scorecardresearch
 

RG Kar Murder Case: সাইকোপ্যাথদের ব্রেনে থাকে ত্রুটি, খুন করতে পারে; কাউকে দেখে কি বোঝা সম্ভব?

তদন্তকারীরা বলছেন, সঞ্জয়ের মদ্যপান এবং 'বিকৃত পর্নে'র আসক্তি ছিল। তার ৩ স্ত্রী সংসার ছেড়ে পালিয়েছেন। আর আরজি করে তার বিরুদ্ধে যেভাবে নৃশংস হত্যার অভিযোগ আসছে, সেটাও শিউড়ে ওঠার মতো। এই ধরনের নৃশংস হত্যাকারীদের একটি আলাদা ক্যাটাগরিতে ফেলেন মনোবিদরা। তাঁদের মতে, এই ধরনের হত্যাকারীর মন সাধারণ মানুষ বা যারা হঠাৎ রাগের বশবর্তী হয়ে খুন করে, তাদের থেকে আলাদা।

Advertisement
কেউ কীভাবে ঠান্ডা মাথার খুনিতে পরিণত হয়? কেউ কীভাবে ঠান্ডা মাথার খুনিতে পরিণত হয়?
হাইলাইটস
  • আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক নির্যাতন ও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়।
  • এই সঞ্জয়কেই 'অভ্যাসগত অপরাধী' বলছেন তদন্তকারীরা।
  • কীভাবে একজন সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কে অপরাধ ঘটনোর প্রবণতা বাসা বাঁধে?

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক নির্যাতন ও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়। এই সঞ্জয়কেই 'অভ্যাসগত অপরাধী' বলছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু কেন? কীভাবে একজন সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কে অপরাধ ঘটনোর প্রবণতা বাসা বাঁধে?

তদন্তকারীরা বলছেন, সঞ্জয়ের মদ্যপান এবং 'বিকৃত পর্নে'র আসক্তি ছিল। তার ৩ স্ত্রী সংসার ছেড়ে পালিয়েছেন। আর আরজি করে তার বিরুদ্ধে যেভাবে নৃশংস হত্যার অভিযোগ আসছে, সেটাও শিউড়ে ওঠার মতো।

এই ধরনের নৃশংস হত্যাকারীদের একটি আলাদা ক্যাটাগরিতে ফেলেন মনোবিদরা। তাঁদের মতে, এই ধরনের হত্যাকারীর মন সাধারণ মানুষ বা যারা হঠাৎ রাগের বশবর্তী হয়ে খুন করে, তাদের থেকে আলাদা।

বিজ্ঞানের কাছেও সব উত্তর নেই

'অপরাধপ্রবণ মন' শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল ১৯২৮ সালে। মনোবিজ্ঞানের জার্নালে উল্লেখ করে লেখা হয়েছিল যে, এই অপরাধমূলক মানসিকতার লোকেরা সবচেয়ে বিপজ্জনক। তারা এক-দু'জন নয়, সমগ্র মানবসমাজের জন্য বিপজ্জনক।  

আরও পড়ুন

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগে থেকে কারও মধ্যে এমন প্রবণতা আছে কিনা, সেটা বলাও অসম্ভব। মানুষ অনেক সময় প্ররোচনায় পড়ে ভুল করে ফেলে। পরে সেটা আড়াল করতে গিয়ে আরও অন্যায় করতে থাকে। সেটাকে 'কোল্ড ব্লাডেড' মার্ডার বলা যায় না। 

kolkata doctor rape murder and bareilly serial murder brain of a psychopath photo PTI

মস্তিষ্কের এই অংশটি আলাদা হয়

নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে, নিউরোক্রিমিনোলজিস্ট অ্যাড্রিয়ান রায়ান আমেরিকার কারাগারে থাকা কিছু ঠান্ডা মাথার খুনিদের পর্যবেক্ষণ করেন। ৪০ জনেরও বেশি বন্দীর PET (পজিট্রন এমিশন টোমোগ্রাফি) করেছিলেন। স্ক্যানে দেখা ।যায়, এই খুনি আসামীদের  মস্তিষ্কের বেশ কিছু অংশ সাধারণ মানুষের তুলনায় সঙ্কুচিত। বিশেষ করে প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স।

এই প্রি-ফন্ট্রাল কর্টেক্স মস্তিষ্কের এমন একটি অংশ, যা আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়। খুনের মাইন্ডসেটের সঙ্গে তাই এই প্রি-ফন্ট্রাল কর্টেক্স ছোট হওয়ার যোগ রয়েছে বলে মনে করা হয়েছিল। তবে স্যাম্পেল সাইজ অনেকটাই ছোট হওয়ায় এই গবেষণা নিয়ে সেভাবে আলোচনা হয়নি। তাছাড়া সঙ্কুচিত প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স মানেই সেই ব্যক্তি অপরাধপ্রবণ হবে, এমনটা দেগে দেওয়ারও কোনও যুক্তি হয় না।

Advertisement

অনেক পরে, দ্য অ্যানাটমি অফ ভায়োলেন্স নামে একটি বই বের হয়েছিল। যেখানেও ডঃ রায়ান অপরাধীদের মনের উপর তার ৩৫ বছরের গবেষণার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন।

মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে কেন এই সংকোচন ঘটে?

বিজ্ঞানীদের মতে, এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। জেনেটিকও হতে পারে, আবার কখনও কখনও মাথায় গভীর আঘাত থেকেও এমনটা হতে পারে। এমনটাও হতে পারে যে, কেউ শৈশবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। প্রায়শই দেখা যায়, অপরাধপ্রবণ, ঠান্ডা মাথার খুনিরা ছোট থেকে একটা কঠিন জীবনযাপন করেছে। ছোট থেকে অনেক সম্পর্কের জটিলতা দেখেছে। 

kolkata doctor rape murder and bareilly serial murder brain of a psychopath photo Getty Images

একজন সাধারণ মানুষ এবং একজন সিরিয়াল কিলারের মানসিক দিক থেকে বেশ কিছু পার্থক্য থাকতে পারে। এর ফলে তাদের চিন্তাভাবনা এবং উপলব্ধির ক্ষমতায় প্রভাব পড়ে। তবে সব সাধারণ মানুষের ব্রেন একরকম নয়। তেমনই সব সিরিয়াল কিলারের মগজই যে একই রকম হবে, তা কিন্তু নয়।

এই পার্থক্যগুলি থাকতে পারে

- সিরিয়াল কিলারদের অ্যামিগডালার আকার স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট বা সঙ্কুচিত হতে পারে। এটি মানসিক, আবেগের প্রতি প্রতিক্রিয়া হ্রাস করে। হত্যাকারী কেবল নিজের সম্পর্কেই চিন্তা করে। অন্যের যন্ত্রণা বুঝতে পারে না।

- মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে। আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং বিবেক বোধ নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের এই অংশ।

- শৈশবে বাড়়িতে, স্কুলে বা সামগ্রিকভাবে সমাজে খারাপ আচরণের শিকার হলে, তা মস্তিষ্কের গঠনকেও প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতে হিংসাত্মক আচরণের প্রবণতা হতে পারে।

difference in normal and serial killer brain

কিছু মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যও রয়েছে

এই ধরনের মানুষ সাধারণত সাংঘাতিক আত্মমগ্ন হয়। তারা নিজেদের ছাড়া আর কাউকে নিয়ে এক ফোঁটাও চিন্তা করতে পারে না। অর্থাৎ উগ্র নার্সিসিজমের লক্ষণ থাকতে পারে। এই ধরনের মানুষ আঘাত পেলে, পরে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে কাউকে হত্যাও করতে পারে। এদের মধ্যে কোনও অপরাধবোধ নেই। সাধারণত অপরাধীরাও অপরাধ করার পর ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু একজন ঠাণ্ডা মাথার খুনি খুব শান্তভাবে তার অপরাধ স্বীকার করে।

খুন করার সময় মনের ভেতর দিয়ে কী যায়?

কেউ হঠাৎ রাগের বশে এমন অপরাধ করলে, সেই মুহূর্তে তার মনে কোনও ভয়ডর থাকে না। বরং সে নিজেকে চরম শক্তিশালী অনুভব করে। খুনির মস্তিষ্কে হ্যাপিনেস হরমোন ডোপামিন এবং অ্যাড্রেনালিন ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই হরমোনের জোয়ার কিছুক্ষণ পর কমে যায়। তখনই তার মনে চরম ভয় জাঁকিয়ে বশে।

আবার এই ভয়টাও কিন্তু একটা অদ্ভুত প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা। এটা অপরাধীদের প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করতে প্ররোচিত করে। এতে অপরাধী রাগের বশবর্তী হয়ে অন্যায় করলেও ভয়ের ফলে প্রমাণ নষ্টের চেষ্টা করে।

kolkata doctor rape murder and bareilly serial murder brain of a psychopath photo Pixabay

জিনও কিছুটা দায়ী

একটি বিশেষ জিনও আছে, যার অনুপস্থিত কোনও ব্যক্তি ঠান্ডা মাথার খুনি হয়ে উঠতে পারে। একে MAOA (মনোমাইন অক্সিডেস এ) বলা হয়। এটি সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের মতো হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলি মেজাজ, আবেগ, ঘুম এবং ক্ষুধার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। এই জিনের অনুপস্থিতিতে হরমোনের ব্যালেন্স বিগড়ে মানুষ বদমেজাজী বা আবেগহীন হয়ে উঠতে পারে।

এই কারণেই MAOA কে ওয়ারিয়র জিন বা সিরিয়াল কিলার জিনও বলা হয়।

পুরুষদের মধ্যেই এটা বেশি হয়

পুরুষদের মধ্যেই এই জিনের অনুপস্থিতির ঝুঁকি বেশি। মহিলারা এটির বাহক হিসাবে কাজ করে, অর্থাৎ এটি এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে বহন করে। পরিবারের ভালোবাসা এবং ভালো খাদ্যাভ্যাস থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই জিনের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।

কিন্তু যেসব বাড়িতে বাবা-মায়ের মধ্যে মারামারি বা বচসা হয়, সেসব বাড়ির শিশুদের মধ্যে এই জিন কম থাকলে রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই শিশুরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার অপরাধমূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে শুরু করে। ভবিষ্যতে তারা খুনও করে ফেলতে পারে।

বিঃ দ্রঃ- এটি বিভিন্ন গবেষণা ও প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর রচনা মাত্র। এটি বিশেষজ্ঞ মতামত বা গবেষণা সমীক্ষা নয়।

Advertisement

Advertisement