scorecardresearch
 

Telegram গ্রুপে অবাধে OTP বিক্রি, রাজ্যে বড় সাইবার জালিয়াতির হদিশ, ধৃত ৭

গত ২০ জানুয়ারি পর্ণশ্রী থানায় এক ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করেন যে, ব্যাঙ্ক কর্মী পরিচয় দিয়ে তাঁকে কেওয়াইসি আপডেট করার নামে ফোন করা হয়। তারপর জালিয়াতির মাধ্যমে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তাঁকে ব্যাঙ্ক কর্মী পরিচয় দিয়ে ফোন করা হয়েছিল সেটি ভুয়ো নথি দিয়ে কেনা।

Advertisement
বড়সড় সাইবার ক্রাইমের পর্দাফাঁস বড়সড় সাইবার ক্রাইমের পর্দাফাঁস
হাইলাইটস
  • বড়সড় সাইবার ক্রাইমের পর্দাফাঁস
  • ১৫-২০ হাজার টাকায় ওটিপি বিক্রি
  • উদ্ধার প্রচুর সিমাকার্ড

শহরের বুকে নয়া সাইবার জালিয়াতির হদিস পেল পুলিশ। যা দেখে তাজ্জব গোয়েন্দারা। টেলিগ্রামে ওটিপি বিক্রির মাধ্যমে চলছে ভয়ঙ্কর সাইবার জালিয়াতি। ওটিপি সেলার্স নামের একটি গ্রুপের মাধ্যমে চলছে গোটা জালিয়াতি চক্রটি। ১৫ থেকে ২০ টাকার বিনিময়ে ভুয়ো ফোন নাম্বার থেকে ওটিপি কিনে খোলা হচ্ছে হাজার হাজার ভার্চুয়াল ওয়ালেট, যা পরবর্তীকালে হাতবদল হয়ে চলে যাচ্ছে সাইবার জালিয়াতদের হাতে। যার পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। পুলিশের দাবি, এই ধরনের জালিয়াতিতে ওয়ালেট কর্মী থেকে শুরু করে একটি নামী মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থার প্রতিনিধি, সকলেই যুক্ত। এখন পর্যন্ত এই মামলায় ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পর্ণশ্রী থানা এবং কলকাতা পুলিশের South-West ডিভিশনের সাইবার সেল। সতর্ক করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থাকেও। শীঘ্রই আরও বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

যুক্ত মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থার ২ কর্মী

জানা গিয়েছে, গত ২০ জানুয়ারি পর্ণশ্রী থানায় এক ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করেন যে, ব্যাঙ্ক কর্মী পরিচয় দিয়ে তাঁকে কেওয়াইসি আপডেট করার নামে ফোন করা হয়। তারপর জালিয়াতির মাধ্যমে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তাঁকে ব্যাঙ্ক কর্মী পরিচয় দিয়ে ফোন করা হয়েছিল সেটি ভুয়ো নথি দিয়ে কেনা। এরপর ওই সিম কার্ডটি যে ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাক্টিভেট করেছিলেন তাঁকেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। হালিশহরের বাসিন্দা পার্থ সাহা নামে ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে আসে গোয়েন্দাদের। পুলিশ জানতে পারে, যা অভিযোগ সামনে এসেছে তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এর পেছনে রয়েছে বড়োসড়ো জালিয়াতি চক্র। সেই চক্রের খোঁজ করতে গিয়েই পুলিশের জালে ধরা পড়ে মোট সাতজন। তাদের মধ্যে একটি নামী মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থার কর্মচারীও রয়েছে। পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ শিবশংকর সাহা নামে কালনার এক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় মোট ৭৪৮টি সিম কার্ড। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে শ্যামল রায়, রামু গিরি, নিরঞ্জন কুমার পাল, অভীক মুখোপাধ্যায়, অভিজিত রিট নামে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

Advertisement
বাজেয়াপ্ত সিম কার্ড ও আধার কার্ড
বাজেয়াপ্ত সিম কার্ড ও আধার কার্ড

ভুয়ো আধার কার্ডে চালু হত সিম

পুলিশ সূত্রে খবর, শিবশংকর সাহা নামে ওই ব্যক্তি মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থার কর্মী অভীক এবং অভিজিতের থেকে হাজার হাজার সিম কিনে তা বিক্রি করতো পার্থ সাহার কাছে। অভিযুক্ত পার্থ ভুয়ো আধার কার্ড বানিয়ে তা দিয়েই চালু করতো হাজার হাজার সিম কার্ড। এরপর বাকি কাজ চলতো টেলিগ্রামের এই গ্রুপের মাধ্যমে। পুলিশ সূত্রে খবর, এই গ্রুপটিতে সাধারণত ওটিপি কেনাবেচা চলে সামান্য টাকার বিনিময়ে। ভুয়ো নথি দিয়ে অ্যাক্টিভেট করা ওই মোবাইল নম্বরগুলি, ওটিপি কিনতে যাওয়া গ্রুপ সদস্যদের প্রদান করত পার্থ। তারা ভার্চুয়াল ওয়ালেট খুলতে চেয়ে মোবাইল নাম্বার গুলোতে ওটিপি পাঠালে, পার্থ সেগুলো দিয়ে দিত ওয়ালেট সংস্থার কর্মীদের। ফলে সেই ওটিপি দিয়ে অবাধে হাজার হাজার ভার্চুয়াল ওয়ালেট খোলা হত মাসের পর মাস। পরবর্তীকালে সেই ওয়ালেট গুলি সাইবার জালিয়াতদের হাতে চলে যেত বলে অনুমান পুলিশের। এরপর সাইবার জালিয়াতিতে সেগুলি ব্যবহার করা হযত। ভার্চুয়াল ওয়ালেট খোলা হয়ে গেলে ভুয়ো নথি দিয়ে অ্যাক্টিভেট করা সেই সিম কার্ডগুলো বিক্রি করে দিত পার্থ। ফলে হাজার হাজার মোবাইল নম্বার এবং ভার্চুয়াল ওয়ালেট সবই চলে যেত সাইবার জালিয়াতদের দখলে। যেগুলো ব্যবহার করে অবাধে চালান হত সাইবার জালিয়াতির কাজ। 

বাজেয়াপ্ত সিম কার্ড
বাজেয়াপ্ত সিম কার্ড

গ্রুপে ১২ হাজারের বেশি সদস্য

পুলিশ সূত্রে খবর টেলিগ্রামের ওই গ্রুপে গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ১২ হাজারেরও বেশি সদস্য রয়েছে। ফলে এই জালিয়াতি চক্রের বিস্তার কতদূর তা নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছে পুলিশ। শিবশংকর এবং পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মী অভীক এবং অভিজিতকে গ্রেফতার করা হয়। তারা দুজনেই সংশ্লিষ্ট মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থার কর্মী ছিল। এছাড়াও গ্রেফতার হয় শ্যামল রায় নামে হালিশহরের এক বাসিন্দা। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় ৮৭টি ভুয়ো আধার কার্ড। গ্রেফতার হওয়া রামু গিরি সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল ওয়ালেট সংস্থার কর্মী ছিল। সূত্রের খবর, পুলিশি জেরায় ধৃত রামু জানিয়েছে, যত বেশি সম্ভব ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য তার ওপর সংস্থার চাপ ছিল। সংস্থার চাহিদা মেটানোর জন্য বেশি সংখ্যক ব্যবহারকারীর হদিশ পেতে এই টেলিগ্রাম গ্রুপ কাজে লাগাত। ধৃত জেরায় আরও জানিয়েছে, ভার্চুয়াল নেট খোলার জন্য প্রয়োজন হয় ওটিপি। এই গ্রুপের মাধ্যমে সামান্য টাকা দিলেই যা সহজে পেয়ে যেত। এভাবেই সে প্রায় ১৫ হাজার ভুয়ো ভার্চুয়াল ওয়ালেট খুলেছে। তবে ধৃতের বয়ান কতটা সত্য তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পুলিশের। প্রত্যেকের স্বীকারোক্তি যাচাই করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। 

আরও পড়ুনপুষ্পা ছবির শ্রীভল্লি গানে নাচ কোরিয়ান মহিলার, ঝড়ের গতিতে ভিডিও Viral

 

Advertisement