খুব শীঘ্রই গগনযান মিশনে মহাকাশে মানুষ পাঠাবে ভারত। প্রস্তুতি তুঙ্গে। ভারত তো বটেই, গোটা বিশ্ব সেদিকে তাকিয়ে। কিন্তু ঠিক কবে সেই ঐতিহাসিক মিশন? কারা যাবেন? পুরোটাই ব্যাখা করা হল bangla.aajtak.in এর এই প্রতিবেদনে। মহাকাশের ব্যাপার শুনে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। একেবারে সহজ ভাষায় পুরোটা ব্যাখা করা হল। ইসরো (ISRO) জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে গগনযানের প্রথম লঞ্চ। তবে সেই লঞ্চে মহাকাশচারী থাকছেন না। মানুষ ছাড়াই মহাকাশযান পাঠানো হবে। কেন? বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাকাশে মানুষ পাঠানোর আগে এটি একটি ট্রায়াল বলা যেতে পারে। প্রযুক্তিগত কোনও ত্রুটি আছে কিনা, কী কী চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, তার সমস্তটাই খতিয়ে দেখা হবে এই মিশনের মাধ্যমে। সেই মিশন থেকে বিভিন্ন নতুন তথ্যও মিলতে পারে। সেই অভিজ্ঞতা মানববাহী মিশনে কাজে লাগানো হবে। তাছাড়া এই প্রথম লঞ্চের মাধ্যমে ইসরোর টিমেরও একটি অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে। ফলে পরে, মহাকাশচারীদের পাঠানোর সময় ভুলের সম্ভাবনা আরও কমে যাবে।
গগনযানের প্রথম মিশনে ঠিক কী কী পাঠানো হবে? জানতে ক্লিক করুন এখানে CLICK HERE
শুভাংশু শুক্লার বার্তা
সদ্য আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে ফিরেচেন মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা। গগনযানের বিষয়ে তিনি বলেন, 'ভারতের 'মহাকাশ ভবিষ্যতে'র দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। সেই উত্তেজনা বেশ ভালমতোই টের পাচ্ছি।'
তিনি জানান, স্পেস স্টেশনে যাওয়ার আগে তাঁর দীর্ঘ সময় ধরে ট্রেনিং হয়েছিল। তাঁকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরাও তাঁর কাছে বারবার গগনযান মিশনের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন বলে জানালেন শুভাংশু।
পি. বালাকৃষ্ণন নায়ার
অন্যদিকে হবু মহাকাশচারী পি. বালাকৃষ্ণন নায়ার বলেন, ভারতের আন্তর্জাতিক মহলে যে সম্মান তৈরি হয়েছে, তা সত্যিই অভূতপূর্ব। তাঁর কথায়, 'খুব শীঘ্রই এমন দিন আসবে যে, অন্যান্য দেশও এসে ভারতের মাটি থেকে নিজেদের মিশন লঞ্চ করাতে চাইবে।'
অতীত মনে করালেন অঙ্গদ প্রতাপ
গগনযানের মহাকাশচারী হিসাবে সিলেক্টেড অঙ্গদ প্রতাপের কথায়, 'ইসরোর অতীত সংগ্রামকেও মনে রাখতে হবে। বছরের পর বছর যারা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন, তাঁদের অবদানেই আজ আমরা এখানে পৌঁছতে পেরেছি। আমরা শুধু চারজন মহাকাশচারী নই, আমরা দেশের ১৪০ কোটি মানুষের স্বপ্নের প্রতিনিধি।'
তিনি আরও বলেন, 'গগনযান শুধুই কোনও মিশন নয়। এর মধ্যে আরও বহু মিশনের স্বপ্ন লুকিয়ে আছে। ভারতের ২০৪৭ সালের যে ভিশন গ্রহণ করা হয়েছে, তারই পথ দেখাবে এই প্রকল্প।'|
অজিত কৃষ্ণন
গগনযানের হবু মহাকাশচারী অজিত কৃষ্ণন বলেন, '২০২০ সালে আমি ইসরোয় যোগ দিই। সেই সময়ে ভাবতেই পারিনি যে এত দ্রুত এত কিছু অ্যাচিভ করে ফেলব। মাত্র পাঁচ বছর। এটুকু সময়ের ব্যাপ্তিতেই আমরা চাঁদে পৌঁছে গিয়েছি, ডকিং টেকনোলজি পারফেক্ট করে ফেলেছি। দেশে মহাকাশ গবেষণাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য স্টার্টআপ গড়ে উঠেছে।'
গগনযানে মহাকাশে মানুষ পাঠিয়ে লাভ কী?
অনেকেই উন্নয়নশীল দেশে মহাকাশ অভিযানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেক্ষেত্রে জানিয়ে রাখা ভাল, ইসরোর মতো সংস্থাগুলি কিন্তু মহাকাশ অভিযানের মাধ্যমেই রীতিমতো আয় করে। ভারত তো বটেই, বিদেশের বহু সংস্থা, যারা নিজেরা মহাকাশযান বানাতে পারে না, তারা ইসরোর মাধ্যমে মহাকাশে স্যাটেলাইট প্রেরণ করে। তার বদলে মোটা অঙ্ক চার্জ করে ইসরো।
চন্দ্রযান, গগনযানের মতো মিশনগুলি অন্য় দেশদের কাছে একটা বিজ্ঞাপনস্বরূপ। এরম মাধ্যমে ভারতের মহাকাশ গবেষণা কতটা এগিয়ে, তার প্রমাণ পায় বিভিন্ন দেশগুলি। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে এই ধরনের মিশনগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া ইলন মাস্কের কথা মতো, কোনও এক যুগে যদি মানবজাতি সত্যিই 'মাল্টি প্ল্যানেটারি স্পিসিস' হয়ে যায়, সেক্ষেত্রেও ভারতকে তার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।