এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গ থেকে এক সাজাপ্রাপ্ত বন্দির দেহ উধাও এর অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় চলছে। পরিবারের তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত সূত্রে খবর, মামলাটি গ্রহণ করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী মঙ্গলবার ওই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে একটি খুনের অভিযোগে হাওড়ার আমতা থানার পুলিশ বিপ্লব কোল্লে নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। হাওড়া জেলা আদালত বিপ্লবকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছিল। প্রথমে তাকে রাখা হয়েছিল হাওড়া জেলে। পরে ২০১৯ সালে বিপ্লবকে প্রেসিডেন্সি জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই ছিল ওই বন্দি।
নিহত বন্দির পরিবারের তরফে আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন আইনজীবী তাপস ভঞ্জ। লিখিত পিটিশনে আদালতকে তিনি জানিয়েছেন, গত ২০ অক্টোবর প্রেসিডেন্সি জেলের মধ্যেই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় সাজাপ্রাপ্ত বন্দি বিপ্লব কোল্লের। হাসপাতালের মর্গেই রাখা ছিল তার দেহ। পরের দিন ২১ নভেম্বর ম্যাজিসট্রেটের উপস্থিতিতে দেহ ময়ানতদন্তের কথা ছিল। কিন্তু ম্যাজিসট্রেট গিয়ে দেখেন মর্গে দেহ নেই। এরপরই পরিবারের তরফে আদালতে মামলা দায়ের করেন তাপসবাবু।
এদিকে এমন ঘটনা এসএসকেএম হাসপাতালে আগে ঘটেছে বলে কেউ মনে করতে পারছেন না। পুলিশ সূত্রে খবর, ঠিক ১৫ বছর আগে হাওড়ার জগাছায় এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে খুন করে বাবলু পোল্লে। অভিযুক্তের বাড়ি আমতায়। তার বিরুদ্ধে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে হাওড়া থেকে গ্রেফতার করে জগাছা থানার পুলিশ। তখন থেকে হাওড়া জেলেই ছিল সে। চার্জশিট জমা পড়েছে আগেই। বিচার প্রক্রিয়া এখনও চলছে। তার মধ্যেই একাধিক রোগে আক্রান্ত হয় বাবলু পোল্লে। তখন হাওড়া জেল কর্তৃপক্ষ তাকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে স্থানান্তরিত করে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছিল।
সূত্রের খবর, অক্টোবর মাসের ২০ তারিখ আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই বন্দি। তখন তাকে চিকিৎসার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর সেদিনই মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু মর্গে দেহ পাঠানো হলে সেখান থেকে লোপাট হয়ে যায় বলে অভিযোগ। এই ঘটনা এসএসকেএম হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয় হেস্টিংস থানাকে। পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে দেহ দেখে আসে। তারপর নিয়ম অনুযায়ী একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে। আর খবর দেওয়া হয় প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু দেহ লোপাট হল কী করে? এই প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশকে।
বিপ্লবের বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করে পুলিশ। তারা দেহ শনাক্ত করার জন্য পরিবারের সদস্যদের খবর পাঠায়। মৃতের পরিবারের সদস্যরা এসএসকেএম হাসপাতালে ছুটে আসেন। যদিও পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালের মর্গে যে দেহ দেখানো হয় সেটা বিপ্লবের নয়। তাহলে দেহটি কোথায় গেল? অন্য কোনও পরিবারকে ভুল করে দেওয়া হয়েছে বাবলুর দেহ! এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।