সব জল্পনা কল্পনার আপাতত অবসান। দ্বিতীয়বার দেশে ক্ষমতায় আসার ২ বছর পর মোদী মন্ত্রিসভার সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। বুধবার রাষ্ট্রপতি ভবনে একে একে শপথ নিলেন ৪৩ জন মন্ত্রী। যাঁদের মধ্যে মহিলা মন্ত্রীর সংখ্যা ৭। আর এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চর্চা শরু হয়েছে প্রতীমা ভৌমিককে ঘিরেই। দেশের রাজনীতিতে আগে তেমন ভাবে কখনও শোনা যায়নি তাঁর নাম।
বুধবার বিকেল ৬টায় শুরু হয়েছিল রাষ্ট্রপতি ভবনে একের পর এক মন্ত্রীর শপথগ্রহণ। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তখন লাইভ চলছে সেই শপথগ্রহণ। আর এর মাঝেই উচ্চারিত হয় প্রতিমা ভৌমিকের নাম। নাম শুনেই এবং শপথপাঠ করার সময় উচ্চারণেই বোঝা যায় তিনি বাঙালি। জানা যায় প্রতিমা ভৌমিক বিপ্লব দেবের রাজ্য ত্রিপুরার বিজেপি সাংসদ।
গত লোকসভা ভোটের পর মোদী মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছিলেন রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন দেবশ্রী। তিনিই ছিলেন মোদী মন্ত্রিসভার মহিলাদের মধ্যে প্রথম বাঙালি। কিন্তু মোদী মন্ত্রিসভার রদবদলে এবার মন্ত্রীত্ব যায় দেবশ্রীর।
দেশের আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির মা বাঙালি হলেও তাঁর জন্ম গুজরাতি পরিবারে। স্মৃতি ভাল বাংলাও বলেন। তবে তাঁকে পুরো বাঙালি বলা যাবে না। সেক্ষেত্রে প্রতিমাই মোদী মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় বাঙালি মহিলা মুখ।
বালুরঘাটের মেয়ে দেবশ্রী বাদ পড়লেও প্রতিমাকে দিয়ে বাঙালি নারীশক্তির প্রতিনিধিত্ব কিন্তু বজায় থাকল মোদী ক্যাবিনেটে। ত্রিপুরা পশ্চিম কেন্দ্র থেকে ২০১৯ সালে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন প্রতিমা ভৌমিক৷
ত্রিপুরায় যখন বিজেপিকে দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হত সেই সময় থেকেই গেরুয়া শিবিরের কাজ করে গিয়েছেন প্রতিমা ভৌমিক। ১৯৯১ সালে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। তখন থেকেই সক্রিয় সদস্য ছিলেন বিজেপির। ত্রিপুরায় বিজেপিকে ক্ষমতায় আনার পিছনে রয়েছে প্রতিমা ভৌমিকের মতো লড়াকু নেত্রীর অবদান। ১৯৯৮ সাল থেকে টানা ত্রিপুরার ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়াই করেছেন প্রতীমা।
২০১৮ তে ত্রিপুরায় বিজেপি ক্ষমতায় এলেও জিততে পারেননি তিনি। হেরে যান ধনপুর কেন্দ্রে। জয়ী হন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। কিন্তু তা সত্ত্বেও লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে চলে যাননি প্রতিমা ভৌমিক। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম ত্রিপুরা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে ভোটে লড়াই করেন প্রতিমা ভৌমিক। এনে দেন বিজেপিকে কাঙ্খিত জয়। সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক বিজেপির কর্মী-সমর্থক এবং ত্রিপুরাবাসীর কাছে ‘দিদি’ বলেই পরিচিত।
১৯৬৭ সালে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী হন ত্রিপুরা থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভার সাংসদ ত্রিগুনা সেন৷ তিনি অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ছিলেন৷ ১৯৯১ সালের সন্তোষ মোহন দেব ত্রিপুরা পশ্চিম কেন্দ্র থেকে জিতে উত্তর পূর্বের রাজ্য থেকে প্রথমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন৷ তার তিন দশক পর ফের ওই কেন্দ্রেরই সাংসদ প্রতিমা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেন৷ তবে সন্তোষ মোহন দেবও ত্রিপুরার বাসিন্দা ছিলেন না৷ সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে ত্রিপুরার প্রথম বাসিন্দা হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেন প্রতিমা ভৌমিক।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব প্রতীমা মন্ত্রী হতেই ফেসবুকের পাতায় লিখেন, ত্রিপুরার জন্য এটা গর্বের বিষয়। নারীশক্তির প্রতিনিধি হিসাবে প্রতিমা ভৌমিক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছেন।
জানা যায় প্রতীমা দেবীর বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। তাঁর তিন ভাইবোন রয়েছে । বিজ্ঞানের স্নাতক প্রতিমা ভৌমিক গ্রামের বাড়ি সোনামুরাতে চাষ আবাদও করেছেন। ছোটবেলায় তিনি কবাডি ও খোখো খেলায় অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেন।
ত্রিপুরা বিজেপির যুব ও মহিলা শাখার সহ সভাপতি ছিলেন প্রতীমা। ২০১৬ সালে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে তৎকালীন সাংসদ শঙ্কর প্রসাদকে ৩ লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত করেন তিনি।