অনেকে বলেন দেবী সরস্বতী অধিষ্ঠান করেন তাঁর কন্ঠে। তিনি নতুন করে যেন কীর্তন প্রেমী করেছেন সমস্ত বয়সের মানুষকে। কীর্তন অন্য মাত্রা পায় তাঁর গলায়। সেই রাইকিশোরী অদিতি মুন্সি, লক্ষ্মী পুজোর আগের দিন পুজোর প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ততার মাঝেই খোলামেলা আড্ডায় 'আজতক বাংলা'-কে জানালেন অনেক কথা।
আজতক বাংলা: লক্ষ্মী পুজোর কী কী প্রস্তুতি চলছে?
অদিতি: অন্যান্যবার আমাদের বাড়িতে খুব বড় করে লক্ষ্মী পুজো করা হয়। কিন্তু এই বছর কোভিড পরিস্থিতির জন্যে খুব ঘরোয়া ভাবে পুজো করা হবে।
তুমি নিজে কী কী কাজ করছো?
বাড়ির লোকেরা সাহায্য করছে আমায়। তবে পুজোর বেশিরভাগ কাজই আমি নিজের হাতে করছি।
পুজো কী ভাবে কাটালে?
পুজোতে পরিবারের সঙ্গেই কাটিয়েছি। খুব নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে পুজো হয়, শুধুমাত্র সেখানে গিয়েছি।
পারফর্ম্যান্সের ধারা এখন বদলে গিয়ে ডিজিটাল কনসার্টে পরিণত হয়েছে। কী ভাবে দেখছো বিষয়টাকে?
আমরা কেউই এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না একদমই। বিশেষ করে লকডাউন, প্যান্ডেমিক এই কথাগুলো তো আগে আমরা শুনিনি কখনও। যে গতিতে আমাদের জীবনযাত্রা এগোচ্ছিল তার ছন্দপতন ঘটেছে নিঃসন্দেহে।
সিনেমা হল খুলেছে কিন্তু গানের অনুষ্ঠান চালু হয়নি সেই অর্থে। কী বলবে?
লাইভ গানের অনুষ্ঠানে অনেক ক্ষেত্রে দর্শকদের সামলানো সম্ভব হয় না জানি। কিন্তু শুধুমাত্র গান-বাজনার সঙ্গে যারা সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন তাঁরা নয়, যে সমস্ত শিল্পীরা এই জগতের সঙ্গে পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন তাঁরাও অনেক কষ্টে রয়েছেন। অন্তত তাঁদের কথা ভেবে কিছু একটা ব্যবস্থা করা উচিত।
তোমার মায়ের কাছে গানের হাতেখড়ি। এরপর জীবনে এই জায়গায় পৌঁছাতে কোনও বাধা-বিপত্তি পেরোতে হয়েছে?
আমি পরিবারকে সব সময় আমার পাশে পেয়েছি তাই কোনও বাধাই আমার সেই ভাবে বাধা বলে মনে হয়নি।
হঠাৎ করে কীর্তন কেন বেছে নিলে?
এটা কিন্তু হঠাৎ করে ওই ভাবে বেছে নেওয়া নয়। আমি যে পরিবারে বড় হয়েছি সেখানে আমাদের বাংলা সংস্কৃতিকে খুব প্রাধান্য দেওয়া হয়। সেই জায়গা থেকেই আমি ছোটবেলা থেকে বাড়িতে রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুলগীতি, কীর্তন এই সমস্ত শুনেই বড় হয়েছি। কেউ খুব দ্রুত গান পছন্দ করেন, কেউ আবার মেলোডি। যখন পদাবলী সঙ্গীতের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হল, আমার মনে হল এই ধরনের গান গাইতে আমার বেশি ভালো লাগছে। এবং আমি যখন বাড়িতে এই ধরনের গান গাইতাম আমার পরিবারের লোকজনও আমার থেকে এই গান শুনতে খুব পছন্দ করতেন। আর এই ভাবেই আমার কীর্তনের প্রতি ভালো লাগা আরও বেড়ে উঠেছে। তবে সেই সময় কখনই এটা আমার মাথায় ছিল না যে আমি এত মানুষকে এটা শোনাতে পারবো এবং এটাই আমার পেশা হবে।
এই মুহূর্তে কী ধরনের কাজ করছো?
আমি অনেকগুলো মেগা সিরিয়ালের কাজ করেছি এরই মধ্যে। যেমন 'কৃষ্ণকলি', 'কাজল লতা', 'লক্ষ্মী', 'রানী রাসমণি'। এছাড়াও 'গোত্র' ছবির মাধ্যেমে আমার প্রথম বড় পর্দার প্লেব্যাক করা। তার সঙ্গে কিছু সিঙ্গেলস রয়েছে। এইরকমই যারা আমার গান পছন্দ করছেন তাঁদের জন্য অনেকগুলো কাজ করছি।
কীর্তনের বাইরে অন্য কোনও জঁনারের গান বড় পর্দার জন্যে অফার পেলে, করবে?
সুর ও তালে গেয়ে দেওয়াটাকে আমি গান বলে মনে করি না। কোনও গানকে ছোটো না করে বলছি, আমি যদি একটি হিন্দি মেলোডি গান গাই, হয়তো গানটা সঠিক সুর ও তালে গেয়ে দিতে পারবো। কিন্তু কীর্তনে আমি অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। সত্যি কথা বলতে গেলে অন্য ধরনের গান গাওয়ার জন্যে আমার কাছে বড় পর্দার অনেকগুলো কাজের অফারও এসেছিল। কিন্তু আমার নিজেই মনে হয়েছে, অন্য ধরনের গানের সঙ্গে আমি সেভাবে ন্যায় বিচার করতে পারব না।
তুমি নিজে রিয়ালিটি শো থেকে উঠে এসেছো। অন্যান্য এতগুলো রিলিটি শো থেকে এত ট্যালেন্ট একসঙ্গে বেরোচ্ছে। কোথাও গিয়ে ভয় লাগে না নিজের জায়গা নিয়ে?
আমার মনে হয় গান বাজনা কম্পিটিশন করে হয় না। আমার এই ধারণাটাই নেই যে কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমাকে গান গাইতে হবে। আমি নিজের ভালো লাগার জন্য গান গাই। এবং সেই ভালোলাগার গান গুলোকে মানুষ শুনতে পছন্দ করেন। তাঁরা আমাকে আশীর্বাদ করেন। আমার কাছে এটাই প্রাপ্তি। এবং আমি বিশ্বাস করি যতদিন পর্যন্ত আমি আমার গান-বাজনার প্রতি ১০০ শতাংশ দেব, ততদিন পর্যন্ত মানুষের ভালোবাসা আমি পাবো। আমি সবসময় মেনে চলি, অমুক কিংবা তমুক ব্যক্তির সঙ্গে আমি যদি প্রতিযোগিতায় নামি, তাহলে গান বাজনাটা আর হবেনা। ফোকাসটা নষ্ট হয়ে যাবে।