
AK-47 : যে বছর আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল, ওই বছরই রাশিয়ায় মিখাইল কালাশনিকভের AK-47 রাইফেলের প্রথম সামরিক ট্রায়াল হয়েছিল। রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে এই রাইফেসতে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। বিশ্বের প্রায় ১০৬টি দেশে AK-47 অ্যাসল্ট রাইফেল একটি আদর্শ পদাতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি অনুমান করা হয় যে বিশ্বে AK সিরিজের (সমস্ত সিরিজ) ১০০ মিলিয়ন রাইফেল রয়েছে। এর সমস্ত ভ্যারিয়েন্টগুলি বন্দুক প্রেমী, সৈন্য, বিদ্রোহী এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের জঙ্গিদের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে। যদিও আমেরিকায় একে সিরিজের রাইফেলকে বলা হয় 'খারাপ লোকের' অস্ত্র। বলা যায় কারণ এই রাইফেল নিয়ে আমেরিকার অভিজ্ঞতা খারাপ হয়েছে।
AK-47 এর পুরো নাম?
রুশ ভাষায় AK এর পুরো নাম Avtomat Kalashnikov। সাধারণ ভাষায় একে বলা হয় কালাশনিকভ। এটির নামকরণ করা হয়েছে সিনিয়র সার্জেন্ট মিখাইল কালাশনিকভের নামে, যিনি এটি তৈরি করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ট্যাঙ্ক কমান্ডার ছিলেন। তিনি জার্মান অস্ত্র এবং তাঁদের অস্ত্রে নকশা পছন্দ করতেন। তিনি নিজেই এমন একটি রাইফেল তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যেটি যে কোনও আবহাওয়া এবং জায়গায় আটকে না গিয়ে অবিরাম গুলি চালাতে পারে। পাঁচ বছর চেষ্টার পরে মিখাইল কালাশনিকভ AK-47 তৈরি করেন। মিখাইলের বিরুদ্ধে জার্মান রাইফেল StG-44-এর নকশা নকল করারও অভিযোগ রয়েছে। এই রাইফেলটি ছিল প্রথম মিড-রেঞ্জ রাইফেল। এটি খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি, তবে শক্তিশালী ছিল। যেহেতু AK-47 সঙ্গে এর অনেক মিল আছে।তাই StG-44 এর অনুলিপি বলা হয়। কিন্তু AK-47 সহজে মেরামত করা হয়েছিল। সহজেই জ্যাম মুক্ত ছিল। রক্ষণাবেক্ষণ সহজ।
AK-47 এর দাম কত?
ট্রানজিশনাল ক্রাইম ইন ডেভেলপিং ওয়ার্ল্ড নামে একটি সমীক্ষা অনুসারে, এই রাইফেলটি পাকিস্তানের কালোবাজারে ১৫০ ডলার অর্থাৎ ১১,৪৭১ টাকায় পাওয়া যায়। অন্যদিকে, আমেরিকায় ডার্ক ওয়েবে এটির দাম ৩৬০০ ডলারের বেশি অর্থাৎ ২.৭৫ লাখ টাকা। মানে দেশ ও পছন্দ অনুযায়ী দাম। আফ্রিকার অনেক দেশেই এর দাম অনেক কম হয়ে যায়, কারণ সেখানকার সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিতে এটি খুব পছন্দ। সেখানকার বাজারে এই রাইফেলে ভরপুর।
AK-47 গুলি কয়টি?
AK-47 সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় সেটিং এর ভিতরে ৬০০ রাউন্ড গুলি ছুড়তে পারে। এতে ৭.৬২x৩৯ মিমি বুলেট ভরা হয়। সেমি-অটো মোডে প্রতি মিনিটে ৪০ রাউন্ড এবং বার্স্ট মোডে প্রতি মিনিটে ১০০ রাউন্ড গুলি করতে পারে। সাধারণত এর পরিসীমা ৩৫০ মিটার। বুলেটটি প্রতি মিনিটে ৭১৫ মিটার বেগে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায়। এর ম্যাগাজিন তিন ধরনের হয়। ২০ রাউন্ড, ৩০ রাউন্ড এবং ৭৫ রাউন্ডের ম্যাগাজিন।
আমরা কি ভারতে আইনত AK-47 কিনতে পারি?
আপনি যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন তবে এটি নির্ভর করে আপনি কোন রাজ্যে আছেন তার উপর। তার নিয়ম অনুযায়ী রাইফেল পাওয়া যাবে। কিন্তু ভারতে আপনি বৈধভাবে এই বন্দুক পেতে পারেন না। এটি শুধুমাত্র সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ, এসটিএফ জন্য উপলব্ধ।
AK-47 রাইফেল কতটা মারাত্মক
সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং প্রাণঘাতী রাইফেল যদি কেউ তৈরি করে থাকে, তা হল AK-47। ৩০০-৩৫০ মিটার রেঞ্জে আসা টার্গেটকে সহজেই নিশানায় আনতে পারে এই রাইফেল। প্রাথমে এই রাইফেলটি অত্যন্ত ভারী ছিল। লক্ষ্যটাও খুব একটা ভালো ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে মিখাইল কালাশনিকভ এর উন্নতি ঘটান। সে যুগের একে আজ একেএম (আধুনিকীকরণ) হয়েছে। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর আড়াই লাখ মানুষ মারা যায় বলে জানা গেছে এই রাইফেলের গুলিতে।
কেন সন্ত্রাসীরা AK-47 বেশি ব্যবহার করে
সারা বিশ্বে এই রাইফেলের কালোবাজারি চলছে। কম খরচে সহজলভ্য। নির্ভরযোগ্য এবং সঠিক ফায়ার পাওয়ার থাকার কারণে, সন্ত্রাসীরা এটি পেতে চায়।
ভারতের কাছে কয়টি AK রাইফেল আছে?
ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে কত AK-47 বা AK-56 আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান সরকারিভাবে কোথাও নেই। কিন্তু ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে অত্যাধুনিক AK-203 তৈরির চুক্তি হয়েছে। যার অধীনে ৭.৫০ লক্ষ AK-203 রাইফেল তৈরি করা হবে। যা সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী ইত্যাদিকে দেওয়া হবে। উত্তরপ্রদেশের আমেঠি জেলার কোরওয়ায় অবস্থিত অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে এটি তৈরি করা হবে।
AK সিরিজে কটি ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে?
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, সামরিক গোষ্ঠী, বিদ্রোহী এবং সন্ত্রাসীদের মধ্যে একে সিরিজের ১৭টি ভ্যারিয়েন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো হলো- AK-47, AKM, AK-74, AK-74M, AK-101, AK-102, AK-103, AK-104, AK-105, AK-12, AK-12K, AK-15, AK -15K, AK-200, AK-205, AK-203 এবং AK-19। এই সমস্ত রাইফেলগুলি যে বছর তৈরি হয়েছিল সে অনুসারে। তবে এর শেষ ভ্যারিয়েন্টটি অত্যন্ত আধুনিক।