Operation Sindoor: ৩৬টি যুদ্ধজাহাজ, ডেস্ট্রয়ার-ফ্রিগেট-সাবমেরিন, করাচি ধ্বংসের মেজাজে ছিল ইন্ডিয়ান নেভি

অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন ভারতীয় নৌবাহিনী করাচির কাছে আরব সাগরে তার বিরাট বহর মোতায়েন করে। এই মোতায়েনের ফলে পাকিস্তান নৌবাহিনী সম্পূর্ণরূপে হতবাক হয়ে যায়। ভয়ে তারা অন্য দেশগুলির কাছে কাঁদুনি গাইতে শুরু করে।

Advertisement
৩৬টি যুদ্ধজাহাজ, ডেস্ট্রয়ার-ফ্রিগেট-সাবমেরিন, করাচি ধ্বংসের মেজাজে ছিল ইন্ডিয়ান নেভি৩৬টি যুদ্ধজাহাজ, ডেস্ট্রয়ার-ফ্রিগেট-সাবমেরিন, করাচি ধ্বংসের মেজাজে ছিল ইন্ডিয়ান নেভি
হাইলাইটস
  • ভারতীয় নৌবাহিনীর এই বিশাল মোতায়েনের ফলে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক প্রভাব পড়েছে।
  • ৩৬টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন পাকিস্তানকে যে কোনও আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রাখে

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক আবারও দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক শক্তি প্রদর্শনকে কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার জবাবে অপারেশন সিঁদুর ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই অপারেশন চলাকালীন ভারতীয় নৌবাহিনী করাচির কাছে আরব সাগরে ৩৬টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে, যার মধ্যে রয়েছে দেশে তৈরি বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত, ৭টি ডেস্ট্রয়ার, ৭টি ফ্রিগেট, সাবমেরিন এবং অ্যাটাক বোট। এই মোতায়েনের মাধ্যমে ভারত তার সামুদ্রিক শক্তি প্রদর্শন করেছে। যা পাকিস্তানকে ডিফেন্সিভ বা আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে ঠেলে দেয়।

অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন ভারতীয় নৌবাহিনী করাচির কাছে আরব সাগরে তার বিরাট বহর মোতায়েন করে। এই মোতায়েনের ফলে পাকিস্তান নৌবাহিনী সম্পূর্ণরূপে হতবাক হয়ে যায়। ভয়ে তারা অন্য দেশগুলির কাছে কাঁদুনি গাইতে শুরু করে।

ভারতীয় নৌবাহিনীর মোতায়েন

১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে, ভারতীয় নৌবাহিনী অপারেশন ট্রাইডেন্ট এবং অপারেশন পাইথনের সময় করাচি বন্দরে আক্রমণ করার জন্য মাত্র ৬টি যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করেছিল। সেই আক্রমণ পাকিস্তানের সামুদ্রিক সরবরাহ ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু অপারেশন সিঁদুরে ভারতীয় নৌবাহিনী ৩৬টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছিল, যা ১৯৭১ সালের তুলনায় ছয় গুণ বেশি।

১. আইএনএস বিক্রান্ত এবং ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপ

ভারতের প্রথম দেশে তৈরি বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত ছিল এই মোতায়েনের কেন্দ্রবিন্দু। ৪০,০০০ টনের এই যুদ্ধজাহাজটিতে মিগ-২৯কে যুদ্ধবিমান, কামোভ হেলিকপ্টার এবং অ্যাডভান্সড এয়ারবোর্ন আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম (AEW&C) রয়েছে।

indian navy in operation sindoor

ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপ

বিক্রান্তের সঙ্গে ৮-১০টি যুদ্ধজাহাজের একটি দল মোতায়েন করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট এবং সাপোর্ট শিপ। এই দলটি করাচির কাছে আরব সাগরে একটি দুর্ভেদ্য সমুদ্র প্রাচীর তৈরি করেছিল, যা পাকিস্তানি নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীকে তাদের উপকূলেই সীমাবদ্ধ রেখেছিল।

কৌশলগত প্রভাব

MiG-29K বিমান আকাশে নজরদারি এবং আক্রমণ ক্ষমতা প্রদান করেছিল, অন্যদিকে হেলিকপ্টারগুলি সাবমেরিন-বিরোধী যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

Advertisement

indian navy in operation sindoor

২. সাতটি ডেস্ট্রয়ার

ভারতীয় নৌবাহিনী ব্রহ্মস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল, মাঝারি পাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল (MRSAM) এবং বরুণাস্ত্র ভারী টর্পেডো দিয়ে সজ্জিত সাতটি ডেস্ট্রয়ার মোতায়েন করে।

এই ডেস্ট্রয়ারগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠ, আকাশ এবং সাবমেরিন-বিধ্বংসী লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম। ব্রহ্মস মিসাইলের পাল্লা ৪৫০ কিলোমিটার। এটি ২.৮ ম্যাক গতিতে আক্রমণ করতে পারে। এটি করাচি বন্দর এবং অন্যান্য কৌশলগত টার্গেট দ্রুত ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে।

উদাহরণ: উন্নত রাডার এবং অস্ত্র ব্যবস্থার জন্য পরিচিত আইএনএস কলকাতা এবং আইএনএস চেন্নাইয়ের মতো কলকাতা ক্লাস ডেস্ট্রয়ারও জড়িত ছিল।

৩. সাতটি স্টিলথ ফ্রিগেট

সম্প্রতি অন্তর্ভুক্ত আইএনএস তুশিল সহ সাতটি স্টিলথ গাইডেড-মিসাইল ফ্রিগেট মোতায়েন করা হয়েছিল। এই ফ্রিগেটগুলি উন্নত রাডার, মিসাইল সিস্টেম এবং স্টিলথ প্রযুক্তিতে সজ্জিত ছিল, যা আকাশ ও সামুদ্রিক হুমকি মোকাবিলা করতে পারে। এই ফ্রিগেটগুলি পশ্চিম উপকূল বরাবর একটি প্রতিরক্ষামূলক এবং আক্রমণাত্মক সমুদ্র প্রাচীর তৈরি করেছিল, যা পাকিস্তানি নৌবাহিনীকে কোনও পদক্ষেপ নিতে বাধা দেয়।

আইএনএস তুশিল: এটি তালওয়ার ক্লাসের ফ্রিগেট, যা রাশিয়ার সহযোগিতায় ভারতে নির্মিত। ২০২৪ সালে নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

৪. সাবমেরিন

আরব সাগরে আনুমানিক ছয়টি সাবমেরিন গোপনে কাজ চালিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পরমাণু শক্তিচালিত আইএনএস অরিহন্ত এবং স্করপিন ক্লাস সাবমেরিন (যেমন আইএনএস কালভারি)। এই সাবমেরিনগুলি স্টিলথ অপারেশনে বিশেষজ্ঞ। পাকিস্তানি নৌবাহিনীর কার্যকলাপের উপর নজর রাখার পাশাপাশি, তারা সম্ভাব্য আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল।

indian navy in operation sindoor

কৌশলগত তাৎপর্য: আইএনএস অরিহন্তের ক্ষমতা ভারতের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করেছে, যা পারমাণবিক প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫.ফাস্ট অ্যাটাক বোট

সুনির্দিষ্ট আঘাতের জন্য তৈরি বেশ কয়েকটি অ্যাটাক বোট এবং মিসাইল বোটও মোতায়েন করা হয়েছিল। এই ছোট কিন্তু মারাত্মক জাহাজগুলি করাচি বন্দরের মতো লক্ষ্যবস্তুতে তাৎক্ষণিকভাবে আঘাত করতে সক্ষম ছিল। তাদের মোতায়েন ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি আরও বাড়িয়ে তোলে, মোট যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা ৩৬-এ নিয়ে যায়।

পাকিস্তান নৌবাহিনী কী করেছিল

বর্তমানে পাকিস্তানের কাছে ৩০টিরও কম যুদ্ধজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে চারটি চিনা-নির্মিত টাইপ ০৫৪এ/পি ফ্রিগেট, কিছু পুরনো ফ্রিগেট এবং সীমিত সংখ্যক সাবমেরিন রয়েছে। অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানি নৌবাহিনীর জাহাজগুলি মূলত করাচি বন্দরের মধ্যে বা উপকূলের খুব কাছাকাছি ঘোরফেরা করছিল।

নাভারিয়া ওয়ার্নিং: ভারতীয় নৌবাহিনীর ভারী মোতায়েন ও পাকিস্তান সম্ভাব্য আক্রমণের আশঙ্কায় সমুদ্র অঞ্চলে নাভারিয়া (নৌ ​​অঞ্চল) ওয়ার্নিং জারি করে।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া: পাকিস্তান নৌবাহিনী দাবি করেছে যে তাদের সতর্কতা ভারতীয় নৌবাহিনীকে তাদের জলসীমায় প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে। তবে, ভারতীয় নৌবাহিনী স্পষ্ট করেছে যে তাদের লক্ষ্য কেবল একটি প্রতিরোধমূলক অবস্থান বজায় রাখা এবং সক্রিয় আক্রমণ চালানো নয়।

সীমিত ক্ষমতা: পাকিস্তানি নৌবাহিনীর দুর্বল সামুদ্রিক শক্তি এবং পুরনো সরঞ্জাম ভারতীয় নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে অক্ষম করে তুলেছে।

আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক প্রভাব

ভারতীয় নৌবাহিনীর এই বিশাল মোতায়েনের ফলে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক প্রভাব পড়েছে। 

সামুদ্রিক পরিবহনের উপর প্রভাব: করাচির আশপাশে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক জাহাজগুলিকে তাদের রুট পরিবর্তন করতে হয়েছিল। এটি পাকিস্তানের সামুদ্রিক অর্থনীতির উপর চাপ বাড়িয়েছিল। 

বিশ্বব্যাপী মনোযোগ: ভারতের এই বিপুল জাহাজ মোতায়েন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। ভারতের সামুদ্রিক দক্ষতা ভারত মহাসাগর অঞ্চলে তার ক্রমবর্ধমান ভূমিকার উপর জোর দেয়।

পাকিস্তানের উপর চাপ: ভারতীয় নৌবাহিনীর মোতায়েনের ফলে কেবল সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরি হয়েছিল।

indian navy in operation sindoor

অপারেশন সিঁদুরের কৌশলগত গুরুত্ব

অপারেশন সিঁদুর ছিল ভারতীয় নৌবাহিনীর যৌথ প্রস্তুতি এবং সামুদ্রিক আধিপত্যের একটি দুর্দান্ত প্রদর্শন। এই মোতায়েন বিভিন্ন দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। ৩৬টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন পাকিস্তানকে যে কোনও আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রাখে, ফলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। আইএনএস বিক্রান্ত এবং ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের মতো দেশে তৈরি সরঞ্জামের ব্যবহার ভারতের স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে প্রতিফলিত করে। এই মোতায়েন পাকিস্তান এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির (যেমন চিন) কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা ছিল যে ভারত মহাসাগরে তার সামুদ্রিক সীমানা রক্ষা করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ভারত। নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয় ভারতের ত্রিমাত্রিক যুদ্ধ ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। অপারেশন সিঁদুর ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি প্রদর্শন করেছিল, তবে এটি কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছিল। এত বড় মোতায়েন করার জন্য জ্বালানি, গোলাবারুদ এবং সরবরাহ শৃঙ্খল পরিচালনা করা একটি জটিল কাজ ছিল। মোতায়েন আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে, কূটনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি করে। ভবিষ্যতে পাকিস্তান তার সামুদ্রিক ক্ষমতা (বিশেষ করে চিনা সহায়তায়) বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারে। ভবিষ্যতে, ভারতীয় নৌবাহিনীকে তার সাবমেরিন বহর আরও শক্তিশালী করতে হবে, দেশেই যুদ্ধজাহাজের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে এবং ভারত মহাসাগরে নজরদারি ব্যবস্থা আপগ্রেড করতে হবে।

Advertisement

 

POST A COMMENT
Advertisement