প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar Passes Away)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। মুম্বইয়ের ব্রীচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। আজ, রবিবার হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি শিল্পী। শুধু শিল্পী মহল না, সুর সম্রাজ্ঞীর প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা দেশে। 'ভারতের কোকিল কণ্ঠীর' প্রয়াণে দু'দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা কেন্দ্রের। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলার শিল্পীরাও।
সঙ্গীত শিল্পী হৈমন্তী শুক্লা (Haimanti Sukla) বললেন, "আমাদের সঙ্গীত জগতের একটা খুঁটি ভেঙে গেল। কিন্তু মনে প্রাণে আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, ওঁর চলে যাওয়াটা আসলে চলে যাওয়া না। গান -বাজনার জগতে ওঁর উপস্থিতি আমরা সব সময়ই মানতে চাইব। এইভাবে এক একটা নক্ষত্র পতন হচ্ছে। কিন্তু ওঁর চলে যাওয়াটা একেবারে অন্য রকম। সরস্বতী পুজোর বিসর্জনের সময় এই ঘটনাটা ঘটল। আমি মনে করি মায়ের বিসর্জন হয় না। এখানেও তাই ভাবব, আমাদের মনে ও থাকবে।"
সুর সম্রাজ্ঞীর প্রয়াণের খবর আজতক বাংলার থেকেই জেনে রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়লেন সঙ্গীত শিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত (Swagatalakshmi Dasgupta)। তাঁর জীবনের সঙ্গে 'লতা জি' ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। নিজেকে কিছুটা সামলে শিল্পী বললেন, "কী প্রতিক্রিয়া দেব, ঠিক বুঝতে পারছি না। লতা মঙ্গেশকর আমার জীবন জুড়ে আছেন। গানটাই আমার জীবনে বেঁচে থাকার মূল কারণ। সেই সমস্ত জায়গা জুড়েই উনি আছেন। ছোটবেলায় বাবাকে বলতাম, গান করব না, লতা মঙ্গেশকরের মতো তো হতে পারব না... এভাবেই শুরু। যারা আমায় খুব কাছে থেকে জানেন, তাঁরা জানেন আমি সকালে আড়াই -তিন ঘণ্টা ওঁর কাছে গান শিখি। গান শিখি মানে, রেকর্ড চলে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুনি কীভাবে সুর লাগিয়েছেন...সেটা শুনেই আমার মনের ভিতরটা ঠাণ্ডা হয়। ওঁকে কোনও সময় যেতে দিতেই হত। যেমন বাবা-মাকে যেতে দিতে হয় একটা সময়। চেষ্টা করছি নিজেকে সামলাতে। উনি ঈশ্বরী ছিলেন, সরস্বতীই ওঁকে নিয়ে চলে গেলেন।"
সঙ্গীতশিল্পী শ্রাবণী সেনের (Sraboni Sen) কথায়, "কাল থেকেই শুনছিলাম সংকটজনক, কিন্তু ঘটনাটা যে এত তাড়াতাড়ি হবে তা বুঝতে পারিনি। একটা যুগের অবসান। এই ধরণের মানুষদের ক্ষেত্রে আমাদের সব সময় মনে হয়, তাঁদের যেন মৃত্যু না হয়। উনি গান না করলেও, আমরা চাই আমাদের মধ্যেই থাকুন...কিন্তু বাস্তবে তো সেটা হয় না। ওঁর অসাধারণ সব বাংলা গান আছে। প্রচুর গান গেয়েছেন...হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরীর সঙ্গে গান গেয়ে একেবারে মাতিয়ে দিয়েছেন বাঙালিদের। ওঁর সব ভাষাতেই গান শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে গেছে। চলে গেলেন...ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি। সুরলোকে গিয়ে নিশ্চই শানিতে থাকবেন, ভাল থাকবেন।"
সঙ্গীতশিল্পী মনোময় ভট্টাচার্য (Manomoy Bhattacharya) বললেন, "খবরটা শোনার পর থেকেই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। একটা কথাই বলব, পৃথিবীর সঙ্গীত যতদিন থাকবে, লতা মঙ্গেশকর আমাদের মধ্যেও ততদিন থাকবেন। তাঁর মত একজন সঙ্গীত শিল্পী বোধ হয় সহস্রাব্দেও আসে না। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি...যেখানেই থাকুন, খুব ভাল থাকুন।"
প্রায় এক হাজারের বেশি ছবিতে গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। ভারতের ৩৬ টি আঞ্চলিক ভাষাতে ও বিদেশি ভাষাতে গান গাওয়ার রেকর্ড একমাত্র তাঁরই। এত দীর্ঘ সময় ধরে কেরিয়ারে, নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। ভারতরত্ন, পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মানে তাঁর ঝুলি ভরা রয়েছে।