হীরালাল
পরিচালক: অরুণ সেন
অভিনয়: কিঞ্জল নন্দ, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, অনুষ্কা চক্রবর্তী, তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস
সময় মতো ঘটনা সামনে এলে আজ কী হীরালাল সেনের নামেই দেশের সর্বোচ্চ ফিল্ম পুরস্কার দেওয়া হত? উত্তর জানা নেই। তবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যদি হত, তবে নিঃসন্দেহে হীরালাল সেন ভারতীয় চলচ্চিত্রে উঁচু আসনেই বিরাজমান থাকতেন। ইতিহাস ভুলিয়ে-গুলিয়ে দেওয়া একটা সময়ে এই ছবি অন্তত গুরুত্বপূর্ণ একটা দলিল হিসাবে থেকে যাবে। যার জন্য পরিচালক অরুণ সেনকে ধন্যবাদ।
এ বার আশা যাক ছবির গল্পে। ছোট থেকেই ছবির প্রতি আকর্ষণ ছিল হীরালাল সেনের। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ছায়াছবিতেও রূপান্তরিত হয়। ভাই মতিলালের সঙ্গে মিলে ক্যামেরা আর ছবির সফর। ময়দানে তাঁবু খাটিয়ে ছবির প্রদর্শনী। আর সে সময়কার বিখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব গিরিশ ঘোষ, অমরেন্দ্র নাথ দত্ত, কুসুম কুমারীর সান্নিধ্যে হীরালালের পরিণত হওয়া। এ ছবিতে অমরেন্দ্রনাথ দত্ত-কে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যাবে। আর রয়েছেন জামশেদজি ম্যাডান। যিনি না থাকলে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হত। আর এ ছবিতে সেই ভূমিকায় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় না থাকলে সিনেমার রিভিউ হয়তো অন্য ভাবে লিখতে হত।
গল্পের মধ্যে রাজনীতি, গুপ্তচরবৃত্তি, প্রণয়-প্রেম সবই রয়েছে। তবে যেটা সবচেয়ে বেশি চোখে লেগেছে তা হল সেই পিরিয়ডকে ধরার ফাঁক। পরিচালক এমন একটা সময়ে দর্শকদের সফর করাতে চেয়েছেন যার সঙ্গে আজকের শহর কলকাতার কোনও মিল নেই বললেই চলে। পিরিয়ড ড্রামা দেখাতে হলে যে গ্র্যাঞ্জার প্রয়োজন হয় তার দিকে একটু নজর দিলে ভালো হত। তবে শাশ্বতকে দিয়ে ছবির চোখা চোখা সংলাপ বলিয়ে সেই খামতি খানিকটা হলেও ঢাকা গিয়েছে।
হীরালালের চরিত্রে কিঞ্জল কিন্তু নজর কেড়েছেন। অভিনয় খুব ভালো। অমরেন্দ্রনাথের চরিত্রে অর্ণ মুখোপাধ্যায় মানানসই। হেমাঙ্গিনীর চরিত্রে অনুষ্কা চক্রবর্তীকেও মন্দ লাগে না। কুসুমকে যথেষ্ট বিশ্বাসোগ্য করেছেন তন্নিষ্ঠা। ছবি আরও টানটান হতে পারত। ওটিটি-র যুগে এখন প্রায় আড়াই ঘণ্টার সিনেমা ধৈর্য ধরে দেখার দর্শক কমই রয়েছেন। সিনেমা দেখতে গিয়ে যা ভালোই বুঝতে পেরেছি। দৈর্ঘ্য একটু ছোট করা যেত বলে মনে হয়।
ছবি নিঃসন্দেহে প্রত্যাশা বাড়াল। করোনাকালের পর সকলে এখন হাতের তালুর দিকেই বেশি চেয়ে থাকেন। মোবাইল প্ল্যাটফর্মের সর্বগ্রাসী আবেদনের মাঝে দর্শকদের হলমুখী করতে আরও ভালো ভালো সিনেমার প্রয়োজন। বড় থেকে ছোট হতে হতে এখন মোবাইলের স্ক্রিনে আটকে যাচ্ছে সিনেমা। যা ভারতীয় সিনেমার আদিপুরুষের স্বপ্নের সঙ্গে ঠিক মিল খায় না।