দামোদর নদের পাশেই চলছে অবৈধ বালি খাদান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিভিন্ন সরকারি সভায় বালি মাফিয়াদের হুঁশিয়ারি দিলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, কেউ নদ বা নদীর বালি যেন না কাটে। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই বালি পাচারের সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ এবং প্রশাসন যুক্ত বলে অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রী কড়া হাতে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। তবে কে শোনে কার কথা?
পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর বিধানসভার দক্ষিণ মৌজার সাহাহোসেনপুর এলাকায় দিনে দুপুরে বালি কাটছে মাফিয়ারা। অভিযোগ পুলিশ এবং প্রশাসন এ বিষয়ে নীরব দর্শক। গ্রামের যারা মানুষ সাধারণ মানুষ থেকে মধ্যবিত্ত তাঁরা এই বালি মাফিয়াদের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। বিরোধী দল বললেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। খোদ শাসক দলের অন্ধরে এই বালি মাফিয়ারা বিভিন্নভাবে যুক্ত বলে অভিযোগ। কোটি কোটি টাকার বালি জামালপুর হয়ে কলকাতা এবং উত্তরবঙ্গে চলে যাচ্ছে ডাম্পার বোঝাই করে। এর ফলে গ্রামীন সড়ক রাস্তা বেহাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে হেবি লোডের বালি ডাম্পারগুলি যাওয়ার কারণে।
গ্রামের মানুষ মুখ খুললেই বিপদ। দিনের বেলা যা পরিস্থিতি, সন্ধে নামলেই বালির ডাম্পার জামালপুরে গ্রামের ভেতর দিয়ে কারলাঘাট ব্রিজ হয়ে সোজা পৌঁছে যাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তরে। এখানেই উঠছে প্রশাসনের ভূমিকা। পশ্চিমবঙ্গ খনিজ দপ্তর এই বালি মাফিয়ার দের দৌরাত্ম্য রুখে দেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে তা কিন্তু হচ্ছে না। ফলে বালি মাফিয়ারা ফুলে ফেঁপে উঠছে। জামালপুরের জুড়ে চলছে অবৈধ বালি খাদান। গ্রামের মানুষ বহুবার জেলাশাসককে অভিযোগ জানিয়েছেন তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আর 'খুললম খুল্লা' জামালপুরে চলছে অবৈধ বালির ব্যবসা।
দামোদরের ঘাট থেকে বালি লোড প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের ভূমি ও বন স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ নিত্যানন্দ ব্যানার্জি বলছেন, "সরকারের নির্দেশ আছে পরিষ্কার করে কাজ করা। অনৈতিক কোনও কাজে কাউকে কোনও সাহায্য না করা হয় সেটা দেখা। আমি সমস্ত জায়গা পরিদর্শনে যেতে পারি না। পুলিশ ও ভূমি দপ্তরকে বলেছি। যদি কোনও বেআইনি কাজ আমার নজরে আসে তাহলে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
একই সঙ্গে তিনি বলেন, "আমি এই বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অবৈধভাবে বালি তোলা হলে সেই এলাকার ওসি, BDO, BLRO জানতে পারবেন।"
এখানেই প্রশ্ন উঠছে শাসক দলের ভূমিকা নিয়ে। সামনে বিধানসভা নির্বাচন গ্রামবাসীদের অভিযোগে অবৈধ বালির টাকা বিভিন্নভাবে শাসক থেকে প্রশাসনের কাছে পৌঁছে যায় তারা ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে নারাজ। তাঁদের অভিযোগ এই গোটা বিষয় নিয়ে প্রশাসন এবং মুখ্যমন্ত্রী কি জানেন না? নাকি চুপচাপ হজম করছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন সাত লক্ষ হাজার কোটি টাকা দেনা নিয়ে রাজ্য চলছে। অথচ এই বালি মাফিয়ারা যেভাবে বালি লুঠ করছে তাতে সরকারের রাজস্ব কোষাগারে সে অর্থ পৌঁছচ্ছে না। তার মানেই গলদ আছে। এখন দেখার প্রশাসন আদৌ কী ব্যবস্থা নেয় বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে।