রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অখিল ভারতীয় প্রতিনিধ সভা এবার বেঙ্গালুরুতে হতে চলেছে। ১৯ ও ২০ মার্চ এই সভা হওয়ার কথা। এই প্রথম আরএসএস-এর হেডকোয়ার্টার নাগপুরের বদলে এই সভা বসছে বেঙ্গালুরুতে। চলুন যেনে নেওয়া যাক সংঘের পথচলা কীভাবে শুরু হয়েছিল। নয় দশকের পথ চলার পর কী করে আরএসএস বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংগঠনে পরিণত হল।
পৃথিবীতে এমন কোনও সংগঠন সম্ভবত নেই, যার সঙ্গে সাংগঠনিক কাঠামো বা কাজের ধরনের দিক থেকে আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতা নাগপুর নিবাসী ডাক্তার কে. বি. হেডগেওয়ার। আরএসএস-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসাবে, তবে সবসময়েই সংঘের দর্শনে থেকেছে হিন্দু জাতীয়তাবাদ। এর প্রতিষ্ঠা দিবস ১৯২৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। এই বছরে বিজয়াদশমীর দিন ৯৬ বছর হতে চলেছে আরএসএস-এর। আর ২০২৫ সালে শতবর্ষ।
সংঘের প্রথম সরসঙ্ঘচলক হেডগেওয়ার নিজের বাড়িতে ১৭ জনকে নিয়ে একটি পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই বৈঠকে হেডগেওয়ারের সাথে বিশ্বনাথ কেলকার, ভাউজি কাভরে, আনা সাহনে, বালাজি হুদ্দার, বাপুরাও ভেদি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংঘের নাম কী হবে, কী কী ক্রিয়াকলাপ হবে? সময়ের সাথে ধীরে ধীরে সবকিছুই স্থির হয়েছিল। তখন হিন্দুদের সংগঠিত করার ধারণা ছিল মাত্র। এমনকি রাষ্ট্রীয় স্বংয়সেবক নামটি ১৯২৬ সালের ১৭ এপ্রিল করা হয়েছিল। ওইদিন হেডগেওয়ার সর্বসম্মতিক্রমে সংঘ প্রধান হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তবে তাঁকে ১৯২৯ সালের নভেম্বরে সরসঙ্ঘচালক করা হয়।
তারপরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রথম শাখা বিজয়াদশমী অর্থাৎ দশেরার দিনে স্থাপন করা হয়েছিল। ওই দিনটিও ছিল ২৭ সেপ্টেম্বর। ১৯২৫ সালে দশেরা উপলক্ষে কেশবরাম বলিরাম হেডগেওয়ার মুম্বাইয়ের বডে অফ মোহিত নামে একটি জায়গায় আরএসএসের শাখা স্থাপন করেছিলেন। এটি আরএসএসের প্রথম শাখা যা সংঘের পাঁচটি স্বেচ্ছাসেবীর সাথে শুরু হয়েছিল। আজ সারা দেশে ৫০ হাজারের বেশি শাখা রয়েছে আরএসএস-এর।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ নামটি স্থির হওয়ার আগে ৩টি নাম ভাবা হয়েছিল। জারিপটক মণ্ডল, ভারতোদ্বারক মণ্ডল এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। এই বৈঠকে উপস্থিত ২৬ জন সদস্যের মধ্যে ২০ জন সদস্য রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে ভোট দিয়েছিলেন, তার পরে আরএসএস-এর নাম চূড়ান্ত হয়। । গত কয়েক দশক ধরে 'নমস্তে সদা বটসলে মাতৃভূম্মে' প্রার্থনার সঙ্গেই দেশের প্রতিটি কোণে সংঘের শাখা স্থাপন করা হচ্ছে। হেডগেওয়ার জিমনেসিয়াম বা আখারার মাধ্যমে সংঘের কাজ চালিয়েছিলেন। সুস্থ ও সুসংহত স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করাই তার বাসনা ছিল।
এই সংগঠনটির সামনে বহুবার প্রতিবন্ধকতা এসেছে। ১৯৭৫ সালে সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। সেই সময়ে জনসঙ্ঘকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের পরে জনসঙ্ঘ জনতা পার্টিতে মিশে যায় এবং কেন্দ্রে মোরারজি দেশাইয়ের একটি জোট সরকার গঠিত হয়। সেই থেকে এই সংগঠনের রাজনৈতিক গুরুত্ব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। আরএসএস থেকেই বিজেপির জন্ম বলেই মনে করা হয়। বিজেপিকেসংঘের রাজনৈতিক শাখা হিসাবে দেখা হয়।
আরএসএস দাবি করে যে তাদের প্রশিক্ষিত সদসস্যের সংখ্যা এক কোটিরও বেশি। সংঘ পরিবারে ৮০ টিরও বেশি আনুষঙ্গিক সংগঠন রয়েছে যা বিশ্বের ৪০টি দেশে সক্রিয় রয়েছে। বর্তমানে সংঘের দৈনিক শাখার সংখ্যা ৫৬,৫৬৯। এছাড়াও প্রায় ১৩ হাজার ৮৪৭ সাপ্তাহিক জমায়েক এবং নয় হাজার মাসিক জমায়েত হয়। যদিও সদস্যদের নাম কোনও ইউনিয়নে নিবন্ধভুক্ত নয়। এমন পরিস্থিতিতে শাখাগুলির উপস্থিতির ভিত্তিতে অনুমান করা হয় যে বর্তমানে প্রায় ৫০ লক্ষেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক নিয়মিত শাখায় আসেন। দেশের প্রতিটি তহসিল এবং প্রায় ৫৫ হাজার গ্রামে একটি করে শাখা স্থাপন করা হয়েছে।
সংঘ শুরু থেকেই আলাদা পথ নিয়েছিল
আরএসএস না গান্ধী নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল, না কংগ্রেসের থেকে বেরিয়ে যাওয়া সুভাষচন্দ্র বসুর আন্দোলনের অংশীদার ছিল। ভগত সিং ও চন্দ্রশেখর আজাদের মতো বিপ্লবীদের মতও আচরণ করেনি। ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় আরএসএস কোনও ভূমিকা দেখা যায়নি।
এমনতি স্বাধীনতার সময়, সঙ্ঘ তিরঙ্গার বিরোধিতাও করেছিল। আরএসএসের মুখপত্রে ১৯৪৭ সালের ১৭ জুলাই একটি সম্পাদকীয়তে লিখা হয়েছিল জাফরান পতাকাটিকে ভারতের জাতীয় পতাকা হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।