scorecardresearch
 

Suchitra Sen: সন্দেহ প্রবণ স্বামীর সঙ্গে মারামারিও হয়েছে মহানায়িকার

তাঁর নাম যশ খ্যাতির জন্য স্বামীর সঙ্গে নিত্য অশান্তি হত দাম্পত্য জীবনের শেষ দিকে। অত্যন্ত সন্দেহ প্রবণ হয়ে পড়েন দিবানাথ। একাধিক সূত্রে শোনা গিয়েছে, স্বামী দিবানাথের সঙ্গে রীতিমতো মারামারিও হত সুচিত্রার। এক রাতে বাড়ি ছেড়ে কানন দেবীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement
মহানায়িকা সুচিত্রা সেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন
হাইলাইটস
  • ৩৬ বছর সম্পূর্ণ লোক চক্ষুর আড়ালে থাকা সাধানার চেয়ে কোনও অংশে কম কিছু নয়!
  • তাঁর নাম যশ খ্যাতির জন্য স্বামীর সঙ্গে নিত্য অশান্তি হত দাম্পত্য জীবনের শেষ দিকে

১৯৭৮ থেকে ২০১৪- প্রায় তিনটি যুগ ঠিক কোন অভিমানে সুচিত্রা নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন, শেষ পর্যন্ত তা হয়তো অজানাই থেকে যাবে তিন প্রজন্মে ছড়িয়ে থাকা অগণিত ভক্তের কাছে। এ নিয়ে জল্পনা যতোই হোক, নিজেকে আড়ালে রেখে মহানায়িকা রুপোলি পর্দার শেষ অ্যাপিয়ারেন্সেই দর্শকদের স্মরণে থেকে গেলেন। ৩৬ বছর সম্পূর্ণ লোক চক্ষুর আড়ালে থাকা সাধানার চেয়ে কোনও অংশে কম কিছু নয়!

১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই এপ্রিল অবিভক্ত বাংলার পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন সুচিত্রা। তাঁর পিতা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মা ইন্দিরা দেবী গৃহবধূ ছিলেন। সুচিত্রা ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান। ডাক নাম রমা। তবে বাবা ডাকতেন কৃষ্ণা নামে। পাবনা শহরের পাঠশালার পাঠ শেষ করে, তিনি পাবনা গার্লস স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। সে সময় ভারত পাকিস্তান বিভাজনের সময় পুরো পরিবার কলকাতায় চলে আসেন। এই সময় ঢাকার বিশিষ্ট শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পরিবারও কলকাতায় আশ্রয় নেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রার বিয়ে হয় এবং স্বামীর পদবী অনুসারে তাঁর নাম হয় 'রমা সেন'। বিলেত ফেরত দিবানাথ সেনকে সংসারী করার জন্যই, রমার সাথে বিবাহ দিয়েছিলেন আদিনাথ। এক বছরের মধ্যে তাঁদের কোলে আসেন একমাত্র কন্যা মুনমুন।

দিবানাথের মামা বিমল রায় ছিলেন সেকালের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা। বিমল রায় তাঁকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেন। পরে তাঁর শ্বশুর এবং স্বামী রাজি হলে চলচ্চিত্র অঙ্গনে পা রাখেন রমা। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে 'শেষ কোথায় ছবি'র মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই ছবিটি আর দিনের আলো দেখেনি। তাঁর স্ক্রিনের নাম রাখা হয় সুচিত্রা। স্বামীর পদবী অনুসারে তাঁর পুরো নাম হয় সুচিত্রা সেন। পরের বছর ১৯৫৩ সালে উত্তম কুমারের সঙ্গে মুক্তি পায় সাড়ে চুয়াত্তর। তার পর আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তুলসি চক্রবর্তী এবং মলিনা দেবীর সঙ্গে উত্তম-সুচিত্রার নামও বাঙালির মুখে ফিরতে থাকে।

Advertisement

১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারি মুক্তি পায় তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি 'দেবদাস'। ছবিতে দীলিপকুমারের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। এই ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন সুচিত্রা। তিনিই প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী হিসাবে কোনও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পান। ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৩ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব থেকে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান তিনি।

এর মাঝে আরও বহু ছবিতে কাজ করে ফেলেছেন তিনি। তাঁর নাম যশ খ্যাতির জন্য স্বামীর সঙ্গে নিত্য অশান্তি হত দাম্পত্য জীবনের শেষ দিকে। অত্যন্ত সন্দেহ প্রবণ হয়ে পড়েন দিবানাথ। একাধিক সূত্রে শোনা গিয়েছে, স্বামী দিবানাথের সঙ্গে রীতিমতো মারামারিও হত সুচিত্রার। এক রাতে বাড়ি ছেড়ে কানন দেবীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। পরে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে নিউ আলিপুরে আলাদা থাকতে শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে ২৮ নভেম্বর দিবানাথের মৃত্যু হয়। এর পর আর ৯ বছর শুটিং ফ্লোরে দেখা গিয়েছে সুচিত্রাকে। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় তাঁর শেষ সিনেমা প্রণয় পাশা। ছবির নায়ক ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

এর মধ্যে একাধিক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন সুচিত্রা। পাওয়া হয়ে গিয়েছে পদ্মশ্রীও। সম্ভবত সব পেয়েছির একটা অনুভূতিও হয়ে থাকবে। হঠাৎ করেই তিনি সব কিছু ছেড়ে রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হন। আধ্যত্মিকতা এবং বৈরাগ্যের সমাগম হয় একই দেহে। এক প্রকার সাধনা করেই তিনি লোকচক্ষুর সম্পূর্ণ অন্তরালে চলে যান। ৩৬ বছরের সাধনা শেষ করে পাড়ি দেন না ফেরার দেশে।

 

Advertisement