২০২১ সালের প্রথম দিনেই স্বস্তির খবর ভারতে। মিলে গেল করোনা ভ্যাকসিনের ছাড়পত্র। ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনেরাল অফ ইন্ডিয়ার বিশেষজ্ঞ কমিটির বিশেষ বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে শিলমোহর দেওয়া হল । অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করা কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে সবুজ সংকেত পেল। ভারতের পুণেতে অবস্থিতি সিরাম ইনস্টিটিউট এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে দেশে।
ইতিমধ্যেই দেশে কোভিশিল্ড প্রয়োগের ব্যাপারে যুদ্ধকালীন তৎপরতা নিয়ে পরিকল্পনা সাজানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কর্তারা ভ্যাকসিন প্রয়োগ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে এব্যাপারে দফায়-দফায় আলোচনা চালাচ্ছেন। কবে থেকে, কীভাবে প্রয়োগ, আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। ৯ মাস লড়াইয়ের পর করোনার ভ্যাকসিনে ছাড়পত্র মিলল। এই আবহেই সেরাম ইনিস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার চিফ এগ্জিকিউটিভ আদার পুনাওয়ালা কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়ে বেশকিছু মূল্যবান তথ্য জানালেন।
১. ভ্যাকসিনটি লঞ্চ করার জন্য কতটা প্রস্তুত?
সিরামে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ গত ৮-৯ মাস ধরে চলছে, এখন লঞ্চ হওয়ার আগে চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ চলছে। আমাদের কাছে এত স্টক রয়েছে যে আমরা পুরো দেশের চাহিদা মেটাতে পারি। যে স্টকটি এখন প্রস্তুত হয়েছে তা তিন-চার বছরে তৈরি হয় কিন্তু আমরা জরুরি ভিত্তিতে তা ৬ মাসে প্রস্তুত করেছি।
২. কীভাবে ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হচ্ছে?
ভ্যাকসিন তৈরি হলে সেটিকে একটি ছোট বোতলে ভরা হয়। যার পরে প্যাকেজিং সম্পন্ন হয়, শেষ পর্যন্ত এটি পরীক্ষা করা দেখা হয় যাতে বোতলটিতে ভ্যাকসিন ছাড়া অন্য কিছু নেই তা আশ্বস্ত হতে।
৩. সিরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে দেশে ভ্যাকসিন কীভাবে বিলি হবে?
ভ্যাকসিনের ডোজ চূড়ান্ত হওয়ার পরে সমস্ত ডোজ প্যাক করা হবে। যা বাক্সে এবং ড্রাই আইজের মধ্যে রাখা হবে, সেগুলি ফ্রিজারে ভরে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রেরণ করা হবে। ভ্যাকসিনটি সরকারি কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা হবে।
৪. ভ্যাকসিনের একটি তোবল থেকে কতজন তা পাবেন?
সিরাম ইনস্টিটিউটে যে ভ্যাকসিন বোতল তৈরি হচ্ছে তাতে ১০ টি ডোজ দেওয়া যেতে পারে। একবার খোলার পরে এটি৪-৫ ঘন্টার মধ্যে ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ, যদি কোনও চিকিৎসকের বোতল ভ্যাকসিন খোলেন তবে তিনি পাঁচ জনকে তা দিতে পারেন।
৫. সিরামের ভ্যাকসিনটি কতটা নিরাপদ?
ভ্যাকসিনটি তৈরি করতে ৯ মাস লেগেছে, সুরক্ষার সমস্ত শর্ত পূরণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ভ্যাকসিনের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে তবে করোনার ভ্যাকসিনটিতে এখনও জীবনের কোনও ঝুঁকি দেখা যায়নি। একবার ভ্যাকসিন চালু হওয়ার পরে, প্রভাবগুলি প্রথম সাত দিনের মধ্যে দেখা দিতে শুরু পারে। এখনও পর্যন্ত সমস্ত পরীক্ষায় কোনও সমস্যা হয়নি।
৬. ট্য়ায়ালের সময় কীরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে?
ট্রায়ালের সময় যাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল তাদের কয়েকজনের মাথাব্যথা ও হালকা জ্বর হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন। যা সাধারণ ওষুধ দিয়ে কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়, এর কোনও বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
৭. কোন তাপমাত্রায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা হচ্ছে?
সিরাম ইনস্টিটিউট দাবি করেছে যে তাদের ভ্যাকসিনটি ২ থেকে ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখা যেতে পারে। এটি একটি সাধারণ রেফ্রিজারেটরেও সংরক্ষণ করা যেতে পারে। যদি ভ্যাকসিনটি ফ্রিজের বাইরে রাখা হয় তবে ১০ দিন পর্যন্ত কোনও সমস্যা হবে না, তবে এটিকে ২থেকে ৮ ডিগ্রি-তে রাখা উচিত।
৮. ভ্যাকসিনের কত ডোজ এখন প্রস্তুত?
সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছে ৫০ মিলিয়ন ডোজ প্রস্তুত রয়েছে। যা মোট ২২ কোটি মানুষকে দেওয়া যেতে পারে।
৯. ভ্যাকসিনের প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে কতটা সময় থাকা জরুরি?
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট পুরো ডোজটির জন্য আবেদন করছে। তবে মানুষকে প্রথম ডোজ এবং দ্বিতীয় ডোজ মধ্যে কিছুটা পার্থক্য করার জন্য আবেদন করা হচ্ছে। যদি দুই মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া হয়, তবে এটি খুব ভাল ভাবে কাজ করবে।
যদি প্রথম ডোজটি গ্রহণ করা হয় তবে গ্রহিতাকে সতর্ক হতে হবে। ভ্যাকসিন আপনাকে অনেক সাহায্য করবে , তবে আপনাকেও সতর্ক হতে হবে। যাতে দুই মাস পরে, অন্য ডোজটি নেওয়া যায়।
১০. যদি কেবলমাত্র একটি ডোজ প্রয়োগ করা হয়?
সিরাম ইনস্টিটিউট বলছে দুটি ডোজ নেওয়ার কথা। শুধুমাত্র একটি ডোজ সম্পূর্ণ সুরক্ষা সরবরাহ দিতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে যদি ভ্যাকসিনটির দীর্ঘ কার্যকারিতার জন্য উভয় ডোজ নিতে হবে।
১১. ভ্যাকসিনটি করোনার নতুন স্ট্রেইনে কাজ করবে?
সেরাম ইনস্টিটিউট বলেছে যে নতুন স্ট্রেইনের উপর এই ভ্যাকসিন কাজ করবে না এমন কোনও কারণ নেই। বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে ভাইরাসে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে, এক্ষেত্রে ভ্যাকসিন কাজ করতে সক্ষম হবে। তবে আগামী কয়েকদিনে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে যে নতুন স্ট্রেইনে ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর।
১২. সিরাম ভ্যাকসিনের জন্য কত খরচ হবে?
ইনস্টিটিউট ২০০ চাকায় ভারত সরকারকে একটি ডোজ দেবে অর্থাৎ ৪০০ টাকায় দুটি ডোজ মিলবে। তবে এই দামটি কেবল সরকারের জন্য, কারণ সরকার সিরাম থেকে কোটি কোটি ডোজ কিনছে। যদি কোনও বেসরকারি সংস্থা ভ্যাকসিনের ডোজ ক্রয় করে তবে একটি ডোজ দেওয়ার জন্য ১ হাজার টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ, ব্যক্তিগত জায়গা থেকে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য ব্যয় হবে ২ হাজার টাকা।
১৩. মেডিকেল স্টোরে করোনার ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে?
মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে এই ভ্যাকসিনটি ব্যক্তিগতভাবে ক্রয় শুরু হয়ে যাবে। তবে আপনি এই ভ্যাকসিনটি কেবলমাত্র চিকিসকের পরামর্শ অনুযায়ী দেওয়া হবে। তবে প্রথম পর্যায়ে সরকার কী ব্যবস্থা করে সেই হিসাবেই ভ্যাকসিন মিলবে।
১৪. ভারত সরকার এখন পর্যন্ত কত ডোজ কিনেছে?
সরকার ২০২১ সালের জুলাইয়ের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ কোটি ডোজ নেওয়ার কথা বলেছে, তবে কোনও লিখিত চুক্তি হয়নি। সরকার বর্তমানে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকার কোন ভ্যাকসিন অনুমোদন করে, মানুষের উচিত সেজিকে মনোযোগ দেওয়া। প
১৫. করোনার ভ্যাকসিনের কালো বাজারি কীভাবে বন্ধ হবে?
প্রাথমিকভাবে, পুরো টিকা সিরামের পক্ষে সরকারের কাছে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার কাকে ভ্যাকসিন দেয়, তা তাদের উপর নির্ভর করে। আমরা এর তিন-চার মাস বাদে বেসরকার ভাবে লোকদের ভ্যাকসিন দিতে সক্ষম হব।