আপ যেরাজ্যেই ভোটের ময়দানে পা রাখছে, কার্যত ভরাডুবি হচ্ছে কংগ্রেসের। বরং বলা যেতে পারে, যেখানেই তৃতীয় কোনও দল মাথা তুলছে সেখানেই কংগ্রেসের (Congress) অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা হয়ে গোটা দাক্ষিণাত্য তো বটেই, হালে পাঞ্জাবেও কংগ্রেস ক্ষমতা হারিয়েছে। দিল্লির পর পাঞ্জাবেও কংগ্রেসকে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছে আম আদমি পার্টি (AAP)।
কংগ্রেসের নতুন প্রতিপক্ষ
গুজরাতে কংগ্রেসের এতদিন প্রতিপক্ষ ছিল বিজেপি। কিন্তু সেখানে আপ প্রথমবার ভোটের ময়দানে নামতেই বিপাকে পড়ল কংগ্রেস। কংগ্রেস একমাত্র টিকে গেল হিমাচলপ্রদেশে, কারণ সেখানে লড়াই ছিল দ্বিমুখী। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পার্টি গুজরাতে জোর দিতেই সমস্যায় পড়ল কংগ্রেস। অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ বিজেপির নেতারা দাবি করছিলেন, আপ কোনও ফ্যাক্টর নয়। বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। কিন্তু ভোটের ফল বলছে, আপ বড় ধরনের ফ্যাক্টর হয়েছে গুজরাতের ভোটে। তারা শুধু কংগ্রেসের ভোটে থাবা বসিয়েছে তাই-ই নয়, ত্রিমুখী লড়াইয়ে ২৭ বছরের শাসক দল বিজেপি আসন ও ভোট প্রাপ্তির নিরিখে সর্বকালীন রেকর্ড করতে চলেছে।
২০১৭ সালে গুজরাতের বিধানসভা ভোটে জামানত বাজেয়াপ্ত
২০১৭ সালে গুজরাতের বিধানসভা ভোটে ২৯টি আসনে লড়েছিল আপ। সব ক’টিতেই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল তাদের। ভোট পেয়েছিল সাকুল্যে ২৯,৫০৯টি (০.১ শতাংশ)। কিন্তু এবার ভোট বেড়েছে ১২ শতাংশেরও বেশি।
জাতীয় দলের মর্যাদা
গুজরাত ভোটে খাতা খুলেই শুধু সাফল্য নয়, দিল্লি এবং পঞ্জাব বিধানসভায় জয়ের পরে গুজরাতে এই ভোটপ্রাপ্তি আপকে জাতীয় দলের মর্যাদা পেতে সাহায্য করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সৌরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ গুজরাতের পাশাপাশি, আমদাবাদ-গান্ধীনগরের একাধিক আসনেও কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছেন আপ প্রার্থী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, আপের সাফল্যের জন্যই গুজরাতের বিধানসভায় সর্বকালীন রেকর্ড আসনে জয়ের ইতিহাস তৈরি করতে পারল বিজেপি।
গান্ধীর রাজ্যে সঙ্কটে কংগ্রেস
২০১৭-র বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস গুজরাতে ৪৪ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েছিল। এ বার তা নেমে এসেছে ২৬ শতাংশের কাছে। আপের ভোট বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, বিজেপি বিরোধী পাতিদার ভোটের পাশাপাশি সরাসরি কংগ্রেসের অনগ্রসর ও দলিত ভোটে থাবা বসিয়েছে আপ।
পাঞ্জাব মডেল
পাঞ্জাব বিধানসভার ভোট কৌশলকেই অনুসরণ করেছিল আপ। সরাসরি ‘জনতার দরবার’ থেকে ‘মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ হিসেবে মানকে বেছে নিয়েছিলেন কেজরীওয়াল। আর অকালি দল বনাম কংগ্রেসের কয়েক দশকের মেরুকরণ ভেঙে বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে পাঞ্জাবে সরকার গড়েছে আপ। গুজরাতেও সেই একই মডেল ধরে এগিয়েছিল আপ। এবং সাফল্যও মিলেছে।
কংগ্রেসে ভাঙন
শুধু আপের উত্থান নয়, একের পর এক বড় নেতার দলত্যাগের কারণেও জর্জরিত কংগ্রেস। গত ৫ বছরে গুজরাতে কংগ্রেসের ১৯ জন বিধায়ক দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এই তালিকায় রয়েছেন অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর যুবনেতা অল্পেশ ঠাকোর, প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা তথা একদা কংগ্রেসের ‘জনজাতি মুখ’ মোহনসিংহ রাথওয়ার মতো নেতা। ১০ বারের বিধায়ক মোহনের দলত্যাগ দক্ষিণ ও পূর্ব গুজরাতের আদিবাসী প্রধান অঞ্চলে কংগ্রেসের খারাপ ফলের অন্যতম কারণ বলে দলের একাংশের মত। আপ গুজরাতের নির্বাচনী লড়াইয়ে নামায় বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা ছিলই। ফল প্রকাশ হতেই দেখা গেল, আশঙ্কাকে সত্যি করে কংগ্রেসের ভোটই কেটেছে আপ।
আরও পড়ুন: গুজরাতের ফলেই প্রমাণ মোদীর বিকল্প মমতা', কংগ্রেসের ভরাডুবিতে বলল TMC