সময় পাল্টেছে, সময়ের দাবিও পাল্টেছে। সেই দাবি মেনেই এবার অভিনব প্রচার করছে হাল্লা গাড়ি। জোট প্রার্থীদের সমর্থনে শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে সময়ের কথা, মানুষের দু্র্ভোগের কথা বলার চেষ্টা করছেন সৌরভ পালোধি, সৈকত ঘোষ-রা। গণনাট্য এবং গণ সঙ্গীতের মার্গ ছেড়ে এমন প্যারডি-প্রচারে সাড়া পাচ্ছেন? 'আমরা যারা হাল্লা গাড়ির প্রচার করছি তারা যে কোনও সময় ৩৫টা গণ সঙ্গীত শোনাতে পারি। আপনারা প্রচার করবেন তো? আমিই বলে দিচ্ছি করবেন না। হাল্লা গাড়ির প্রচার কিন্তু বহু মিডিয়া কভার করতে উৎসাহ দেখাচ্ছে। দেখাচ্ছে যে তার কারণ এর মধ্যে অভিনবত্ব রয়েছে। অনেকে ভাবতে পারেন প্যারডি এবং টুম্পা সোনা দিয়ে সস্তার প্রচার হয়ে যাচ্ছে। আমি তাঁদের বলব, প্রচার হয় ইস্যু নিয়ে। সেই ইস্যুকে প্যারডি এবং টুম্পা সোনার সুর এবং টেম্পো দিয়ে তুলে ধরার মধ্যে সস্তা বা দামির কোনও সম্পর্কই নেই।' বলছেন সৌরভ পালোধি। টানা দু' দিন প্রচারের পর আজ একটু বিশ্রাম দিয়েছেন নিজেদের গলাকে। ১২টা জায়গায় খালি গলায় গান গেয়ে প্রচার করতে ধকল রয়েছে তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। বিশ্রাম নিয়ে আগামী প্রচারের জন্য তৈরি হচ্ছে হাল্লা গাড়ি।
সাড়া কেমন পাচ্ছেন, প্রশ্নের উত্তরে সৌরভ জানান, এই ২ দিনে তিনি এত ফোন রিসিভ করেছেন, যা সারা জীবনেও করেননি। সৌরভের কথায়, 'জেলা থেকে এত ফোন আসছে প্রচার করার অনুরোধ নিয়ে বলে শেষ করতে পারব না। রাস্তায় অনুষ্ঠান করতে গিয়ে এত রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা কোনও দিন ভোলার নয়। দুজনের বিষয় এ ক্ষেত্রে না বললেই নয়। গড়িয়ায় থাকেন এক ভদ্রলোক। আগে অটো চালাতেন। একা থাকেন, কোন ক্রমে চলে যায় তাঁর। তিনি হাল্লা গাড়ির জন্য ১০০ টাকা দিয়েছেন। এটা বাঁধিয়ে রাখার মতো। গত কাল কসবায় রিক্সা চালাতে চালাতে এক ভদ্রলোক থেমে পুরোটা শুনে আমাদেরই এক সদস্যের হাতে ৫০ টাকা দিয়ে বলেছেন, তোমরা কিছু খেও। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, শিক্ষকরা আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতগুলো ছেলেমেয়ে অনুষ্ঠান করছে তারা যেন একটু ভালো খেতে পারে, তেলের টাকাটা যেন উঠে যায়, এই ভেবেই বহু মানুষ সাহায্য করছেন। এটা বিরাট পাওনা। যে প্রার্থীদের অঞ্চলে প্রচার করছি তাঁরাও সাহায্য করছেন। এখন ভাবা ছেড়ে দিয়েছি। কোথা থেকে টাকা আসবে, কী ভাবে প্রচার করব এ সব আর ভাবি না। ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত এই প্রচার চালাব। ভিক্ষে করে হলেও যাতে জ্বালানির টাকা এবং ছেলেমেয়েগুলোর খাবার টাকা উঠে আসে সেটা করব।'
সৌরভ মনে করেন, শিল্পী মাত্রেই যিনি যে রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, তাঁর সেই বিশ্বাস থেকে আলাদা কাজ করা উচিত। কিন্তু সময়ের অভাবে হয়তো সেটা করে উঠতে পারছেন না। তিনি স্বীকারও করে নিচ্ছেন, যদি আরও আগে থেকে এমন প্রচার চালানো হত, হয়তো ভোটে তার প্রভাব আরও বেশি হত। সৌরভ বলেন, 'এখন তো আইডিওলজি ছাড়া শিল্পীরা রাজনীতি করেন, আমি তাঁদের কথা বলছি না। যাঁদের একটা আইডিওলজি রয়েছে তাঁরা নিজেদের শিল্প ভাবনার সঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্বাসকে মিলিয়ে কাজ করবেন। এটাই তো শিল্পীর কাজ। মৃণাল সেন তো জানাতে ভালোবাসতেন তিনি কোন মতবাদে বিশ্বাস করেন। আমরাও সেটা করি। আমার পলিটিকাল অবস্থান আমি লুকোব কেন, একদমই লুকোব না। আগামী দিনে চেষ্টা করব যাতে এ ভাবে রাস্তায় নেমে কাজ করতে পারি। তবে এতটা হয়তো পারব না। অন্য ভাবে, অন্য কিছু ভাবতে হবে। কিন্তু কাজ বন্ধ করব না।'
সৌরভের মতে, অনেকে বামেদের ৭ শতাংশ ভোট নিয়ে খিল্লি করেন। তবে সেটা তিনি এটাকে দেখছেন ভোটার এবং ফ্লোটার এই দুই ভাবে। তিনি বলেন, 'এই ৭ পারসেন্ট কিন্তু ইডিওলজিকাল ভোটার। বাকিটা ফ্লোটার। এরা চিরকালই ছিলেন। বামেদের ভোট থেকে মাইগ্রেট করে তৃণমূলে ভোট দিয়েছেন। মাঝে একটা সময় ছিল যখন তৃণমূল আর ভালো লাগছে না এবার বিজেপি আসুক। এখন তাঁরা দেখছেন বিজেপির ১০০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৭৯ জনই প্রাক্তন তৃণমূল। ফলে তাঁরা বিকল্প হিসাবে আর কোথায় যাবেন। আমার বিশ্বাস এবার তাঁরা জোট প্রার্থীদেরই ভোট দেবেন। কারণ তৃণমূলের বিকল্প বিজেপি হতে পারে না। শুধুমাত্র ভোটে জিতব বলে মানুষের টাকার গুষ্টির তুষ্টি করে রিপাবলিক বাংলা চ্যানেল করব, এই যদি জেতার পদ্ধতি হয় তা হলে বলি আমরা শ্রমজীবী ক্যান্টিনটাই করব। মানুষের মুখে অসময়ে অন্ন তুলে দেব। মানুষ যখন এটা বুঝবেন তাঁরা নিজেরাই আমাদের ফিরিয়ে আনবেন।'
জেতার বিষয়ে কতটা আশাবাদী? '১০০ শতাংশ আশাবাদী। একটা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন প্রার্থনা করছি। যদি সেটা হয় আমি নিশ্চিত এ বার জোট সরকার পশ্চিমঙ্গে ক্ষমতায় আসবে।' বলছেন সৌরভ।