
শিরোনামে টলিউড ইন্ডাস্ট্রি। টলিপাড়ার ঝামেলা মিটেও যেন মিটছে না। স্টুডিও পাড়ায় ফেডারেশন বনাম ডিরেক্টর্স গিল্ডের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। টেকনিশিয়নদের বিরুদ্ধেও বারবার উঠছে অসহযোগিতার অভিযোগ। শ্যুটিং বন্ধ বহু অভিনেতা-পরিচালকদের। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, শ্রীজিৎ রায়, সুদেষ্ণা রায়, বিদুলা ভট্টাচার্যর পর শ্যুটিংয়ে বাধা পেয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্যও। দুই পক্ষের লড়াই আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। টলিউড শিল্পীদের কাজ করতে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে, এবার সোমবার কড়া বার্তা দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
মামলার শুনানিতে এদিন বিচারপতি বলেন, "কারও জীবিকা, কাজ বা ব্যবসা করতে বাধা দেওয়া যায় না। যদি কেউ সমস্যায় পড়ে, তাহলে স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিতে হবে। রাজ্য এ নিয়ে চুপ করে বসে থাকতে পারে না।" মামলাকারীদের আইনজীবী অভ্রতোষ মজুমদার আদালতে জানান, যে আগেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে তাঁদের কাজে বাধা না দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও সমাধান হয়নি, উল্টে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
অভ্রতোষ মজুমদার বলেন, "মেসেজ পাঠিয়ে বলা হচ্ছে, আদালতের নির্দেশ মানার দরকার নেই। মামলাকারীদের আলাদা করে দেওয়া হয়েছে, কাজের সুযোগ বন্ধ। এমনকী শ্যুটিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকটাই পচন ধরেছে। ফেডারেশন যেন কোনওভাবেই কাজের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে- এই মর্মে আদালতের রুল জারি করা প্রয়োজন।" এরপর বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, "জীবনের অধিকার যেখানে প্রশ্নে, সেখানে রাজ্য কেন কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না? রাজ্য আমাদের রক্ষাকারী- তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। শুধু পুলিশ দিয়ে সব হবে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর কোথায়? তারাই বা কিছু করছে না কেন?"
এদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহাফের রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি সচিবকে নির্দেশ দেন, শ্যুটিং যাতে কোনও ভাবেই বন্ধ না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। রাজ্যের যে কোনও প্রান্তে শ্যুটিংয়ে বাধা দেওয়া হলে দপ্তরের সচিব পুলিশের সাহায্য নেবেন বলে জানান তিনি। এছাড়াও মামলাকারীরাও যদি শ্যুটিংয়ে করতে বাধা পান, তা হলে সচিবকে অভিযোগ জানাবেন। ফেডারেশন-সহ কোনও সংগঠনই কারও কাজে বাধা দিতে পারবে না। যদিও মামলায় অভিযুক্ত ফেডারেশন এদিন আদালতে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৬ জুন।
গত বছর জুলাই মাস নাগাদ পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ছবির শ্যুটিং বন্ধ হওয়া নিয়ে কার্যত উত্তাল হয় টলিউড। প্রথমে হুঁশিয়ারি দিয়েও কাজ হওয়ায়, স্তব্ধ হয়ে যায় টলিপাড়া। দফায় দফায় মিটিং, অভিযোগ- পাল্টা অভিযোগ উঠতে থাকে। পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতায় সমস্যা সমাধান হয় সেই সময়। এই ঘটনার কিছু মাসের মধ্যেই ফের সমস্যার মুখে ইন্ডাস্ট্রি। কবে, পুরোপুরি সব ঠিক হয়ে নিজের ছন্দে ফিরবে স্টুডিওপাড়া, সেই অপেক্ষায় সকলেই।
এরপর ফের গত ফেব্রুয়ারি মাসে কার্যত তোলপাড় হয় স্টুডিওপাড়া। আবারও বন্ধ হয় শ্যুটিং। যার জেরে টেকনিশিয়ানদের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে, সাংগঠনিকভাবে সকল পরিচালক শ্যুটিং করা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার ঘোষণা করেন। ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার দাবি করে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের দেওয়া শর্তাবলী মেনে না নেওয়া পর্যন্ত পরিচালকদের এই প্রত্যাহার জারি থাকবে। এদিকে অন্য সুরে কথা বলেন ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। সেসময় দু'পক্ষের সমস্যার সাময়িক সমাধান হলেও, ফের প্রশ্নচিহ্নের মুখের টলিউডের শ্যুটিং।
প্রসঙ্গত, ইন্ডাস্ট্রির শ্যুটিং সমস্যার সমাধান না হওয়ায় প্রথমে পরিচালক বিদুলা ভট্টাচার্য কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। পরে বিদুলার পথ অনুসরণ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আরও ১৫ জন পরিচালক, অভিনেতা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী, সুব্রত সেন, সুদেষ্ণা রায় সহ অনেকে। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই আদালত নির্দেশ দেয় কোনও পরিচালকের কাজে বাধা দেওয়া যাবে না।