শ্বশুরবাড়িতে ছেলেদের নিয়ে থাকেন বৃদ্ধা। সেই সুযোগে বাপের বাড়ির এলাকায় পড়ে থাকা সম্পত্তি হাতাতে জীবিত বৃদ্ধার ডেথ সার্টিফিকেট বের করে জালিয়াতির চেষ্টা এক ব্যাক্তির। সম্পত্তি রেজিষ্ট্রির জন্য নামান্তর পর্বে তথ্য যাচাই করতে যেতেই বৃদ্ধার ছেলেদের থেকে আধিকারিকরা জানতে পারেন ডেথ সার্টিফিকেটে দেখানো ২০ বছর আগে মৃত বৃদ্ধা বেঁচে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। ঘটনায় কাঠগড়ায় শংসাপত্র দেওয়া গ্রামপঞ্চায়েত প্রধানসহ স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ধরা পড়ে অপরাধ স্বীকার অভিযুক্তের। পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছেন বৃদ্ধার পরিবারের লোকজন। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরে চন্দ্রকোনা থানার ধরমপুর গ্রামে।
জানা গিয়েছে, ধরমপুর গ্রামের ৭৪ বছর বয়সী বৃদ্ধা অন্নপূর্ণা পাঁজার বাপের বাড়ি গড়বেতা থানার ফতেগড় গ্রামে৷ শ্বশুরবাড়ি চন্দ্রকোনার ধরমপুরে। ধরমপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে স্বামী রাসবিহারী পাঁজা ও তিন ছেলের সংসারে থাকেন ওই বৃদ্ধা। অন্নপূর্ণা পাঁজার ছেলেদের দাবি, গড়বেতার ফতেগড় গ্রামে তাঁদের দাদুর (অন্নপূর্ণা পাঁজার বাবা) রেখে যাওয়া কিছু সম্পত্তি ও জমি জায়গা রয়েছে। দাদুর দুই মেয়ে, তারমধ্যে একজন মারা গিয়েছেন। বর্তমানে অপর মেয়ে তথা তাঁদের মা অন্নপূর্ণা পাঁজা জীবিত রয়েছেন। দাদুর কোনও ছেলে না থাকায় তাঁদের মা অন্নপূর্ণা পাঁজাই এখন বাপের বাড়ির পড়ে থাকা সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকার বলে দাবি বৃদ্ধার ছেলেদের।
বৃদ্ধার ছেলেদের অভিযোগ, মায়ের বাপের বাড়িতে পড়ে থাকা সম্পত্তি হাতানোর জন্য ফতেগড় গ্রামের বাসিন্দা সুদর্শন মল্লিক মৃত্যুর ভুয়ো শংসাপত্র তৈরি করে প্রতারণার চেষ্টা করেছে। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, ২০ বছর আগে মৃত্যু হয়েছে অন্নপুর্না পাঁজার। প্রধানের দেওয়া মৃত্যুর সংশাপত্র নিয়ে মেদিনীপুরের শিরোমনি এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সরকারি ডেথ সার্টিফিকেটও বের করা হয়েছে। তারপর বিভিন্ন দফতর থেকে তাঁদের মায়ের নামে ভুয়া শংসাপত্র বের করে বাপের বাড়ির সম্পত্তি হাতানোর চেষ্টা করে সুদর্শন মল্লিক। বেশকিছু দিন আগে সুদর্শন মল্লিক তাঁদের মায়ের বাপের বাড়ির সম্পত্তি নিজের নামে করতে গড়বেতা ৩ নম্বর ব্লকের বিএলআরও দফতরে জমির রেকর্ডের জন্য আবেদন করে। এরপর দফতর থেকে এনকোয়ারি করতে গেলে সুদর্শন মল্লিকের প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারেন বৃদ্ধা অন্নপূর্ণা পাঁজার ছেলেরা।
এই ঘটনায় পঞ্চায়েতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বৃদ্ধার ছেলেরা। বৃদ্ধার ছেলে কমল পাঁজা বলেন, "আদালতে থেকে পর্যন্ত নকল কাগজ তৈরি করে ফেলেছে অভিযুক্ত ৷ মা জীবিত, অথচ তাঁর নামে ডেথ সার্টিফিকেট ৷ পঞ্চায়েত থেকে প্রধান সকলেই জড়িত এই কান্ডে৷" অন্যদিকে, আমশোল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান উমারানি মাল জানান, "জন্ম মৃত্যুর সার্টিফিকেট আমরা দিতে চাই না কিন্তু পঞ্চায়েত সদস্যরা চাপ দেয়, সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সদস্যদের কথায় কিছু ক্ষেত্রে দিয়ে দিতে হয়। এক্ষেত্রে যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে আলোচনা করে খতিয়ে দেখা হবে।"
আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সুদর্শন মল্লিক অবশ্য তার অপরাধের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। সে বলে, অন্নপূর্ণা পাঁজা সম্পর্কে তার পিসি হন। তাঁর বাপের বাড়িতে পড়ে থাকা একটি জমি আগে তাঁরা নিজেরা চাষ করতেন৷ কিন্তু টাকা পয়সা নিয়ে তাঁরা জমিটি তাকে ছেড়ে দেয়৷ বহু বছর ধরে সেই জমিতে চাষ করছে সে। সেই জমির কাগজ না থাকায় সে আবেদন করে৷ কিন্তু দফতর থেকে মঞ্জুর করছিল না বলেই এই পথ অবলম্বন করে সে৷
আরও পড়ুন - পুঁজি ছাড়াই ৩০ কোটি টাকা রোজগার ১২ বছরের কিশোরের, কীভাবে?