প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে রবিবার বেলা ১২:১৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। গত ৫ অক্টোবর করোনা পজিটিভ হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর কেটে গিয়েছে একমাসেরও বেশি সময়। কিন্তু অবস্থার ক্রমশ অবনতি হয়েছে। শেষ রক্ষা করতে পারলেন না চিকিৎসকেরা।
বুধবার ট্র্যাকিওস্টমি (Tracheostomy) অর্থাৎ শ্বাসনালীর অস্ত্রোপচার সফল হয়েছিল তাঁর। তারপরের দিন দুপুরে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল প্লাজমা থেরাপি। প্লাজমা থেরাপির পর প্রাথমিক ভাবে রক্তচাপ কিছুটা কমে গেলেও পরে সেটি ঠিক হয়েছিল। বাহ্যিকভাবে রক্তক্ষরণ হয়নি প্রবীণ অভিনেতার। বৃহস্পতিবার তাঁর সিটি স্ক্যানও করা হয়েছে এবং সেই রিপোর্টে কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকেই অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সাড়া দিচ্ছিলেন না চিকিৎসাতেও।
অপুর সংসার (১৯৫৯) সত্যজিৎ রায়েই এই ছবি দিয়েই রূপোলি পর্দায় আত্মপ্রকাশ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। তারপর একসঙ্গে ১৪টি ছবি করেছিলেন সত্যজিৎ-সৌমিত্র জুটি। পরিচালকের চারুলতা (১৯৬৪) ছবিতে অমলের ভূমিকায় সাড়া ফেলেছিলেন সৌমিত্র। কেবমাত্র সত্যজিৎ নয়, তরুণ মজুমদারের ছবিও সৌমিত্রর কেরিয়ারের মাইলস্টোন। ঝিন্দের বন্দী (১৯৬১) ছবিতে উত্তম কুমারের বিপরীতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ময়ূরবাহন-এর ভূমিকায় দর্শক এখনও মনে করে তাঁকে। তার পরেই বছরই অভিযান (১৯৬২)।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে কথা বললে সেখানে ফেলুদা আসবেই। সৌমিত্রকে ভেবেই ফেলুদা-র জন্ম দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। মগজাস্ত্রের প্রয়োগে তিনিই তো পর্দায় প্রদোষ মিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন। সোনার কেল্লা দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই সিরিজের। পরে আসে জয় বাবা ফেলুনাথ। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ছবির তালিকা শেষ করা সম্ভব নয়। বাক্স বদল, সংসার সীমান্তে, অরণ্যের দিন রাত্রি, বাঘিনী এবং সাম্প্রতিক কালে অতনু ঘোষের ময়ূরাক্ষী- তালিকা দীর্ঘ হতে থাকবে।
লকডাউনের পরে শেষ অভিনয় করেছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় তাঁর বায়োপিক অভিযান-এ। অবশেষে দিকশূন্যপারের দিকে পাড়ি দিলেন ফেলুদা।