বাংলা জীবনমুখী গান মানেই যার কথা সবার আগে মাথায় আসে, তিনি হলেন নচিকেতা চক্রবর্তী। নয়ের দশকের তাঁর সব গান আজও হিট। বয়স নির্বিশেষে নচিকেতার গান থাকে সব সময় বাঙালি শ্রোতাদের প্রিয় প্লে-লিস্টে। নচিকেতা, একাধারে গায়ক, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে মন জয় করেছেন অসংখ্য মানুষের। প্রায়ই শিরোনামে আসেন তিনি। এই মুহূর্তে ফের তে আলোচনায় সঙ্গীতশিল্পী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তাঁর নাম। হঠাৎ কী হল? আসলে এই চর্চার শুরু সম্প্রতি সিধুর নচিকেতাকে নিয়ে করা কিছু মন্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর থেকে।
অভিনেতা সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের 'টাইম অ্যান্ড টাইড পডকাস্ট'-এ অতিথি হয়ে হাজির হয়েছিলেন সিধু। সেখানেই আড্ডার মাঝে তিনি মন্তব্য করেন, নচিকেতার গান 'ইনফ্লুয়েন্সড'। এই ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে এই নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। নচিকেতাকে নিয়ে ঠিক কী বলেছেন সিধু? আলোচনায় কথায় কথায় উঠে আসে নচিকেতার প্রসঙ্গ। সৌরভ বলেন, নচিকেতার মতো শিল্পীরও দু-একটি গান 'ইনফ্লুয়েন্সড।' একথা শুনে, সিধুর মন্তব্য, "দু-একটার বেশি। এটুকু বলতে পারি।"
এই প্রসঙ্গে কথা বলতে বলতে নচিকেতার সুপারহিট গান 'রাজশ্রী' ও 'নীলাঞ্জনা ১'-র কথা উল্লেখ করেন সিধু। বাংলাদেশি ব্যান্ড ফিডব্যাকের গান থেকে যে নচিকেতা অনুপ্রাণিত হয়েছেন, নিজেই গান গেয়ে সেকথা বোঝান শিল্পী। সিধু আরও জানান, নচিকেতার 'নীলাঞ্জনা ৩'-ও স্প্যানিশ গান থেকে 'ইনফ্লুয়েন্সড'।
এরপরই সিধু অঞ্জন দত্তের গানের কথা উল্লেখ করে বলেন, "অঞ্জন দত্ত কি সুর নেয়নি? অঞ্জন দত্তও নিয়েছেন।' একথা শুনে সঞ্চালক সৌরভ বলেন, 'অঞ্জন দত্ত বোধ হয় বলে নিয়েছিলেন।' শুনে সিধুর মন্তব্য, 'একদমই। আমার পয়েন্ট হচ্ছে সেটাই যে, আমার একটা সুর ভাল লাগতেই পারে এবং এতটাই কোনও সুর প্রিয় হয়ে যায় যে, অনেক সময় মনে হয় এটা নিয়েই কাজ করি বা ভিতর থেকে কয়েকটা বাংলা লাইন চলে আসে। সেটা ঠিক আছে, কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু সেটা একটা স্বীকারোক্তি করতে কী অসুবিধা আছে? ক্যাসেট হোক বা রিলিজ হোক, আগে ক্যাসেট রিলিজ হত, এখন ডিজিটাল মাধ্যমে রিলিজ হয়। সেটা একটা উল্লেখ করে দিতে তো কোনও অসুবিধা নেই যে, এই গানটা ওঁর দ্বারা আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। এটা বলার মধ্যে আমার মনে হয় কোনও দুর্বলতা তো নেই, বরং এটা ভাবমূর্তিকে অনেকটা স্বচ্ছ করে দিতে পারে। এই একটা লাইন কেন আমি বলব না?"
কিছু মাস আগেও আলোচনায় ছিলেন নচিকেতা। অভিযোগ উঠেছিল, এক মিশরীয় গানের সুর নিয়ে তৈরি হয়েছে তাঁর জনপ্রিয় 'রাজশ্রী' গানটি। এমনকী 'হুবহু টুকে', কোনও কৃতিত্ব দেননি শিল্পী। এপ্রসঙ্গে বাংলা ডট আজতক ডট ইন- এর তরফে যোগাযোগ করা হয় নচিকেতা চক্রবর্তীর সঙ্গে। সেসময় বিরক্ত হয়ে অভিযোগকারীর দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন গায়ক। তিনি বলেন, "রবীন্দ্রনাথকেও জিজ্ঞেস করেছেন একই প্রশ্ন? ওঁর 'পুরনো সেই দিনের কথা', 'ফুলে ফুলে ঢোলে ঢোলে' এসব গান নিয়েও নিশ্চয় প্রশ্ন করেছেন! কপি তো হয়েছে বহু গান, তাতে কী হয়েছে? একটি বিদেশি গান থেকে অনুপ্রাণিত হতে পারে না কেউ? 'কৌন হ্যায় যো স্বপ্নো ম্যায় আয়া' এই এভারগ্রিন গানটাও তো একটা বিদেশি গানের থেকে অনুপ্রাণিত। এরকম প্রচুর গান কপি করা হয়। আমি আবারও একই কথা বলছি। এটা ২৫ বছর আগের একটা গান। তাহলে একবার রবীন্দ্রনাথকে জিজ্ঞেস করে দেখলে ভাল হয় না, উনিও কি চুরি করেছেন নাকি অনুপ্রাণিত হয়েছেন?"
নয়ের দশকে 'নীলাঞ্জনা', 'একদিন ঝড় থেমে যাবে', 'অনির্বাণ', 'অ্যাম্বিশন', 'যখন সময় থমকে দাঁড়ায়', 'বৃদ্ধাশ্রম'-র মতো গানগুলি আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৯৮ সালে প্রকাশ্যে আসে নচিকেতা চক্রবর্তীর 'আমিই পারি' অ্যালবামটি। 'সরকারী কর্মচারী', 'নীলামে উঠছে দেশ', 'কফি হাউজ', 'বাসবেই ভালো' থেকে শুরু করে 'রাজশ্রী', সেই সময় একের পর এক সুপারহিট গান গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেন শিল্পী।