ভালোবাসা ও ভাল রাখার নতুন সংজ্ঞা নিয়ে ১৩ মে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল, শিলাদিত্য মৌলিকের বহু প্রতীক্ষিত ছবি 'হৃদপিন্ড' (Hridpindo)। ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, সাহেব চট্টোপাধ্যায় ও প্রান্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবির খুঁটিনাটি নিয়ে আজতক বাংলার সঙ্গে আড্ডা দিলেন 'হৃদপিন্ড'-র আর্যা ওরফে অভিনেত্রী অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় (Arpita Chatterjee)।
আজতক বাংলা: বহু প্রতীক্ষার পর 'হৃদপিন্ড' মুক্তি পেল, টেনশনে আছেন?
অর্পিতা: এটার টেনশনটা অনেক বেশি। কারণ, ছবির অনেকটা দায়িত্ব আমার ওপর। এছাড়া আমি এতদিন যা কাজ করেছি, তার মধ্যে এই চরিত্রটটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। সব ছবির আগেই টেনশন থাকে, কিন্তু সবটা মিলিয়ে এক্ষেত্রে একটু বেশি।
প্রশ্ন: আর্যা চরিত্রটা থেকে কী প্রাপ্তি হল?
অর্পিতা: সব সময় সব চরিত্রেরই একটা শিক্ষণীয় বিষয় থাকে। যত কঠিন চরিত্র, তত বেশি প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় এবং তা থেকে অভিনেত্রী হিসাবে আরও সমৃদ্ধ হওয়ার একটা জায়গা তৈরি হয়। সেটা অবশ্যই এই চরিত্রের ক্ষেত্রেও ছিল।
প্রশ্ন: পর্দায় দুটো বয়স ফুটে উঠছে... এজন্যে কি চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি?
অর্পিতা: দুটো বয়স একই সময় প্লে করতে হয়েছে। একটা অতীত, একটা বর্তমান এমনটা নয়। একই সময়কালে দাঁড়িয়ে, দুটো বয়স- একটা বাহ্যিক ও একটা অন্তর্নিহিত... এই দুটো দ্বন্দ্ব সারাক্ষণ চলে আর্যার ক্ষেত্রে। সেটা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল।
প্রশ্ন: আলাদা কী কী প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
অর্পিতা: প্রস্তুতি শ্যুটিংয়ের আগেই সবটা নিতে হয়, যেহেতু আমাদের খুব কম সময়ের মধ্যে কাজটা শেষ করতে হয়।এক্ষেত্রে চরিত্রের সঙ্গে যতটা ন্যায্য বিচার করা যায়, সেটাই চেষ্টা করেছি। এই চরিত্রের জন্য আমার চেহারা কিছুটা ভাঙতে হয়েছিল। প্রায় দু'মাসের একটা প্রস্তুতি পর্ব ছিল। ওজন কমানোর জন্য স্পেশাল ডায়েট মেনে চলেছি।
প্রশ্ন: বিভিন্ন ছবিতে ইচ্ছে করেই নিজেকে ভাঙতে চাইছেন, ভিন্ন চরিত্রে?
অর্পিতা: সব সময়ই সেটা চেষ্টা করেছি। চিত্রনাট্য, গল্প, পরিচালকের সঙ্গে সমীকরণ এই সবটা দেখেই আমি ছবিতে হ্যাঁ বা না বলি। সে কারণেই আমায় সব সময় দেখা যায় না, কারণ আমি বেছেই কাজ করি। যদিও ইদানিং একটু বেশিই দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রতি মাসেই ছবি আসছে। অবশ্য সেগুলো জমে থাকা ছবি ছিল... সেই জন্যে অনেকে ভাবেন এই রে, অর্পিতা আবার ব্রেক নিয়েছে... কিন্তু কাজ থেকে ব্রেক আমি শুধু একবারই নিয়েছি, সেটাও ঘোষণা করেই। তবে আমি খুবই লাকি যে, পরিচালক - প্রযোজকরা আমার কাছে ভিন্ন ধরণের চরিত্র নিয়ে আসছেন।
প্রশ্ন: 'আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা' -তেও আপনাকে শর্ট হেয়ার লুকে দেখা গিয়েছিল, এই ছবিতেও...
অর্পিতা: আমার ভাল লাগা অনুযায়ী তো চরিত্র তৈরি করতে পারি না, নির্মাতাদের ওপর নির্ভর করে। তবে দুটো ছবির সময়কাল একেবারে আলাদা ছিল। নিজের ভাল লাগার জন্য ছোট চুলের চরিত্রই যে বেছে নেব, এরকম বিলাসিতা করার মতো জায়গায় এখন আমি নেই (হেসে)। এটা একেবারেই কাকতালীয়। এই ছবির ক্ষেত্রে, আর্যার একটি দুর্ঘটনা হয় তাই এই ছোট চুলটা দরকার ছিল। আর ছবিতে এই লুকে যতটা দৃশ্য আছে, সবটাই কিন্তু মেকআপ ছাড়া একেবারে।
প্রশ্ন: সাহেব চট্টোপাধ্যায় ও প্রান্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অফস্ক্রিন রসায়ন কেমন?
অর্পিতা: সাহেব আমার বহু বছরের পুরনো বন্ধু। আগেও একসঙ্গে কাজ করেছি। আমরা মিউজিক্যালি একে অপরের সঙ্গে কানেক্ট করতে পারি। তাই খুব স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পেরেছি। প্রান্তিকের সঙ্গে এটাই আমার প্রথম কাজ এবং একেবারেই আলাপ ছিল না। কাজ শুরুর আগে শুনলাম ও খুব ভয় পেয়ে আছে। তাই একদিন আড্ডা মারতে বাড়িতে ডাকলাম। চা, মুড়ি, সিঙ্গারা খেতে খেতে আড্ডা মারলাম এবং এটা খুব সাহায্য করেছে কাজটা করতে। প্রান্তিক মানুষটাকে আমি খুব পছন্দ করি।
প্রশ্ন: আর 'ক্যাপ্টেন অফ দ্য শিপ'- শিলাদিত্য মৌলিক?
অর্পিতা: শিলার সঙ্গেও খুব ভাল বন্ডিং হওয়ার একটা কারণ মিউজিক। ওঁর সব ছবিতেই গান খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দু'জনের সমীকরণ খুবই ভাল, তাই সব মিলিয়ে কাজটা আরও ভাল হয়েছে।
প্রশ্ন: ছবির নাম শুনেই মনে হচ্ছে, আদ্যোপান্ত ভালোবসার ছবি...
অর্পিতা: হৃদপিণ্ডের একটা সমার্থক শব্দ হৃদয়। এটা শুনলেই মনে হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শব্দ। এটা পরিচালকের একটা অনন্য ভাবনা থেকে হয়েছে। হৃদপিণ্ড ও হৃদয় সমার্থক শব্দ হলেও বইয়ের সংজ্ঞা অনুযায়ী এটা যেমন মাংসপেশী, বইয়ের বাইরে এটা আবেগের মূলকেন্দ্র। ভালোবাসা আবগে দিয়ে হয় না, মস্তিস্ক - মাংসপেশী দিয়ে হয়, সেটা আমরা কখনও ভেবে দেখি না। এই প্রশ্নটাই এই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রশ্ন: ভালোবাসা শব্দটা শুনলে প্রথম কী আসে মাথায়?
অর্পিতা: বন্ধুত্ব...
প্রশ্ন: আর্যার মতো অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের ছোটবেলার প্রেম ছিল?
অর্পিতা: একটা নয়! অজস্র... ক্লাস নাইন থেকে শুরু (হেসে)।
প্রশ্ন: তাঁদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ আছে?
অর্পিতা: না! তবে আমি প্রচুর হৃদয় ভাঙার কারণ। ছোটবেলা থেকে আমি যেমন ছিলাম, দেখতে সুন্দর- মাথায় বুদ্ধি, এই কম্বিনেশন তো খুব কম দেখা যায়... সেই সবটা মিলিয়ে আমার প্রতি অনেকেই আকর্ষিত হত। প্রচুর প্রেমপত্র বাড়ির বারান্দায় পড়ে থাকত, আমার মা সেগুলো খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে আমায় বকাবকি করতেন। প্রেম -ভালোবাসা সব সময় আমার জীবনের অংশ।