করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে হিমশিম খাচ্ছে গোটা দেশ। এর মধ্যেই চোখ রাঙাচ্ছে নয়া বিপদ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। বিপদ বলে বিপদ, ইতিমধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকোরমাইকোসিসকে মহামারি ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এই রোগকে মহামারি ঘোষণার জন্য প্রত্যেক রাজ্যকে চিঠিও পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
ইতিমধ্যেই রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং তেলঙ্গানায় ব্যাপক আকার নিয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। বাংলাতেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপস্থিতির কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যও এ নিয়ে নির্দেশিকা জারি হতে চলেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী।
এই আবহেই মহামারি সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে রাজ্যগুলিকে চিঠি পাঠিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্ম সম্পাদক লব আগরওয়াল। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, মিউকরমাইকোসিসের শনাক্তকরণ, নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নির্দেশিকা সমস্ত সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজগুলিকে মেনে চলতে হবে।
পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের চিঠিতে রাজ্যগুলিকে মহামারি আইন-এর অধীনে তালিকাভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে জানাতে হবে রাজ্যগুলিতে। ঠিক যেমনটা করতে হচ্ছে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী?
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকোরমায়কোসিস একটি বিরল ফাঙ্গাল সংক্রমণ ৷ এটি শরীরে দেখা দিলে ৫৪ শতাংশ রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে জানা গিয়েছে, কোভিড সংক্রমণ থেকে রোগী সুস্থ হয়ে উঠলেও তাঁর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায়। তখনই এই জাতীয় ছত্রাক শরীরে বাসা বাঁধে। যে সব রোগীকে দীর্ঘদিন আইসিইউ-তে রেখে চিকিৎসা করা হয়েছে এবং যাঁদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস রয়েছে, তাঁদের শরীরের এই জাতীয় সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে।
এই রোগের উপসর্গগুলির মধ্যে অন্যচম গালে ব্যথা। এটি গালের একপাশে বা উভয় দিকেই হতে পারে, এটিই এই ছত্রাকের সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ। পরে, এই সংক্রমণের কারণে, মুখের ক্ষতও তৈরি হতে পারে। এগুলি ছাড়াও এই সংক্রমণ ত্বক সম্পর্কিত আরও অনেক সমস্যার জন্ম দিতে পারে।
ফুসফুসে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গ— জ্বর, কফ, বুকে ব্যথা, বুকে জল জমা, শ্বাস নিতে সমস্যা। ফুসফুসে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের আক্রমণ নিশ্চিত হতে বুকের এক্স রে বা স্ক্যান করে দেখতে হবে। প্রয়োজনে বায়োপসি এবং ফাঙ্গাল কালচার করে দেখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
মাথা-নাক-চোখ সংলগ্ন অংশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গ- চামড়ায় কালো দাগ, নাক থেকে রক্ত বা কালো তরল বার হতে পারে, মুখের বিভিন্ন অংশে ব্যথা, ফুলে ও অবশ হয়ে যাওয়া, নাক বন্ধ , মাড়ি ফুলে যাওয়া, চোখে আবছা দেখা । মাথা-নাক-চোখ সংলগ্ন অংশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের জন্য এমআরআই, এন্ডোস্কপি এবং বায়োপসি করে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপস্থিতে টের পাওয়া যায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর সেরে ওঠার ২ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। মূলত ফুসফুস এবং মাথা-নাক-চোখ সংলগ্ন অংশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বাসা বাঁধে।
এইমস জানাচ্ছে, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগী, বেশি মাত্রায় স্টেরয়েড নেন যারা, তাদের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ৷ ক্যানসার বা অন্য কোনও জটিল রোগের চিকিৎসা যাদের অনেকদিন ধরে চলছে, তাদেরও এই ছত্রাক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ পাশাপাশি গুরুতর ভাবে কোভিডে আক্রান্ত, ভেন্টিলেটরে অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছেন, এমন রোগীরাও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হতে পারেন ৷