ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত ২০৫ টি মৃতদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। এই দুর্ঘটনা বহু পরিবারকে আজীবনের ক্ষত দিয়ে গেল। মানুষ স্বজনদের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আলম তেমনি একজন ব্যক্তি তিনি ভাইপো হিসাবে একটি দেহকে চিহ্নিত করলেও সেই মৃতদেহেরও ৫ জন দাবিদার রয়েছে।
ওড়িশার বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনা বহু পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছে। কোথাও বাবা তার ছেলেকে আবার কোথাও ছেলে তার বাবাকে খুঁজছে। কারো ভাই আহত, কারো মা নিখোঁজ। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে এখন বিরাজ করছে এক ভয়াবহ নীরবতা। প্রিয়জনের খোঁজ শেষ হয় না। ব্যথার মাত্রা এমন ছিল যে এক ব্যক্তি তার ভাইপোর দেহ শনাক্ত করলেও আরও ৫ জন তাকে তাদের আত্মীয় বলে দাবি করছেন। অবস্থা এমন যে, মানুষ স্বজনদের খোঁজে ডিএনএর সাহায্য নিচ্ছে। ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ২০৫ জনেরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে, বাকিদের এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ। মোহাম্মদ ইনাম উল হক বলেন, আমার ভাইপো ও ভাই ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছে, তাই আমরা তাদের দেহ সংগ্রহ করতে এসেছি। গত চারদিন ধরে আমরা এখানে ঘোরাঘুরি করছি। আমার ভাই এবং দুই ভাগ্নে (তৌসিফ আলম ও তৌসির আলম) এই ট্রেনে যাত্রা করছিলেন, তারা মারা যান। আজ আমরা এইমস-এ এক ভাগ্নের মৃতদেহ পেয়েছি। এখন আমি আমার ভাই ও অন্য ভাগ্নেকে খুঁজছি।
৪ দিন ধরে ভাই-ভাইপোকে খুঁজছি
ইনাম বলেন, আমি তাদের খোঁজে যা যা করা সম্ভব করেছি, আমি সব হাসপাতালে গিয়েছি যেখানে কর্তৃপক্ষ আমাকে গিয়ে দেখতে বলেছে। আমি তাদের সর্বত্র খুঁজলাম কিন্তু এখনও কোন খোঁজ পাইনি। এখন বলা হচ্ছে ডিএনএ নমুনা দিতে হবে। তারা বলেছে, যার ডিএনএ মিলবে তাকে দেহ দেওয়া হবে।
একটি দেহের জন্য ৫ দাবিদার
মোহাম্মদ ইনাম উল হক বলেন, আমার এক ভাইপোকে আমরা শনাক্ত করেছি, তবে আরও পাঁচজন দাবিদার আছেন যারা বলছেন মৃত ব্যক্তি তাদের আত্মীয়। সেজন্য তার শরীরের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। কজ্ঞৃতপত্র বলছে, যার ডিএনএ ম্যাচ করতে দেহ তারা পাবে। 'শরীর নেওয়ার একমাত্র বিকল্প ডিএনএ পরীক্ষা।' মোহাম্মদ ইনাম-উল-হককে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে ডিএনএ পরীক্ষা কীভাবে হবে, তিনি বলেছিলেন যে আমি আরেক ভাগ্নের ডিএনএ নমুনা দিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করছি। তারা এই শিশুর ডিএনএর সঙ্গে আমার ভাগ্নের শরীরের ডিএনএ মিলাবেন। তিনি বলেন, দেহটি কার তা জানার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। পুরো প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময় নেয়।
'দুর্ঘটনায় হারিয়েছে ছেলে ও দুই নাতি'
ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১২ বছরের ছেলের দাদু নিজামউদ্দিন বলেন, সে আমার নাতি। তার দেহ পাওয়া গেছে, তবে তার বাবা ও বড় ভাই সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। অনেক চেষ্টা করেছি, এদিক ওদিক ঘুরেছি কিন্তু আমার ছেলে ও নাতিকে এখনো পাওয়া যায়নি। এক নাতির দেহ পাওয়া গেছে, তাই বাধ্য হয়ে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি।
ট্রেন নম্বর 12481 করমন্ডল এক্সপ্রেসটি বাহানগা বাজার স্টেশনের (শালিমার-মাদ্রাজ) প্রধান লাইন দিয়ে যাচ্ছিল, একই সময়ে এটি লাইনচ্যুত হয় এবং আপ লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ট্রেনটি পূর্ণ গতিতে চলছিল, যার ফলে ২১টি বগি লাইনচ্যুত এবং ৩টি বগি লাইনের নীচে চলে যায়।আসলে বাহানগা বাজার স্টেশনে এই ট্রেনগুলির জন্য কোনও স্টপেজ নেই। এমন পরিস্থিতিতে ট্রেন দুটির গতি ছিল দ্রুত। বাহানগা বাজার স্টেশনের উপর দিয়ে যাওয়া করমন্ডল এক্সপ্রেসটি হঠাৎ লাইনচ্যুত হলে ট্রেনের কয়েকটি বগি পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এদিকে দুর্ঘটনার সময় ডাউন লাইন দিয়ে যাওয়া যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেসের পিছনের দুটি বগিও লাইনচ্যুত করমন্ডল এক্সপ্রেসের কবলে পড়ে। ভুবনেশ্বর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় ১৭১ কিলোমিটার এবং খড়গপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় ১৬৬ কিলোমিটার দূরে বালেশ্বর জেলার বাহানগা বাজার স্টেশনে দুর্ঘটনাটি ঘটে।