যে কোনও দেশ বা সমাজকে উপলব্ধির জন্য তার লোকসংস্কৃতিকে সম্যক ভাবে জানা বিশেষ প্রয়োজন। বাংলার ধর্মীয় 'ব্রতকথা' বা 'ব্রতপালন' শুধুমাত্র মেয়েদের আচার-অনুষ্ঠান নয়। এই ব্রতকথাগুলোর মধ্যে দিয়ে প্রকট হয়ে ওঠে বাংলার গ্রাম জীবন, সমাজ জীবন, সংস্কৃতি, সর্বোপরি বাংলার ইতিহাস।
বারো মাস ধরেই মেয়েদের এই ব্রতকথা পালন, আমাদের মনে করিয়ে দেয় বাঙালিদের বারো মাসে তেরো পার্বণের কথা।
বাঙালি মেয়েদের কাছে এর বিশ্বাসযোগ্যতা ভীষণ দৃঢ় এবং প্রকট। যুগ যুগ ধরে এই ব্রতকথার মাহাত্য প্রচার হয়ে আসছে সনাতন ধর্মের হাত ধরে।
প্রাথমিক ভাবে মনে হ'তেই পারে যে ধর্মীয়-চেতনা উদ্রেক করাই এই ব্রতকথাগুলোর উদ্দেশ্য। কিন্তু গভীরে তলিয়ে দেখলে দেখা যায়, ব্রতকথাগুলোর মধ্যে একই সঙ্গে কী সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে গ্রামীণ বাংলার করুণ দারিদ্র্য, নদী মাতৃক বাংলার সর্প-সঙ্কুল জনজীবনের আতঙ্ক-অসহায়তা।
বৃষ্টিবিহীন কিংবা অতিবৃষ্টি-আক্রান্ত বাংলায় মন্বন্তরের তীব্র হাহাকার, দুর্বলের প্রতি বিত্তবানের চিরকালীন অত্যাচার, অর্থহীনতায় সাধারণ মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রণা।
আবার, পূর্ণফসল-গোলার কৃষক বধূর ছোটো ছোটো স্বপ্ন, তার স্বপ্নপূরণের আনন্দ, ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হৃদয় পরিবর্তন, সমাজে নারীর অবস্থান, কুলীন প্রথায় দীর্ণ সমাজে সপত্নী নিয়ে সংসারের সুখ-দুঃখ।