ছবির ঘোষণা হয়েছিল আগেই। এবার সামনে এল প্রথম লুক। সাদা- কালো ফ্রেমে 'মানিক দা'... যেন ফিরে যাওয়া কয়েক যুগ আগে। তবে এটা সিনেমার মধ্যে সিনেমা। কথা হচ্ছে চলচ্চিত্র পরিচালক অনীক দত্তের (Anik Dutta) পরবর্তী ছবি 'অপরাজিত' (Aparajito) নিয়ে। সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Roy) 'পথের পাঁচালী' (Pather Panchali) তৈরির কিছু নেপথ্য কাহিনি ফুটে উঠবে এই ছবিতে। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্র অপরাজিত রায়ের ভূমিকায় অভিনয় করবেন জিতু কমল (Jeetu Kamal)। অন্যদিকে সত্যজিৎ জায়া, বিজয়া রায়ের ছায়ায় তৈরি বিমলা রায়ের চরিত্রে দেখা যবে অভিনেত্রী তথা তৃণমূল- কংগ্রেসের সভানেত্রী সায়নী ঘোষকে (Saayoni Ghosh)।
আগে কথা ছিল মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করবেন আবির চট্টোপাধ্যায় (Abir Chatterjee)। তবে পরে কিছু সমস্যার জেরে তা পরিবর্তন হয়। লুক সামনে আসতেই হতবাক সকলে। এ যেন অবিকল সত্যজিৎ রায়। সেই স্টাইল, সেই চাহনি, হাতে সিগারেট ধরার ধরন, সবটাই এতটাই নিখুঁত যে, এক নজরে অনেকেই রিল ও রিয়েল লাইফের সত্যজিতকে নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়েন। লুক পারফেক্ট করতে জিতুর গালে ও থুতনিতে প্রস্থেটিক্সের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। মেকআপ করেছেন এবিষয় দক্ষ, সোমনাথ কুণ্ডু (Somnath Kundu)।
এই বছর সত্যজিৎ রায়ের জন্ম শতবর্ষ (Birth Centenary of Satyajit Ray)। মূলত তাঁকে ট্রিবিউট জানাতেই এই ছবি তৈরির কথা ভেবেছেন নির্মাতারা। তবে একই নামের ছবি খোদ সত্যজিৎ রায়ের 'অপু ট্রিলজি' (Apu Trilogy)-র দ্বিতীয় ভাগে ১৯৫৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল। তবে নামে মিল থাকলেও কিংবা 'পথের পাঁচালী' থেকে অনুপ্রাণিত হলেও এটা একেবারেই রিমেক বা কোনও বায়োপিক না এই ছবিi। এর আগে পরিচালক অনীক দত্ত আজতক বাংলাকে জানিয়েছিলেন, "এটা একেবারেই কোনও বায়োপিক না। সত্যজিৎ রায়ের গল্প থেকে এটা সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে মূল যে চরিত্র, তাঁর নাম 'অপরাজিত'। একটা রেফারেন্স থাকলেও 'অপরাজিত'-র সঙ্গে এর কোনও মিল নেই। ঠিক কীভাবে 'পথের পদাবলী' তৈরি হল তা নিয়ে গল্প। এই ছবি নিয়ে বহু দিন আগেই আমার বাবুর (সন্দীপ রায়) সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল।"
অপরাজিত রায়কে কেন্দ্র করেন 'অপরাজিত' ছবির মূল গল্প। 'পথের পদাবলী' নামক একটি ছবি তৈরি করার স্বপ্ন দেখে সে। সেই স্বপ্ন সম্পন্ন হওয়ার আগে নানা বাধা -বিপত্তি ও প্রতিকূলতা নিয়ে ছবির গল্প গেঁথেছেন অনীক দত্ত। তবে ছবির প্রেক্ষাপট পাঁচের দশক। সময়টা ১৯৫৫ সাল। চৌত্রিশ বছরের অপুর মাথায় প্রায় দশ বছর আগে থেকে সিনেমার পোকা নড়াচড়া করতে থাকে। নতুন ধারার ছবি সে তৈরি করবে এমনটাই ইচ্ছে তাঁর। শেষমেশ সে বানিয়ে ফেলে তাঁর জীবনের প্রথম ছবি 'পথের পদাবলী'। তিন বছরের লড়াইয়ের পর সে পায় বিশ্বসেরার পুরস্কার, ঝুলিতে আসে বহু সম্মান - স্বীকৃতি। এই অসাধ্য সাধন কীভাবে ঘটলো, সেই গল্পই অপু একটি সাক্ষাৎকারে বলে। বলা চলে, 'অপরাজিত হচ্ছে' অপুর জীবনের প্রথম সিনেমা 'অপুর পদাবলী' বানানোর আখ্যান।
অনীক দত্ত জানান, “কীভাবে একটি ছবি তৈরি করা যায় সে সম্পর্কে সত্যজিৎ রায়ের সব নতুন ধারণা ছিল। তৎকালীন বাংলা ও ভারতে যে ছবিগুলো তৈরি হচ্ছিল, তা তিনি পছন্দ করতেন না। তিনি এমন একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন যা একেবারে নতুন ধারার। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত নিয়ে তিনি খুব উৎসাহী ও আগ্রহী ছিলেন। 'পথের পাঁচালী' কীভাবে তৈরি হয়েছিল আমি তার বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করছি না 'অপরাজিত' -তে। আমার ছবিতে অপরাজিত রায় ওরফে অপু নামের একটি চরিত্র 'পথের পদাবলী' নামে একটি ছবি বানায়। আমি বোঝাতে চেষ্টা করছি যে, আপনি যদি সত্যিই বিশ্বাস করেন আপনার স্বপ্ন স্বার্থক করার ক্ষমতা আছে, তাহলে আপনি নিশ্চিত সেই স্বপ্নগুলিকে বাস্তবে পরিণত করতে পারবেন। তবে অবশ্যই, আপনাকে স্বপ্ন দেখার সাহস করতে হবে। এটি একটি অনুপ্রেরণামূলক ছবি।"
পরিচালক আরও বলেন, "লুক টেস্টের দিন জিতু যখন মেকআপ রুম থেকে বেরিয়ে আসে, তখন সকলে অবাক হয়ে গিয়েছিল। ওঁকে একেবারে সত্যজিৎ রায়ের মতো দেখতে লাগছিল। সোমনাথ কুণ্ডু, সামান্য প্রস্থেটিক্স ব্যবহার করে বিস্ময়কর কাজ করেছেন। জিতু খুব ভাল কাজ করছে। আমি ওঁকে কিছু পুরানো ছবি দিয়েছিলাম, ও নিজের মতো গবেষণা করেছিল। খুব তাড়াতাড়ি কোনও কাজ ধরে ফেলতে পারে ও।"
ইতিমধ্যেই খুব ভাল প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন পরিচালক। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রী জিতুর ছবি দেখে ভাবেন এটা সত্যজিৎ রায়েরই ছবি। এমনকী সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা একজন শিশু শিল্পী জিতুর লুক দেখে একেবারে হতবাক, বলে জানান পরিচালক।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে বীরভূমে হয়েছে ছবির প্রথম অংশের শ্যুটিং। দ্বিতীয় পর্যায়ের শ্যুটিং হবে আগামী ১৯ নভেম্বর থেকে। শিশির মঞ্চ, নন্দন থেকে শুরু করে কলকাতার অন্যান্য লোকেশনে পড়বে সেট। আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে শ্যুটিং শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে টিমের। ফিরদৌসুল হাসান ও প্রবাল হালদারের নিবেদনে, ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশনের ব্যানারে আসছে এই ছবি। বলাই বাহুল্য দর্শকেরা অপেক্ষা করে থাকবেন বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের এই অনবদ্য সৃষ্টির।