প্রকাশিত হয়েছে প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়ের লেখা বই। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক মহলে যা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বাবরি মসজিদ থেকে নেহেরু-রাহুল গান্ধী, অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন বইয়ের পাতায়।
তাঁর বই 'ইন প্রণব, মাই ফাদার: অ্যা ডটার রিমেম্বার্স'-এ তিনি দাবি করেছেন যে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদের কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছিল। সেই সময় নরসিমা রাও দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সেই সময় প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁকে রক্ষা করেছিলেন। সমস্ত কংগ্রেস নেতাদের বলেছিলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নয়, সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব।
বইটিতে আরও দাবি করা হয়েছে, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতে, বাবরি মসজিদ ধ্বংস স্বাধীনতার পর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
বইয়ে শর্মিষ্ঠা দাবি করেন, শাহবানো মামলায় আইন বানানোর পর হিন্দু মধ্যবিত্তের মধ্যে কংগ্রেসের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছিল। এই ভাবমূর্তি সংশোধন করতে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী অযোধ্যায় রাম জন্মভূমির তালা খুলিয়েছিলেন। বলা হয়েছে, সেই সময়ে রাজীব গান্ধী এবং অরুণ নেহরুর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রণববাবু।
ভারতের সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি জওহরলাল নেহেরুকেই পছন্দ করতেন বলে বইয়ে দাবি করা হয়। তবে ইন্দিরা গান্ধীকে তাঁর পরামর্শদাতা হিসাবেও বিবেচনা করেন। বলেন, তাঁর নিজস্ব অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তিনি একবার কথোপকথনে বলেছিলেন, পণ্ডিত নেহরুর পরিবর্তে ইন্দিরা গান্ধী যদি প্রধানমন্ত্রী হতেন, তাহলে আজ পুরো কাশ্মীর ভারতের হয়ে যেত।
বইটিতে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে যা বলা হয়েছে
শর্মিষ্ঠা তাঁর বইয়ে রাহুল গান্ধীকে নিয়েও অনেক দাবি করেছেন। এক জায়গায় তিনি বলেছেন, তাঁর বাবা একবার বলেছিলেন যে রাহুল গান্ধী 'খুব নম্র' এবং 'অনেক প্রশ্ন করেন'। তবে তিনি এ-ও বিশ্বাস করতেন, যে রাহুল গান্ধীর 'এখনও রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ক হতে দেরি আছে।'
তাঁর বাবা রাহুলকে মন্ত্রিসভায় যোগদান এবং সরকারের কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের পরামর্শ দেন। কিন্তু রাহুল এই পরামর্শে কর্ণপাত করেননি।
'তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী বানাবেন না'
শর্মিষ্ঠা তাঁর বইয়ে লিখেছেন ২০০৪ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি রহস্যজনকভাবে উত্তর দিয়েছিলেন, 'না, তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী করবেন না।' প্রাক্তন কংগ্রেস মুখপাত্র শর্মিষ্ঠা, যিনি ২০২১ সালে রাজনীতি থেকে অবসর নেন, তাঁর বইয়ে প্রণব বাবুর স্বচ্ছ রাজনৈতিক জীবনের একটি আভাস দিয়েছেন। শর্মিষ্ঠা জোর দিয়েছিলেন যে সনিয়া গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত না করার জন্য প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর কোনও ক্ষোভ ছিল না। আবার মনমোহন সিংয়ের প্রতি তাঁর মনে কোনও শত্রুতা ছিল না।
প্রণব মুখোপাধ্যায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। পরে তিনি বিদেশ, প্রতিরক্ষা, অর্থ ও বাণিজ্যের মতো প্রধান বিভাগগুলিও পরিচালনা করেন। ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত, তিনি ভারতের ১৩তম রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এরপর বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা ৩১ আগস্ট ২০২০ সালে ৮৪ বছর বয়সে মারা যান।