গ্রেটা থুনবার্গের (Greta Thunberg) 'টুলকিট' মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২২ বছরের পরিবেশ কর্মী দিশা রবিকে (Climate Activist Disha Ravi)। বেঙ্গালুরু থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ।
দিশা 'Friday for Future' ক্যাম্পনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। পুলিশের অভিযোগ যে দিশা রবি ওই টুলকিট এডিট করে অন্যদের ফরোয়ার্ড করেন। ৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লি পুলিশ টুলকিট সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করেছিল। পরিবেশ কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এই মাসের গোড়ার দিকে একটি টুলকিট ট্যুইট করেছিলেন। যাতে কেন্দ্রের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের প্রতিবাদকে তিনি সমর্থন জানান।
প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষকদের ট্র্যাক্টর সমাবেশ চলাকালীন বিশৃঙ্খলা ও হিংসার ঘটনার পরে গ্রেটার ট্যুইটের কারণে কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি পড়ে। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে যে এই টুলকিটটি একটি সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে পাওয়া গেছে, যা ২৬ জানুয়ারির ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। দিল্লি পুলিশের বিশেষ কমিশনার প্রবীর রঞ্জন বলেন, এই প্রচার ছিল ভারতের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং আঞ্চলিক যুদ্ধ পরিচালনা করার।
গ্রেটার টুলকিট এডিট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ায় পরিবেশকর্মী দিশাকে শনিবারই গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল দিশাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
২২ বছরের দিশা বেঙ্গালুরুর অন্যতম নামজাদা কলেজ মাউন্ট কারমেলের পড়ুয়া। দিল্লি পুলিশের অভিযোগ, পোয়েটিক জাস্টিস ফাউন্ডেশন নামে একটি গ্রুপ এই টুলকিট তৈরি করেছিল। এই গ্রুপটি নাকি আসলে কয়েকজন খালিস্তানিদের নিয়ে তৈরি। ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’প্রচারের অন্যতম কাণ্ডারী দিশা। গ্রেফতারের পর তাঁকে পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। দিশার ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
দিশা গুড ভেগান মিল্ক নামে একটি সংস্থায় কাজ করেন। এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্যকে (নিরামিষ) সস্তা এবং সুলভ করে তোলা সকলের কাছে।
দাদু-ঠাকুমা ছিলেন কৃষক। নিজের চোখে দেখেছেন, কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। তা থেকেই অনুপ্রেরণা জুগিয়ে পরিবেশকর্মী হয়েছিলেন। গত বছরের একটি সাক্ষাৎকারে এমনই দাবি করেছিলেন ২২ বছরের দিশা রবি। কিন্তু সেই কৃষক আন্দোলন সংক্রান্ত মামলায় এবার গ্রেফতার হয়েছেন তিনি।
যদিও ‘টুলকিট’ মামলায় দিল্লি পুলিশের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন দিশা। আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়ে জানিয়েছেন, তিনি শুধুমাত্র কৃষকদের সমর্থন করছিলেন। তিনি কোনওরকম ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন না। বিভিন্ন যে গ্রুপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সে বিষয়েও কিছু জানেন না।
দিশার গ্রেফতারি জাতীয় রাজনীতি এবং সাধারণের মধ্যে ইতিমধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। চিদাম্বরম থেকে শুরু করে শশী থারুর, জয়রাম রমেশ কংগ্রেস শিবিরের প্রত্যেকেই এই গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করেছেন এবং দিশার অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
দিশার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন বাম নেতারাও। সীতারাম ইয়েচুরি ট্যুইট করে এই গ্রেফতারি নিন্দা করেছেন। শিবসেনা নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীও গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করেছেন। সমাজবাদী পার্টির পক্ষে অখিলেশ যাদব, দিশার গ্রেফতারিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন- কখন সেই মানুষগুলিকে গ্রেফতার করা হবে যারা টুলকিট দেশের নিরাপত্তায় আঘাত করেছে বলেছে সমানে মিথ্যা উত্তেজনা এবং বিদ্বেষের পরিস্থিতি তৈরি করছেন।
সমাজবাদী পার্টির পক্ষে অখিলেশ যাদব, দিশার গ্রেফতারিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন- কখন সেই মানুষগুলিকে গ্রেফতার করা হবে যারা টুলকিট দেশের নিরাপত্তায় আঘাত করেছে বলেছে সমানে মিথ্যা উত্তেজনা এবং বিদ্বেষের পরিস্থিতি তৈরি করছেন।
কৃষি বিক্ষোভের আন্দোলনের মূল মঞ্চ সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চা(এসকেএম) দিশার গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করার সঙ্গে সঙ্গে অবিলম্বে তাঁর নির্শর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে এসকেএম জানিয়েছে, 'যে কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাঁর অবিলম্বে মুক্তি পাওয়া উচিত এবং আমরা মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। '