শিশুপালের ১০০টি ভুল ক্ষমা করে দিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। তারপরও তাঁকে কুকথা বলে যাচ্ছিলেন শিশুপাল। তখন এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে সুদর্শন চক্র চালিয়ে শিশুপালের মুণ্ড ধর থেকে আলাদা করে দিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর সেই 'সুদর্শন চক্র' দিয়ে, ঠিক একই ভাবে এবার পাকিস্তানকে ঘায়েল করছে ভারত। কোন হাতিয়ারকে বলা হচ্ছে ভারতের 'সুদর্শন চক্র'?
ভারতীয় সেনার অপারেশন সিঁদুরের পাল্টা ৭ এবং ৮ মে নাগাড়ে গোলাগুলি চালাতে শুরু করে পাকিস্তান। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের ১৫টি শহরে (অবন্তিপুরা, শ্রীনগর, জম্মু, পাঠানকোট, অমৃতসর, কপুরথলা, জলন্ধর, লুধিয়ানা, আদমপুর, ভান্টিন্ডা, চণ্ডীগড়, ভূজ সহ আরও অন্যান্য) হামলার চেষ্টা করে পাকিস্তান। মিসাইল এবং ড্রোন নিয়ে অ্যাটাক করে পড়শি দেশ। আর সেগুলি প্রতিহত করে S-400। বিশ্বের এই অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স ফোর্সকেই ভারতের 'সুদর্শন চক্র' বলা হচ্ছে।
অতন্দ্র প্রহরীর মতো ভারতের আকাশসীমাকে আগলে রাখে S-400 ট্রায়াম্ফ এয়ার ডিফেন্স ফোর্স।
S-400 ট্রায়াম্ফ কীভাবে কাজ করে?
S-400 ট্রায়াম্ফ একসঙ্গে ৩৬টি বস্তুকে নিশানা করতে পারে। ৬০০ কিলোমিটার দূরে থাকা কোনও ড্রোন, যুদ্ধবিমান বা ক্ষেপণাস্ত্রকে দ্রুত চিহ্নিত করতে পারে এটি। ৪০০ কিলোমিটার দূরে থাকা লক্ষ্যবস্তুকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে।
পুরাণ মতে, সুদর্শন চক্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র মনে করা হত। তামিল ভাষায় এই সুদর্শন চক্রকে বলা হত 'চক্রতলোয়ার'। থাইল্যান্ডে এটি চক্রী বংশের নামে পরিচিত ছিল। শাস্ত্র মতে, সুদর্শন চক্র বিষ্ণুকে দিয়েছিলেন ত্রিদেবের গুরু বৃহস্পতি। কথিত রয়েছে, দেবতাদের থেকেই শ্রীকৃষ্ণ এই অস্ত্র লাভ করেছিলেন। মহাভারত অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুন খাণ্ডব বন জ্বালাতে অগ্নিদেবকে সাহায্য করেছিলেন। এর বদলে তিনি শ্রীকৃষ্ণকে একটি কৌমুদী গদা এবং সুদর্শন চক্র দিয়েছিলেন।
শাস্ত্র মতে প্রচলিত রয়েছে, নিজের কড়ে আঙুলে সুদর্শন চক্র ধরে থাকতেন শ্রীকৃষ্ণ। তবে ভগবান বিষ্ণু তা ধরতেন তর্জনিতে। এমনটাও প্রচলিত রয়েছ, এই চক্র শত্রু নিধনের পর ফের চালকের হাতে ফিরে আসত। লক্ষ্য নির্ধারণ করে শত্রু নিধন করত এই সুদর্শন চক্র। এর গতিবেগ এতটাই দ্রুত যে তা থামানো অসম্ভব ছিল।
কখন সুদর্শন চক্র চালাতে হয়েছিল কৃষ্ণকে?
ঋকবেদ, যজুবেদ এবং পুরাণ মতে, শত্রুর বিনাশ ঘটাতে শ্রীকৃষ্ণ সুদর্শন চক্রের ব্যবহার করতেন। মহাভারতে এর প্রমাণ রয়েছে। তবে কেবল শিশুপালের বধ করতে নয়, গোবর্ধন পর্বত তুলতে এবং অমৃত মন্থনের সময়েও সুদর্শন চক্রের ব্যবহার হয়েছিল। তবে মহাভারতের যুদ্ধে এই অস্ত্রের ব্যবহার করেননি শ্রীকৃষ্ণ।
পুরাণ মতে, সুদর্শন চক্র তৈরি করেছিলেন বিশ্বকর্মা। তাঁর মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল অগ্নি দেবের। কিন্তু অগ্নি দেবের তেজ এবং অত্যধিক উজ্জ্বলতার কারণে বিশ্বকর্মার মেয়ে স্বাভাবিক বৈবাহিক জীবন কারাটে অসমর্থন হন। বাবার কাছে এসে একথা জানাতে বিশ্বকর্ম অগ্নি দেবের তেজ কিছুটা কমিয়ে দেন। সেই বাড়তি তেজ থেকে প্রাপ্ত পবিত্ক ধুলো দিয়ে তিনটি জিনিস তৈরি করেছিলেন বিশ্বকর্মা। পুষ্পক রখ, শিবের ত্রিশূল এবং বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র।
গোলাকৃতি এই সুদর্শন চক্রর চতুর্দিকে রয়েছে তীক্ষ্ণ তীরের মতো অংশ। দুই বিপরীতমুখী এই তীরগুলি দু'দিকে ঘোরে। তবে এই চক্র কারও দিকে ছোড়া হত না। বরং ইচ্ছের মাধ্যমে শত্রুর উদ্দেশে পাঠানো হত।
S-400 এ উন্নত রেডার ব্যবস্থা রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ৯১এন৬ই বিগ ওয়ার্ড রেডার এবং ৯২এন৬ই গ্রেভ স্টোন রেডার ব্যবস্থা। এই রেডারের মাধ্যমে ৬০০ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করতে পারে। এমনকী স্টেল্থ বিমানকে চিহ্নিত করার ক্ষমতা রয়েছে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার। চার ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন রয়েছে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি পরিচালনার জন্য চারটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। প্রথমে নজরদারি রেডার লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করে। দীর্ঘপাল্লার এই রেডার ব্যবস্থা বার্তা পাঠিয়ে সতর্ক করে ‘কমান্ড ভেহিকল’কে। এই ‘কমান্ড ভেহিকল’ লক্ষ্যবস্তুকে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নিশানা করার জন্য বার্তা পাঠায় ‘এনগেজমেন্ট রেডার’-কে। ‘এনগেজমেন্ট রেডার’-এর সেই বার্তা ‘লঞ্চার ভেহিকল’-এ যায়। নিশানা ঠিক হতেই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে S-400। এর কার্যকলাপের সঙ্গে এভাবেই সুদর্শন চক্রের তুলনা করা হয়।