আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁতে গাড়ি থামিয়ে আট মাসের গর্ভবতী মহিলার সোনার হার ছিনতাই এবং গলা কেটে নৃশংস খুনের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে ধারণা বদ্ধপরিকর হচ্ছে পুলিশের। আদৌ ছিনতাই হয়েছে কি না, নাকি গোটাটাই সাজানো তা নিয়ে তদন্ত শুরু করে বেশ খানিকটা এগিয়েছে পুলিশ। মহিলার বাড়ির লোকও ঘটনাটির পিছনে অন্য গন্ধ পাচ্ছেন। ফলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘটনাটি ঘিরে রহস্য দানা বাঁধছে।
আচমকা ঘটনা না পরিকল্পিত খুন!
এই ঘটনাটি কী নিছকই ছিনতাই করে খুন না পরিকল্পিত খুন এই বিষয়টি এখন ভাবাচ্ছে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এই খুনের ঘটনায় বেশ কয়েকটি প্রমান পুলিশ তাদের হাতে পেয়েছে।আর সেই থেকেই এই খুনের ঘটনার পেছনে অন্য কোন রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে পুলিশের তদন্তকারী দল।
একাধিক বিষয়ে খটকা
পুলিশ প্রথমে মনে করেছিল দুষ্কৃতীরাই গাড়ি থামিয়ে মজিদা বেগম (২০) নামে আট মাসের গর্ভবতী ওই মহিলাকে খুন ও গাড়ির চালক তাঁর স্বামী এক্রামূল হককে জখম করে সোনার চেন নিয়ে চম্পট দেয়। কিন্তু পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এই খুনের ঘটনায় একাধিক সন্দেহজনক বিষয় উঠে আসছে।
মজিদার পক্ষে কোনও বাধা দেওয়া সম্ভব ছিল না
প্রথমত, পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা মজিদা গাড়িতে সিট বেল্ট বাঁধা অবস্থায় তার সিটে বসেছিল। মহিলার সিটে রক্তের যথেষ্ট দাগ ছিল। অন্যদিকে, গাড়ির চালক এক্রামূল সিট বেল্ট বাঁধা অবস্থায় ছিল না। যদি ছিনতাইকারী দলকে বাধা দিতেই হয় তবে গাড়িতে সিট বেল্ট বাঁধা অবস্থায় সন্তান সম্ভবা আটমাসের ওই গর্ভবতী মহিলা কী ভাবে বাধা দেবে?
এক্রামূলের সামান্য আঘাত ভাবাচ্ছে পুলিশকে
অন্যদিকে সিট বেল্ট ছাড়া চালকের আসনে থাকা সুস্থ সবল এক্রামূল কেন ছিনতাইকারীদের বাধা দিলেন না? আট মাসের সন্তান সম্ভবা ওই মহিলা কী এমন অপরাধ করেছিল যার জন্য তাঁকে নৃশংস ভাবে গলা কেটে খুন করল ছিনতাইকারীর দল? আর গর্ভবতী ওই মহিলার স্বামীকে পিঠের ডানদিকে অস্ত্র দিয়ে ছোট্ট একটি ক্ষত করে ছেড়ে দিলো ছিনতাইকারীরা? এখানেই রহস্য দানা বাঁধছে।
অজ্ঞান হওয়ার মতো আঘাত নয়
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে এক্রামূলের সিটের পিছনে রক্তের দাগ ছিল। কিন্তু তাঁর শরীরের পিছনে পিঠে একেবারেই সামান্য ক্ষত ছিল। অন্যদিকে, গাড়ির পিছনের সিটে রক্তের কোনও দাগ ছিল না। তদন্তকারী পুলিশ সূত্রের খবর এক্রামূলের পিঠের আঘাত অতটা গভীর নয়, যার জন্য তাঁকে অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে হবে। তার পিঠের ক্ষত থেকে সামান্যই রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে দুদিন নার্সিংহোমে থাকতে হবে।
খুনের পিছনে অন্য কারণ?
ফলে এই খুনের ঘটনা অন্য কোনও কারণেও হতে পারে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। সে জন্য পুলিশ অপেক্ষা করছে এক্রামূলের সুস্থ হওয়া পর্যন্ত। এক্রামূল এখনও কোচবিহারের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি আছে। এবং সেই হাসপাতালে পুলিশের পাহারায় এক্রামুলকে রাখা হয়েছে। মৃত মহিলার স্বামী এক্রামূল সুস্থ হলেই পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, এক্রামূলকে জিজ্ঞাসার পরেই গোটা বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
মৃতার দাদার দাবি এটা ছক কষে খুন
মৃতের দাদা নূর আলম বলেন, আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এটা কোনওভাবেই ছিনতাইয়ের ঘটনা হতে পারে না। আমার বোন আট মাসের গর্ভবতী ছিল। আট মাসের কোনও গর্ভবতী মহিলাকে অতদূরে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কেউ নেয়? সেই জন্যই আমাদের সন্দেহ বোনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।
সন্দেহের বাইরে নয় স্বামী এক্রামূলও
জেলার পুলিস সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, আমরা সব দিক থেকেই এই খুনের ঘটনার তদন্ত করছি। আমরা এখনই এ নিয়ে কিছু বলব না। আমরা মৃতের স্বামীর সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় আছি। মৃতের স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তদন্তে অন্য কিছু উঠে আসতে পারে। তবে পুলিশ সুপার কিছু না বললেও ঘটনার মোড় যেদিকে যাচ্ছে তাতে সন্দেহের তালিকায় রয়েছে স্বামী এক্রামূলও বলে জানা গিয়েছে। বাকিটা পুলিশ তদন্ত শেষ করলে জানা যাবে।