ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA), মহারাষ্ট্রের পুনেতে আইএসআইএস মডিউলের তদন্ত করছে। তাতে চমকপ্রদ চার্জশিট প্রকাশ করেছে তারা। আদালতে দাখিল করা এই চার্জশিটে এনআইএ দাবি করেছে,তারা বড় সন্ত্রাসবাদী কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কোড ওয়ার্ডটি বিখ্যাত সংস্থাগুলিতে কাজ করা শিক্ষিত সন্ত্রাসবাদীরা তৈরি করে। এ ছাড়া বোমা তৈরিতে যে উপাদান ব্যবহার করা হয় তার একটি কোড নামও দেওয়া হয়।
অনেক রাজ্যে রেইকি করা হয়েছিল
বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক সামগ্রী সংগ্রহ করতে সন্ত্রাসবাদীরা ভিনেগার, শরবত এবং গোলাপ জলের মতো কোড ওয়ার্ড ব্যবহার করছিল। ভিনেগার মানে সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4), গোলাপ জল মানে অ্যাসিটোন এবং শরবত মানে হাইড্রোজেন পারক্সাইড। সন্ত্রাসী হামলার জন্য মহারাষ্ট্র, গোয়া, কেরালা এবং কর্ণাটকে রেইকি করা হয়েছিল। এক সন্ত্রাসী লক্ষাধিক টাকার হিমায়ান বাইক ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য বিভিন্ন রাজ্যে রেইকি চলছিল।
একজন সন্ত্রাসবাদীর কাছে ৩১ লক্ষ টাকার প্যাকেজ ছিল
শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসবাদীরা ভিডিওগ্রাফি এবং ফটোগ্রাফির জন্য একটি ড্রোন কিনে ব্যবহার করেছিল। এনআইএ ড্রোনটি বাজেয়াপ্ত করেছে। এনআইএ চার্জশিটে প্রকাশ করেছে, গ্রেফতার করা সন্ত্রাসীদের বেশিরভাগই প্রযুক্তিগত দিকে শিক্ষিত। গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের মধ্যে জুলফিকার একটি বহুজাতিক আইটি কোম্পানিতে সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছিলেন। বার্ষিক ৩১ লক্ষ টাকার প্যাকেজে কাজ করে তারা।
আরও এক ধৃত শাহনেওয়াজ একজন মাইনিং ইঞ্জিনীয়র। তার বিস্ফোরকের বিষয়ে জ্ঞান অনেক। ধৃত কাদির পাঠান গ্রাফিক্স ডিজাইনারের কাজ করত। এরা আইইডি তৈরি করতে যে জিনিসগুলি ব্যবহার করে তা দেখে অবাক হয়ে যায় এনআইএও। আইইডি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে সহজলভ্য জিনিসপত্র। সন্ত্রাসবাদীরা ওয়াশিং মেশিনের টাইমার, থার্মোমিটার, স্পিকারের তার, ১২ ভোল্টের বাল্ব, ৯ ভোল্টের ব্যাটারি, ফিল্টার পেপার, ম্যাচস্টিক, সোডা পাউডার ব্যবহার করছিল।
জঙ্গলে গড়ে তোলা হয়েছিল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
পুনের জঙ্গলে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছিল যেখানে তারা আইইডি তৈরি করত। হত ট্রায়াল পরিচালনা। NIA অভিযোগপত্রে প্রকাশ করেছে যে অভিযুক্ত আকিফ নাচান ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মধ্যপ্রদেশের রতলামে সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিয়েছিল। প্রশিক্ষণ শিবিরটি একটি পোল্ট্রি ফার্মে আয়োজিত হয়েছিল যেখানে আইইডি তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।
সন্ত্রাসীর হার্ডডিস্ক থেকে কিছু নথি উদ্ধার করা হয়েছে যাতে লেখা ছিল, 'কাফেরদের ক্ষতি করার পদ্ধতি- কার্ড বোর্ডে পেরেক দিয়ে গাড়ি উল্টে দেওয়া, রাস্তার মোড়ে গ্রীস লাগানো, পেট্রোল ও থার্মোকল মেশানো এবং গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এনআইএ চার্জশিটে প্রকাশ করা হয়েছে ২০২০ সালে আফগানিস্তানে বড় সন্ত্রাসী হামলায় কেরালার উগ্র যুবকরা জড়িত ছিল।
বিদেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ
চার্জশিট অনুযায়ী, আফগানিস্তানের জালালাবাদের জেলে ২০২০ সালের ২-৩ আগস্ট আইআইসি সন্ত্রাসবাদীরা হামলা চালিয়েছিল। হামলায় ২৯ জন নিহত হয়, যার মধ্যে কয়েকজন ভারতীয়ও ছিল। আইএসআইএসের মোট ৮ জন সন্ত্রাসী এই হামলা চালায়। সেই আইএসআইএস সন্ত্রাসীদের নেতা, আবু রায়ান আল হিন্দি, কেরালার বাসিন্দা, এবং আরও দুই সন্ত্রাসবাদী, আবু রাওয়াহা আল হিন্দি এবং আবু নোয়া আল হিন্দিও কেরালার বাসিন্দা।
এনআইএ অভিযোগপত্রে বলেছে, গ্রেফতার সন্ত্রাসবাদীরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিদেশে বসে থাকা হ্যান্ডলারের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগে ছিল এবং তার নির্দেশে ক্রমাগত কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করছিল। সন্ত্রাসবাদীরা বিদেশ থেকে অর্থও পাচ্ছিল।