছ থেকে বেশি করে সাড়া পেয়েছি, মানুষ গোটা বিষয়টা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আর এই ভিডিওগুলিতে অসংখ্য লাইক-কমেন্ট এসেছে। 

বড় বাজেটের সিনেমার প্রচারে খরচ হয় লক্ষা লক্ষ টাকা আর সেখানে আপনি নিজেই ছবির প্রচার করছেন রাস্তায় নেমে, কঠিন মনে হয়েছে?

হেমন্ত: সবার আলাদা আলাদা সফর রয়েছে। আসলে ইনডিপেনডেন্ট সিনেমার ক্ষেত্রেও অল্প কিছু বাজেট থাকে প্রমোশনের জন্য। কিন্তু আমার সিনেমায় সেই সুযোগ ও অর্থ ছিল না। আমি এটা সর্বদাই বলি যে আপনার কাছে যখন কিছু থাকে না তখনই বড় বড় আইডিয়া আপনার মাথায় আসে। সেই সময় আপনি কিছু ভাবেন আর অদ্ভুত কিছু হয়ে যায়। আমার সঙ্গে যেটা হয়েছে যে আমার বাজেট ছিল না আর আমি তাই রাস্তায় গিয়ে চিৎকার করি, তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে দিই, আর তার প্রতিক্রিয়া দারুণ পাই। আর দেখুন, আপনার কাছে টাকা আছে আপনি ভালো খাচ্ছেন, ভালো পরছেন, অন্যের কাছে টাকা নেই সে সেভাবেই জীবন ধারণ করছেন। এতে খারাপ লাগার কিছুই নেই। একদিন টাকা আসলে আরও ভালো কিছু করব আমি এটাই মনে করি। 

Advertisement

দর্শক কী বলছেন?

হেমন্ত: কলকাতার দর্শকদের কাছ থেকে দারুণ সাড়া পেয়েছি এই সিনেমা নিয়ে। কেউ কেউ বলছেন এই সিনেমা দেখার পর গায়ে কাঁটা দিচ্ছে, কেউ অভিনয় নিয়ে কথা বলছেন, সব মিলিয়ে এই শহরের দর্শকরা এই সিনেমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। এক মহিলা দর্শক তো আমাকে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গেও তুলনা করেছেন, আমার কাছে এটা বড় প্রাপ্তি। এই অসাধারণ প্রতিক্রিয়া যে পাব আশাই করিনি। আমি তো ভেবেছিলাম কিছু লোক আসবে সিনেমা দেখবে ব্যস। অন্যান্য জায়গা থেকেও এই সিনেমা নিয়ে সাড়া পাচ্ছিলাম তবে কলকাতার মানুষের থেকে যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছি সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এটা আমার প্রত্যাশার বাইরে ছিল। 

এরপর কী পরিকল্পনা?

হেমন্ত: অনেক কিছু করার প্ল্যান আছে এরপর। আমি ইতিমধ্যেই আগমী প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি নতুন কিছু নিয়ে, আরও নতুন চমক নিয়ে আপনাদের ভালোবাসার শহর কলকাতায় ফিরছি আমি।    

POST A COMMENT
Advertisement