নিজেদের ক্ষমতা আরও একবার প্রমাণ করে দিল কলকাতা পুলিশ। ভয়ঙ্কর আন্তঃরাজ্য চোর-ডাকাতদের গ্যাংকে পাকড়াও করলেন কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা। কলকাতা, শহরতলি ও একাধিক রাজ্যে দেদার লুটপাট, সোনার দোকানে ঢুকে চুরি-ডাকাতি চালাত এই গ্যাং। তাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হাওড়ার বাউরিয়া থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
'ইরানি গ্যাং'
কুখ্যাত এই গ্যাং কলকাতার বউবাজার, মুচিপাড়া, গড়িয়াহাট-সহ বিভিন্ন বাজার এলাকায় 'অপারেশন' চালাত। পুলিশ বলছে, এই দলের চুরি ছিনতাইয়ের প্যাটার্ন সিনেমাকেও হার মানাবে। মূলত সোনার দোকানগুলি টার্গেট করা হত। সেখানে কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থার অফিসার সেজে 'ভিজিটে' যেত। পুরোটাই ছদ্মবেশে।
এরপর সেখানে গিয়ে সিকিউরিটি চেকিংয়ের নাটক করত। আর সেই সময়েই সোনা লোপাট করে দিত। গয়নার দোকানে তো বটেই, রাস্তাতেও এমন কাজ করেছে তারা।
পরপর একই প্যাটার্নে চুরি, প্রতারণা এবং জালিয়াতির অভিযোগ পাচ্ছিল কলকাতা পুলিশ। ফলে কোনও নির্দিষ্ট গ্যাং-ই যে এর পিছনে জড়িত, সেটা বুঝতে সময় লাগেনি আধিকারিকদের। গোয়েন্দা বিভাগকে তদন্তের দায়িত্ব নিতে বলা হয়। তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। এই গ্যাংয়ের আচরণ, টাইমিং সব পুঙ্খানুপুঙ্খ ফলো করেন গোয়েন্দারা।
পুলিশ সূত্রে খবর, গ্যাংটি ভারতের বিভিন্ন শহরে কাজ করছিল। ধরা পড়া এড়াতে ঘন-ঘন স্থান পরিবর্তন করত। বারবার লোকেশন চেঞ্জের ফলে তাদের ধরাটা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ কোনও অপরাধীকে রাজ্য বা শহর থেকে ধরাটা তুলনামূলকভাবে সহজ। কিন্তু ভিনরাজ্যে চলে গেলে তার জন্য বাড়তি খাটনি ও সময় লাগে। আর সেটাই কাজে লাগাত এই কুখ্যাত ইরানি গ্যাং।
ঘুঘু ফাঁদে ফিরবেই- জানতেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। সেই মতোই ধৈর্য্য ধরে নজর রাখছিলেন। এরই মধ্যে খবর আসে, হাওড়ার বাউরিয়ায় এই গ্যাং লুকিয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে গোয়েন্দা বিভাগ স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ৫-৬ ডিসেম্বর রাতে হঠাৎ অভিযান চালানো হয়। সোজা ডেরায় পৌঁছে যায় পুলিশ। চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়। অভিযানে নওয়াব আলি, আলি রাজা লালু আলি, আমজাদ আলি, ফিরোজ আলি, আলি বাগওয়ান এবং একবাল বরকত আলিকে গ্রেফতার করা হয়।