জঙ্গলমহল, মাওবাদী প্রেক্ষাপটে আসছে মন্দীপ সাহা পরিচালিত ছবি 'ইস্কাবন' (Iskabon)। রাজনীতির পাশাপাশি এক ত্রিকোণ প্রেমের গল্প বলবে এই ছবি। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন সৌরভ দাস, অনামিকা চক্রবর্তী ও সঞ্জু। আগামী ১৭ জুন মুক্তি পাবে 'ইস্কাবন'। মাওবাদী এলাকায় শ্যুট করার এবং এক সময়ের মাওবাদীদের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন? আজতক বাংলার সঙ্গে শেয়ার করলেন পর্দার 'সত্য' ওরফে সৌরভ দাস (Saurav Das)।
আজতক বাংলা: জঙ্গলমহল, মাওবাদী প্রেক্ষাপটে ছবিতে কাজ করা কতটা কঠিন ছিল?
সৌরভ: কঠিন তো ছিলই। পুরোটাই প্রায় আউটডোর। এরকম কোনও চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে, সেই ভোর থেকে রাত অবধি তাদের মতই থাকতে হয়। কাঠফাটা রোদ্দুর সহ আরও অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে শ্যুটিং করতে হয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে আমার কোনও অভিযোগ নেই। অভিনেতা হিসাবে এই অভিজ্ঞতাগুলোই তো প্রাপ্তি। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিই আমায় অনেকটা সাহায্য করেছে চরিত্রায়নে।
প্রশ্ন: একাধিক রিয়েল মাওবাদী লোকেশনে শ্যুট করার অভিজ্ঞতা কেমন?
সৌরভ: বেলপাহাড়ি তিন -চার বছর আগে পর্যন্ত মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা ছিল। এটা আমি এমন মানুষদের থেকে জানতে পারি, যারা আগে মাওবাদী ছিল। এই ছবিতেও তাঁরা অভিনয় করেছেন। এখানে যে কমিউনিটি দেখানো হয়েছে, সেখানে যারা অভিনয় করেছেন, তাদের অনেকেই আগে মাওবাদী ছিলেন। এটা শোনা মাত্রই আমি ঘেঁটে গিয়েছিলাম। পরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে, অনেক কিছু জানতে পারি। আর একজন অভিনেতা হিসাবে এগুলো ওয়ার্কশপের মতো কাজ করেছে আমার জন্য।
প্রশ্ন: তার মানে আলাদা আর হোমওয়ার্ক করতে হয়নি!
সৌরভ: যে কোনটা অভিনেতারই একটা হোমওয়ার্ক থাকে সেটে আসার আগে। চিত্রনাট্য পড়ার সময়ই ধাঁচ তৈরি থাকে চরিত্রটা সম্পর্কে। কীভাবে কথা বলা, হাঁটা-চলা সবটাই মাথায় চলতে থাকে। আমারও সেরকম ছিল, কিন্তু এটা পরিপূর্ণতা পেয়েছে এই মানুষগুলোর জন্য।
প্রশ্ন: মাওবাদীদের কাহিনি এবং রাজনৈতিক ছবি! অনেকটা ঝুঁকি থাকে তো...
সৌরভ: আমার মনে হয় এই প্রতিটা চরিত্রই তো মানুষ। তাই দর্শকেরা বিভিন্নভাবে রিলেট করতে পারবেন। দু'জন মাওবাদী এবং একজন সিআরপিএফ জওয়ানের যে ত্রিকোণ প্রেম দেখানো হয়েছে, সেই অভ্যন্তরীণ অনুভূতিগুলো প্রতিটা মানুষই বুঝবেন। সেই সঙ্গে যেহেতু পটভূমিটা আলাদা, সেটা আবার আকর্ষণীয় লাগবে।
প্রশ্ন: এই ত্রিকোণ প্রেমের তো আপনিও একটা 'কোণ' ছবিতে। সত্য চরিত্রটা কেমন?
সৌরভ: সত্য একজন মাওবাদী এবং খুব বিদ্রোহী একটা চরিত্র। সে নিজের মতো করে পজেজিভ। সরকারের বিরুদ্ধে সে যা করতে চায়, সেটা নিয়েও পজেজিভ।
প্রশ্ন: সত্যর মতো সৌরভও বাস্তবে কিছুটা বিদ্রোহী?
সৌরভ: মাওবাদীরা নিয়ম ভাঙে। ঠিক সেই মাত্রায় নয় তবে, কিছুটা তো বিদ্রোহী বটেই। বাপ-ঠাকুরদা না থাকা সত্ত্বেও যেভাবে আমায় নিজের জায়গা তৈরি করতে হয়েছে, সেটা বিদ্রোহী না হলে তো হয় না। এক্ষেত্রে আমি সত্যর সঙ্গে অনেকটা রিলেট করতে পারি।
প্রশ্ন: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আদিবাসীরা অনেকে দাবী জানিয়েছে, ছবিটা তাঁদেরও দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। কতটা ভাল লাগা এটা?
সৌরভ: এটা একটা অদ্ভুত ভাল লাগা। এই ছবিটার সঙ্গে ওরা আন্তরিকভাবে যুক্ত। ওরা জানে, এটা ওদের গল্প। আমি ওদের সঙ্গে একমত। শুধু 'ইস্কাবন' কেন, বাংলার প্রতিটা ছবি ওদের দেখা উচিত। ওরাও তো বাংলার অংশ, বিনোদনের সুযোগ কেন পাবে না?
প্রশ্ন: বিধানসভা নির্বাচনের আগে আপনিও রাজনীতিতে যোগ দেন। এই ছবিরও একটা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। অসুবিধা হয়েছে কোনও?
সৌরভ: অভিনেতাদের গায়ে কোনও রঙ লাগে না। একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসাবে, আমি কী চরিত্রে অভিনয় করছি সেটার কোনও সম্পর্ক নেই। সুযোগ পেলে যে কোনও দলের, বড় বড় নেতাদের চরিত্রেও অফার যদি আমি পাই এবং আমার মন হয় চরিত্রটা চ্যালেঞ্জিং, তাহলে অভিনয় করতে রাজি আছি আমি। তাই আমারও কোনও অসুবিধা নেই। এছাড়া আমি রাজনীতির সঙ্গে একেবারে সক্রিয়ভাবে যুক্ত না।
প্রশ্ন: ১৭ জুন আরও একটি বড় বাজেটের ছবি 'আয় খুকু আয়'-ও মুক্তি পাচ্ছে। 'ইস্কাবন' নিয়ে কতটা প্রত্যাশা?
সৌরভ: আমি জানি বুম্বারদার ছবি 'আয় খুকু আয়' আসছে। খুবই ভাল কনটেন্ট। আমি বলব, ওই ছবিটাও দেখুক দর্শক। আবার 'ইস্কাবন'-ও দেখুক। সব ধরনের ছবি দেখুক। আর দুটো ছবিই একেবারে ভিন্ন স্বাদের, ভিন্ন ধর্মী। তাই দর্শকেরা দু'দিন আলাদা আলাদা সময়, দুটো ছবিই দেখুক এটাই চাই।