সকালে ঘুম থেকে উঠেই যেন এক দুঃস্বপ্নের দৃশ্য। পাড়ার রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাধিক পথকুকুরের দেহ।গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল আসানসোলের হিরাপুর থানা এলাকায়। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, কুকুরগুলিকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, কুকুরগুলিকে সম্ভবত রাতে বিষ মেশানো খাবার খাওয়ানো হয়েছিল। ভোরবেলায় উঠেই রাস্তায় একের পর এক কুকুরের দেহ পড়ে থাকতে দেখে হতবাক হয়ে যান পথচলতি মানুষজন। ঘটনার নৃশংসতায় প্রাণীপ্রেমীরা তো বটেই, সাধারণ পথচলতি মানুষও হতচকিত।স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত। ঘটনার পরই অভিযোগ দায়ের হয়েছে হিরাপুর থানায়। অভিযোগে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, পরিকল্পনা করে বিষ মিশিয়েই মেরে করা হয়েছে নিরীহ কুকুরগুলিকে।
একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনায় ইতিমধ্যেই একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযুক্ত ব্যক্তি বাড়িতে মুরগি পোষেন। সম্ভবত কোনও পথকুকুর সেই পোষা মুরগি মেরে খেয়েছিল। সেই রাগেই পাড়ার সমস্ত কুকুরকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সূত্রের খবর, এদিন পাড়ায় ভোরবেলায় চেঁচামেচি শুরু হতেই সকলে বেরিয়ে আসেন। এই দৃশ্য দেখে সকলের হাড়হিম হয়ে যায়। রাস্তায় ভিড় জমে যায়। চোখের সামনে এতগুলি কুকুরের দেহ পড়ে থাকতে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। 'এভাবে নির্বিচারে এতগুলি কুকুর মেরে ফেলা যায়? আমরা অবিলম্বে দোষীর কঠোর শাস্তি চাই,' দাবি স্থানীয়দের।
তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক জানান, 'একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।'
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের আবহেই বিতর্ক
এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই ফের শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। অতি সম্প্রতিই সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি এনসিআর অঞ্চলের রাস্তার কুকুরদের নিয়ে বড় রায় দেয়। আদালত জানায়, সমস্ত পথকুকুরকে অবিলম্বে শেলটারে পাঠাতে হবে। তবে ২২ অগাস্ট পুনরায় রায় দিয়ে আদালত জানায়, নির্বীজকরণ করা কুকুরদের তাদের পুরনো এলাকায় ফিরিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে যেসব কুকুর হিংস্র আচরণ করছে বা জলাতঙ্কে আক্রান্ত, তাদের শেলটারে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
নতুন রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, দিল্লি এনসিআর অঞ্চলে রাস্তার কুকুরদের নির্বীজকরণ এবং টিকাকরণের কাজ চলবে। সেই সঙ্গে রাস্তার কুকুরদের খাওয়ানোতেও নিয়ম জারি করা হয়। বলা হয়, কুকুরদের নির্দিষ্ট শেড দেওয়া স্থানে নিয়ে গিয়ে খাওয়াতে হবে। পাবলিক প্লেস বা অন্যের ব্যক্তিগত জমিতে খাওয়ানো যাবে না। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে ও কুকুরদের ভিড় এড়াতেই এই নির্দেশ বলে মনে করা হচ্ছে।
কুকুরদের নির্বীজকরণের প্রস্তাবে সমর্থন পশুপ্রেমীদেরও
পশুপ্রেমীরা বলছেন, নির্বীজকরণই একমাত্র 'প্র্যাকটিকাল' উপায়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিও চায় রাস্তায় পথকুকুরের সংখ্যা কমুক। আর তার একমাত্র মানবিক পথ এই নির্বীজকরণই। তাই আদালতের প্রস্তাবকে সমর্থনই করছেন তাঁরা।
তবে এমনই প্রেক্ষাপটে আসানসোলের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছে সকলকে। প্রাণী অধিকার কর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, 'রাস্তার কুকুরদের নিয়ে সমাজে সচেতনতা না বাড়ালে এরকম নৃশংস ঘটনা থামবে না।'
তদন্তকারীদের দাবি, স্থানীয় সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃত কুকুরগুলির নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।