২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের এক্স=প্রেম জীবনটা আমূল পরিবর্তন করে দেয় খিলাদ থুড়ি অনিন্দ্য সেনগুপ্তের। রাতারাতি স্টারডম যেন ছুঁয়ে ফেলে অভিনেতাকে। অত্যন্ত সাধারণ এক ছেলে যে ক্রমেই অসাধারণ হতে চলেছে। খ্যাতি-জনপ্রিয়তার আড়ালেও এখনও নিজের শিকড়কে ভোলেননি তিনি। মিডলকাস্ট মানসিকতাকে নিয়েই আগামীদিনে টলিউডে নিজের পরিচয় তৈরি করতে চান অনিন্দ্য। সম্প্রতি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অকপট কথা বললেন অভিনেতা।
এক্স=প্রেম-এর জন্য ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড সেরা ডেবুট, কেমন লাগছে?
অনিন্দ্য: সারিয়াল। এ রকম কোনও অনুভূতি এর আগে কোনওদিন হয়নি। প্রথম ফিল্মফেয়ার প্রথম বড়পর্দায় কাজ। আমার ঘরে ব্ল্যাকলেডি এসেছে। নমিনেশন পেয়েছিলাম কিন্তু কোনও আশা না নিয়েই গিয়েছিলাম ইভেন্টে। এরপর যখন আমার নাম ঘোষণা করে তখন আমি থমকে যাই। বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম কিছুক্ষণের জন্য।
এক্স=প্রেম অনিন্দ্যর জীবন কতটা বদলেছে?
অনিন্দ্য: এই সিনেমা আমার মধ্যবিত্ত জীবন যে বদলে দিয়েছে সেটা নয়। মিডল ক্লাস মেন্টালিটিকে বদল করতে পারেনি। তবে সার্বিকভাবে লাইফটা যে দিকে প্রগ্রেস করছিল, সেটা কিছুটা চেঞ্জ তো হয়েছে। কারণ এই তথাকথিত স্টারডম কখনও তো আশা করিনি, তাই গত বছরের পরে অবশ্যই আমার জীবনটা অনেকটাই বদলেছে।
এক্স=প্রেম-র অডিশনের সময় কোনও উল্লেখযোগ্য ঘটনা
অনিন্দ্য: ২০১৯ সালে শ্যুটিং হওয়ার পর ২০২০ সালে যখন ট্রাইকাপটা মুক্তি পেল, হইচই থেকে তখন আমায় বলা হল যে আমার কাজের খুব প্রশংসা হচ্ছে, তখন ভেবেছিলাম যে চাকরিটা ছেড়ে হয়ত ঠিকই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরপর মহামারি শুরু হয়, সেই সময় আশঙ্কায় ভুগছিলাম ঠিকই, তখন সৃজিতদা ফোন করে মহামারির প্রথম আনলক ফেজে এবং আমায় বলে যে অতি উত্তম সিনেমায় আমি মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছি। যাই সৃজিতদার কাছে শুনি। অতি উত্তম-এর শ্যুটিং হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে। এরপর অতি উত্তম-এর যখন ডাবিং চলছে এপ্রিল মাসে সেই সময় এক্স প্রেম নিয়ে কথাবার্তা হয়। তার আগেই অবশ্য সৃজিতদা আমায় এই সিনেমার কাস্ট নিয়ে জানিয়েছিলেন যে আমাদের প্রজন্মের কেউ চেনা জানা আমার আছে কিনা। আমি চরিত্রটা শুনে অনেকজনকে রেফারও করেছিলাম। এরপর সেটা নিয়ে আর কথা হয়নি। অতি উত্তম-এর ডাবিং-এর সময় সৃজিত দা বলেন যে খিলাদ চরিত্রের জন্য আমি যেন এসে অডিশন দিই। আমি মজার ছলে গিয়েই অডিশন দিই। এর একমাস বাদে সৃজিতদা জানান যে আমি করছি খিলাদের চরিত্র।
টলিউডে নিজের জায়গা করে নিতে অনিন্দ্যর ইউএসপি কী
অনিন্দ্য: আমি নিজে দর্শক হিসাবে যে গ্ল্যামারটা দেখতে পছন্দ করি, আমি একদম মেইন স্ট্টরিম মশালা ছবি পাঠান থেকে শুরু করে লগে রহো মুন্না ভাই, ইয়ে জওয়ানি হ্যয় দিওয়ানি থেকে আলিগড়, আমি সব দেখতে পছন্দ করি, চেষ্টাও করি তেমনি আমি সুযোগ পেয়েছি থ্যাঙ্কফুলি, আমি এক্স=প্রেম, খোলামকুচি, হস্টেল ডেজ আবার নীহারিকা, খুব ভিন্ন ধরনের চরিত্র পেয়েছি। আমি মেইন স্ট্রিম যেমন পেয়েছি আবার অন্য ধারার সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগও পেয়েছি। সম্প্রতি একটা সিনেমার শ্যুট শেষ করলাম আমি, তনুশ্রী দি ও কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় অভিনীত একটা ফেস্টিভ্যালের জন্য ছবি। আমি অ্যাকশন ছবিও করতে চাই। হিন্দি, মারাঠি বা দক্ষিণ ভারতের মতো বাংলাতেও সেই সুযোগ আছে যে একজন হিরো অ্যাকশন সিনেমা করার পরও অন্য ধারার সিনেমাতেও অভিনয় করতে পারে। আমি জানি না আমার মধ্যে সেই গুণ আছে কিনা, তবে আমি নিজেকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।
স্ত্রীকে নিয়ে কখনও কিছু বলতে দেখা যায়নি, কতটা অবদান রয়েছে তোমার জীবনে?
অনিন্দ্য: আমাদের লাভ ম্যারেজ। আমরা একে-অপরের সঙ্গে জীবন শেয়ার করি। আমার ব্যক্তিগত জীবন থেকে পেশাগত জীবনে আমার ৫০ শতাংশ অবদান হলে তাঁরও ৫০ শতাংশ অবদান রয়েছে। আমি যেহেতু লাইমলাইটে সর্বদাই থাকি তাই আমার জীবনে আমার স্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে একইভাবে তাঁর কেরিয়ার টাও আমার কাছে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একে-অপরকে অনুপ্রাণিত করি যাতে দুজনের কর্মক্ষেত্র এগিয়ে যায়। চাকরি ছাড়া থেকে এখনও পর্যন্ত আমার স্ত্রী আমার পাশে রয়েছে।
আরও পড়ুন: 'আমার শাড়িতে এখনও বেবি স্মেল', মেয়েকে নিয়ে আদুরে পোস্ট স্বস্তিকার
কী খেতে ভালোবাসো?
অনিন্দ্য: মানুষ ছাড়া সব খেতে ভালোবাসি। তবে প্রিয় খাবার যদি বল তাহলে বাঙালি খাবার। আমি চাইনিজ, মোগলাই সবই খাই কিন্তু আমায় যদি টানা পাঁচদিন ভাত-ডাল না গিয়ে রেখে দাও তবে আমার কষ্ট হবে। আমার কমফোর্ট ফুড হল ভাত-ডাল। ভাত আমি দিনে চারবেলা খেতে পারি।
মন খারাপ হলে কী কর?
অনিন্দ্য: মন খারাপ হলে সিনেমা দেখি, খেলতে চলে যাই, খেলা দেখি বা কোনও গান শুনলাম। আর ভালো খাবার পেলে তো সঙ্গে সঙ্গে মন ভালো হয়ে যায়।
ড্রিম চরিত্র কী তোমার?
অনিন্দ্য: আমি বিভিন্ন ধরনের চরিত্র করতে চাই। আইকনিক চরিত্র ট্যাক্সি ড্রাইভার থেকে ট্রাভিস বিকেল যেটা রবার্ট ডে নিরো করেছিলেন আর ওয়াসিপুর থেকে মনোজ বাজপেয়ির করা চরিত্রটি সর্দার খান যেটা করেছেন এবং মনোজ বাজপেয়ির আলিগড়। এই তিনটে চরিত্র আমি করতে চাই। একজন যে অভিনয় ভালোবাসেন সে এই চরিত্র তিনটে করতে চাইব।
আরও পড়ুন: নাকে ব্যান্ডেজ নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাঞ্চনা, কী হল অভিনেত্রীর
কোনও একটা বদভ্যাস যা বদলাতে চাও
অনিন্দ্য: আমার ঘনিষ্ঠ যাঁরা তাঁরা অনেকগুলোর কথা বলবে কিন্তু আমার কাছে যেটা মেজর সেটা হল স্মোকিং। আমি হেভি স্মোকার। আমি এটা ছাড়তে চাই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পাল্টে উঠতে পারিনি।
হিংসে হয় কাউকে দেখে
অনিন্দ্য: আমার জেনারেশনের সত্যম বা সুহোত্রর ভালো কিছু দেখলে আমি অনুপ্রাণিত হই। কেউ দুধর্ষ কাজ করলে আমার মনে হয় আমাকেও আরও ভালো কাজ করতে হবে। তাঁকে পেরিয়ে যাওয়া কিন্তু নয়। আমরা যদি সার্বিকভাবে একে-অপরকে সাহায্য করতে পারি, অনুপ্রাণিত করতে পারি তবে হয়ত ইন্ডাস্ট্রির সার্বিক উন্নতি হবে। তবে পেশাটাই এমন তাই কোনও কোনও জায়গায় সুপ্ত নিরাপত্তাহীনতা থাকে। চেষ্টা করি সেই বাবলটার মধ্যে না ঢুকে থাকা।
অভিনেতা না হলে...
অনিন্দ্য: কেরিয়ারের প্রথম দশ বছর সঞ্চালনা করেছি তাই সেটাই হয়ত করতাম। আর তা না হলে ফুটবলার হতাম।
আরও পড়ুন: Srabanti Chatterjee: জিমের সাবস্ক্রিপশনের টাকা হাতিয়ে গায়েব শ্রাবন্তী, প্রতারণার অভিযোগ দায়ের
কোন কোন সিনেমা রয়েছে হাতে
অনিন্দ্য: এখন আমার হাতে রয়েছে নীহারিকা (ফেস্টিভ্যাল মুভি), অতি উত্তম আপাতত এই দুটো সিনেমা। যা শীঘ্রই মুক্তি পাবে।
অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পরের মুহূর্ত কেমন ছিল?
অনিন্দ্য: এটা একটা এমন মুহূর্ত ছিল যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমার আপনজনেরা, বন্ধুরা সকলেই ফোন করেছিল কিন্তু ধরতে পারিনি। চেয়েছিলাম এই মুহূর্তটা নিজের সঙ্গে কাটাতে তাই করেছি। অবশ্যই পাশে ছিল আমার স্ত্রী।