Biggest Digital Arrest Of The Country: দিল্লিতে ডিজিটাল অ্যারেস্টের এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ঘটনা সামনে এসেছে। সাউথ দিল্লির গুলমোহর পার্কে বসবাসকারী অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্কার নরেশ মালহোত্রাকে সাইবার অপরাধীরা দেড় মাস ধরে ডিজিটাল অ্যারেস্টে রেখে ২৩ কোটি টাকা প্রতারণা করেছে। জানুন কীভাবে ঘটল পুরো খেলা।
ভারতের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল অ্যারেস্ট স্ক্যাম
গত কয়েক মাসে দেশজুড়ে একাধিক ডিজিটাল অ্যারেস্টের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। কোথাও কোনও মহিলাকে প্রতারণা করা হয়েছে, কোথাও আবার প্রবীণ নাগরিককে অনলাইনে লুটে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দিল্লিতে এবার যে ঘটনা ঘটল, তা এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল অ্যারেস্ট মামলা। এতে তদন্তকারী সংস্থা ও পুলিশও হতবাক। এর শিকার হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্কার নরেশ মালহোত্রা, যিনি সাউথ দিল্লির গুলমোহর পার্কে থাকেন। তাঁকে এক-দুদিন নয়, টানা এক মাসেরও বেশি সময় ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে রাখা হয় এবং তাঁর জীবনের সব সঞ্চয় অর্থাৎ ২৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
নরেশ মালহোত্রা একাই তাঁর বাড়িতে থাকেন। তাঁর কন্যাদের বিয়ে হয়ে গেছে, দুই পুত্রও আলাদা থাকে। চারজন নাতি আছে। স্ত্রী মারা গেছেন, তাই তিনি একাই থাকেন। সাইবার অপরাধীরা কীভাবে ১ আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁকে ডিজিটাল অ্যারেস্টে রাখল এবং কীভাবে ২৩ কোটি টাকার প্রতারণা করল, সেই কাহিনি তিনি নিজেই আজতক-কে বলেছেন।
কীভাবে শুরু হয় প্রতারণা
নরেশ মালহোত্রা জানান, ৪ জুলাই তিনি অস্ত্রোপচারের পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান এবং বিশ্রামে ছিলেন। ১ আগস্ট বিকেল ৪টায় নিজেকে এয়ারটেল হেডকোয়ার্টার থেকে বলছে দাবি করে এক মহিলার ফোন আসে। সে বলে, তাঁর ল্যান্ডলাইন নম্বর হ্যাক হয়ে গেছে এবং মুম্বইতে তাঁর নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, যা থেকে ১৩০০ কোটি টাকা টেরর ফান্ডিং হয়েছে—পুলওয়ামা কেসে।
তাঁকে জানানো হয় যে NIA অ্যাক্ট অনুযায়ী তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং সন্ধ্যায় তাঁর সম্পত্তি সিজ করা হবে। এরপর তাঁকে মুম্বই পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে ভিডিও কলে যুক্ত করা হয়। সেখানে তাঁকে একজন 'মেহতা' নামের প্রতারকের ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা হয় তিনি চেনেন কি না।
এরপর প্রতারকরা নরেশের বাড়ি, চাকর, সন্তান কোথায় থাকে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, এফডি, লকার, শেয়ার সব তথ্য চাইতে থাকে। তারপর নকল চার্জশিট ও নকল অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট পাঠানো হয়। বলা হয়, তিনি ৬ মাস কারাবন্দি থাকবেন এবং যদি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেন তবে মানি লন্ডারিং অ্যাক্টে তাঁকে জেলে পাঠানো হবে।
ধাপে ধাপে কোটি কোটি টাকা হাতানো
প্রতারকরা তাঁকে বোঝায় যে তাঁর জামিন করিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করতে হবে। এরপর নরেশ মালহোত্রা ২৫% শেয়ার বিক্রি করেন এবং তাঁর অ্যাকাউন্টে ১২ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা আসে। প্রতারকরা সেই টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করিয়ে নেয়।
৪ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথমে ১২ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা এবং তারপর ৯ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। মোট ২২ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা তাঁদের কাছ থেকে প্রতারণা করে নেওয়া হয়।
আরও চাপ সৃষ্টি
এদিকে তাঁর নাতির বিয়ের সময়ও তাঁকে প্রতারকরা নজরে রাখে। পরে নকল ED ও সুপ্রিম কোর্টের নোটিশ পাঠিয়ে আরও ৫ কোটি টাকা জমা দিতে চাপ দেয়। বলা হয়, টাকা দিলে ২২ কোটি ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু যখন তাঁকে এক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে বলা হয়, তখন তিনি অস্বীকার করেন। এরপর তিনি সাহস নিয়ে বলেন—গ্রেপ্তার করুক, তবু তিনি আর টাকা দেবেন না।
ভয় ও একাকীত্ব
তিনি জানান, তিনি ভীষণ ভয় পেয়েছিলেন। পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা করতেন, কিন্তু কিছু বলেননি, কারণ প্রতারকরা দাবি করত যে তাঁদের এজেন্ট সবসময় তাঁকে নজরদারি করছে।
সাইবার ক্রাইম ইউনিটের পদক্ষেপ
অবশেষে তিনি অনলাইনে অভিযোগ দায়ের করেন। দিল্লি পুলিশের সাইবার ইউনিট (IFSO) তদন্ত শুরু করে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এই মামলার সঙ্গে যুক্ত ১২.১১ কোটি টাকা ফ্রিজ করে দেয়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারকরা দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। তদন্ত এখনও চলছে।
(এই কাহিনি নরেশ মালহোত্রার সঙ্গে আজতক-এর সাংবাদিক অরবিন্দ ওঝার কথোপকথনের ভিত্তিতে লেখা)