মঙ্গলবার ভোররাতে আচমকাই প্রবল বৃষ্টিতে উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে ঘটে গেল মেঘভাঙা বিপর্যয়। রাতের অন্ধকারে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ দুর্যোগে ভেসে গিয়েছে বাড়িঘর। বহু দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে গাড়িও। তাছাড়া, এখনও পর্যন্ত দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
রাজধানী দেরাদুনের বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র সহস্ত্রধারা এলাকার কার্লিগড়ে রাতে মেঘভাঙার ঘটনা ঘটেছে। এরপরেই ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়েছে।
মেঘভাঙার ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিখোঁজদের সন্ধানে চলছে তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান। খবর পেয়ে জেলা শাসক সাভিন বংশল, এসডিএম কুমকুম জোশি এবং অন্যান্য আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। জেলা শাসক উদ্ধারকর্মীদের দ্রুত নিখোঁজদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন।
এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, পিডব্লিউডি-সহ বিভিন্ন দফতরের কর্মীরা বুলডোজার নিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। এদিন ভারী বৃষ্টির কারণে দেরাদুনে সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা শাসক।
ভোর ৫টার দিকে মেঘ ভেঙে পড়ে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব বিনোদ কুমার সুমন বলেন, 'দেরাদুনের সহস্ত্রধারা এবং মাল দেবতা এবং মুসৌরি থেকেও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। দেরাদুনে দুই থেকে তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। মুসৌরিতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।'
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে টিম নিয়োজিত রয়েছে, এবং ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দেরাদুনে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে, যার ফলে পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। দেরাদুনের কাছে সেতুর একটি অংশও ভারী বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। দেরাদুন-হরিদ্বার মহাসড়কের ফান ভ্যালির কাছে এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখা গেছে।
দেরাদুনের মালদেবতার কাছে সং নদীর তীব্র রূপ দেখা যাচ্ছে। নদীটি অনিয়ন্ত্রিত গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে, সেতু ভেঙে পড়ছে।
তপকেশ্বর মহাদেব মন্দির প্রাঙ্গণে ১-২ ফুট ধ্বংসাবশেষ জমেছে। মন্দির এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেরাদুনের আইটি পার্কের কাছে রাস্তায় খেলনার মতো যানবাহন ভাসতে দেখা গেছে। দুইজন নিখোঁজ বলে জানা গেছে, যাদের খোঁজ চলছে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি জানিয়েছেন, তিনি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং পরিস্থিতি স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করছেন। এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘দেরাদুনে গত রাতে প্রবল বর্ষণে কিছু দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসন, এসডিআরএফ ও পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে নেমেছে। আমি নিজে বিষয়টির উপর নজর রাখছি’।
মেঘভাঙার পর ঋষিকেশের চন্দ্রভাগা নদীর জল রাস্তায় ঢুকে পড়েছে। এই ঘটনায় তিনজন মাঝপথে আটকে পড়েন। পরে এসডিআরএফের দল তাঁদের উদ্ধার করে।
পিথোরাগড় জেলায় ভারী ভূমিধসে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রশাসন যত দ্রুত সম্ভব রাস্তা খুলে দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।
প্রবল বর্ষণ, মেঘভাঙা আর ভূমিধসে এই বছরের বর্ষায় ইতিমধ্যেই উত্তরাখণ্ডের একাধিক এলাকা বিপর্যস্ত। উত্তরকাশীর ধরালি-হরশিল, চামোলির থারালি, রুদ্রপ্রয়াগের চেনাগাড়, পাউরির সেঁজি, বাগেশ্বরের কাপকোট ও নৈনিতালের একাধিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই বছরের এপ্রিল থেকে উত্তরাখণ্ডে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ১২৮ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন ৯৪ জন।
গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তরাখণ্ড সফরে দেরাদুনে এসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ পর্যালোচনা করেন। তিনি বিপর্যস্ত অঞ্চলের জন্য ১,২০০ কোটি টাকার বিশেষ আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে এই মরশুমে টানা ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি, বন্যা পরিস্থিতি, মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং বিধ্বস্থ জনজীবনের সাক্ষী থেকেছে।
কিছুদিন আগে উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। থারালি বাজার, কোটদীপ ও থারালি তহসিল কমপ্লেক্সে জল ও কাদামাটির স্রোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর স্থানীয় সূত্রে। বহু বাড়িঘর, এসডিএমের বাসভবন এবং অন্যান্য সরকারি ভবনও ক্ষতির মুখে পড়েছিল। তহসিল কমপ্লেক্সে পার্ক করা একাধিক গাড়ি কাদামাটির নিচে চাপা পড়ে। শহরের রাস্তাগুলি মুহূর্তের মধ্যেই পরিণত হয় পুকুরে।